শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

মুছে যাক মেছতা

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

চোখ, কান, জিহবা, নাক এবং ত্বক এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে আমাদের শরীর গঠিত। এগুলোর মধ্যে ত্বক সবচেয়ে বড় এবং একটি অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গ । কারণ ত্বক আমাদের বাইরের বিরুপ আবহাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়া কোন স্পর্শজনিত অনুভূতি পাওয়া যায় আমাদের এই ত্বকের মাধ্যমে। কথায় আছে প্রথমে দর্শন পরে গুণ। মূলত সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠিও এই ত্বক। ত্বকের উপরে কালো দাগ পড়লে কারোরই ভালো লাগে না। আর ত্বকের উপরে কালো দাগকেই সাধারনত মেছতা বলে। ত্বকের যে সমস্যাগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, সেগুলোর মধ্যে মেছতা অন্যতম। মেছতা যে কারোরই হতে পারে। তবে সাধারণত নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মূলত ত্বকে মেছতা হলে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। আসলে এই মেছতা রোগটা কী ? কিংবা কেন হয় ? আর মেছতা প্রতিরোধ করতে কী কী করতে হয়, তা জানা প্রয়োজন।
মেছতা বংশগতও হতে পারে। ত্বকের নিচে মেলানিন জমলে তা মেছতার জন্ম দিতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় বিক্ষিপ্ত তিলের মতো দেখালেও এটি তিল নয়। গাল, নাক, কপাল, পেট, কাঁধ, হাত এরকম যেকোনো খোলা স্থানে এটি দেখা যায়। পৃথক পৃথক ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এর রং একেক রকমের হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে লালচে, কখনো বাদামী, কখনো আবার কালো এবং হলুদ রঙের মেছতাও দেখা যায়। গ্রীষ্মে দাগগুলি গাঢ় ভাবে দেখা দেয়, আবার শীতে দাগগুলি হালকা হয়ে যায়।
সূর্যরশ্মির প্রভাবে ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপন্ন হয়। এতে ত্বকের কিছু কিছু জায়গায় গাঢ় কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয় যা মেছতা বা ইংরেজিতে মেলাজমা নামে পরিচিত। ত্বকের যে সব জায়গায় সূর্যরশ্মি বেশি পড়ে সে সব জায়গা যেমন- উপরের গাল, নাক, ঠোঁট এবং কপালে মেছতা বেশি দেখা যায়। তবে মাঝে মধ্যে ঘাড়ের পাশে, কাঁধে ও উপরের বাহুতেও দেখা যায়। সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে এটি হয়। গায়ের রঙ যাদের ফর্সা তাদেরই মেছতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে বগলে একধরনের মেছতