বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দায় কি এড়াতে পারে বিসিবি?

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৫ এএম

সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ফলাফল সবারই জানা। অগোছালো ক্রিকেট খেলে অসহায় আত্মসমর্পন করে দেশে ফিরেছে মাহমুদউল্লাহর দল। বাজেভাবে হেরে আসার পর চটেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। দুই টি-টোয়েন্টিতে দলের টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া, ব্যাটিং অর্ডারে উলটপালট আর খেলার ধরন নিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি। বিসিবি প্রধান বলছেন বাংলাদেশ দলকে তার অচেনা লেগেছে।

দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল মন্থর গতির। গতকাল নিজের বেক্সিমকো কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে দলের এমন দশায় হতাশা, বিস্ময় ঝরেছে বোর্ড প্রধানের কণ্ঠে, ‘অনেকদিন পর বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হয়েছে এটা বাংলাদেশের খেলা না। আমার মনে হয়নি বাংলাদেশ খেলছিল। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে সাধারণত আমরা যেভাবে খেলি এটা সম্প‚র্ণ উলটা। এরকম পরিস্থিতি দেখিনি যে বিনা উইকেটে ৯৬ থেকেও (আসলে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিনা উইকেটে ৭১) আমরা রান করতে পারছি না। তারপরেও ১২-১৪ ওভার পরও আমরা এত রক্ষণাত্মক অ্যাপ্রোচে খেলছি। এটা সম্প‚র্ণ নতুন অভিজ্ঞতা।’

সিরিজ হারের পর দুই সিনিয়র ক্রিকেটার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবালকে ডেকেও কারণ জানতে বোর্ড প্রধান। নাজমুল তাদের জিজ্ঞেস করেন অচেনা কন্ডিশনে কেন বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং নিল, ‘প্রথম ম্যাচের পরেই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্যাটিং নিলাম কেন। আমরা এত বছর পর পাকিস্তানে এলাম। একটা অপরিচিত কন্ডিশনে ব্যাটিং নিলাম কেন। আমরা তাড়া করতে ভালোই জানি। একটা লক্ষ্য থাকে (রান তাড়ায়)। এখানে তো লক্ষ্য জানি না। ওরা বলছিল ব্যাটিং পিচ সেজন্য। কিন্তু দেখে মনে হয়নি ভাল পিচ। খুব ভাল পিচই যদি হত সেটার সঙ্গে খেলার ধরন মিলেনি।’

দলনেতা হিসেবে এর দায় সর্বপ্রথম গিয়ে বর্তায় অধিনায়কের উপর। কিন্তু তাতেই কি সব চুকে গেল? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), জাতীয় দলের কোচিং স্টাফরা কি এর দায় এড়াতে পারেন? বিসিবির চরম অব্যবস্থাপনার চিত্রই যেন পাকিস্তান সিরিজে টাইগারদের মার্কশীটের হুবহু ফটোকপি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেছনে কম অর্থ ব্যয় করছেনা বিসিবি। তবে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে কর্মসম্পাদন কৌশলে আছে যথেষ্ঠ ঘাটতি। নেই মানসম্মত পিচ, নেই ক্রিকেটারদের মানসিক বিকাশের সুযোগ, দলে টেকসই হওয়াই হয়ে উঠেছে ক্রিকেটারদের ট্রেন্ড। তেমন সমৃদ্ধ নয় নীতি নির্ধারিনী সিদ্ধান্তও।

পাকিস্তান সফরের পরপরই বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) শুরু করতে যাচ্ছে বিসিবি। আগামীকাল থেকেই প্রথম রাউন্ডের খেলা শুরু হবে। কিন্তু ঘরোয়া এই ক্রিকেট খেলে কতটুকু এগিয়ে যাওয়ার সোপান খুঁজে পায় ক্রিকেটাররা। সেই তদারকি করার যেন কেউই নেই। সারাবছর ধরেই যেসব ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলছে, তার কি আদৌ কোন প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে নিজেদের উন্নতির ক্ষেত্রে? সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ধুমধাম করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) তেমন কোন চিত্র ফুটে ওঠেনি। দেশের মাঠে খেলোয়াড়রা ভালো করছেন ঠিকই, কিন্তু দেশের বাইরে গেলেই ব্যর্থ।

এর অন্যতম প্রধান কারন পিচ। বিদেশের মাটিতে সাধারনত যেই ধরনের পিচে খেলা হয় বাংলাদেশের পিচের অবস্থান ঠিক তার ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে। কাজেই এতে উপকৃত হতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। তাইতো ঘরের মাঠের সাফল্য মুহুর্তেই ¤øান হয়ে যায় বিদেশের মাটিতে। ইতিপূর্বে এনিয়ে উদ্যেগ নেয়া হলেও তা ছিল কেবলমাত্র কথায়ই সীমাবদ্ধ। কাজের কাজটা কিছুই হয়নি। অস্ট্রেলিয়া দল বিদেশ সফরের আগে সেখানকার পিচের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পিচ তৈরি করে সেখা অনুশীলন করে। খেলে থাকে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ। অন্যান্য দেশগুলোও হাঁটছে একই পথে। সেখানে বাংলাদেশ এখনও রয়ে গেছে সেই পুরোনো আমলেই।

প্রায়ই সামান্য চাপে পড়লে সেখান থেকে উতরাতে পারেনা টাইগাররা। মানসিকভাবে তারা ভেঙে পরে। এজন্য শুধুমাত্র ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিত খেললেই হয়না। মানসিকভাবে একটি ক্রিকেটার কিভাবে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকতে পারে, সেজন্য কাউন্সিলিংও দরকার। দলে মনোবিদের প্রয়োজনীয়তা যেখানে অনুধাবন করছে বিভিন্ন বোর্ড, বাংলাদেশ সেখানে কোনে বিশ্বকাপের আগে বিশেষজ্ঞ এনে দু-একটি ক্লাস নিয়েই খ্যান্ত!
কয়েকদিন আগে জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কথায় স্পষ্ট হয়েছিল খেলোয়াড়দের অবস্থা। দলে কোনমতে টিকে থাকাটাই হয়ে উঠেছে প্রধান লক্ষ্য। এজন্য দোষারোপ করা যায় বিসিবিকে। একজন ক্রিকেটার এক-দুই ম্যাচে খারাপ খেললেই তাকে আর কোন সুযোগ দেয়া হয়না। এর বিপরীতে গিয়ে কাজ করার জন্য বিসিবিকে প্রস্তাব করার কথাও শোনা গিয়েছিল কোচের কন্ঠে। এই মানসিকতা থাকলে সবাই দলের প্রয়োজনীয়তাকে ছাপিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের দিকেই ঝুঁকে পরবে, স্বাভাবিক। কিন্তু দলের প্রয়োজনে ব্যাটিং-বোলিং না করলে দল জিতবে কিভাবে? ক্রিকেট দলগত খেলা। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় অর্জন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে কাজ করে বিসিবি। কিন্তু সেই বিসিবিই যখন পাকিস্তান সফরে যাওয়া চুড়ান্ত করেছে, তখন দলের চুক্তিবদ্ধ কোচ কিংবা খেলোয়াড় কিভাবে সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করতে পারে? সেই সুযোগ বিসিবি কিভাবে তৈরি করে দিতে পারে? এরদ্বারা সংস্থাটির নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তের দুর্বল রূপটি সামনে ভেসে আসে। কোচিং স্টাফদের বেশিরভাগই পাকিস্তান সফরে ছিলেন অনুপস্থিত। খেলোয়াড়দের মধ্যেও যাননি মুশফিকুর রহিম।
সমস্যার সমাধানে বিসিবিকে অবশ্যই নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর পদক্ষেপ। তাতে জাতীয় দল নিয়ে সমর্থকদের উচ্চাকাঙ্খা পূরণের সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে একদিন হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। যেমনটি দেখা গেছে ফুটবলের ক্ষেত্রে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন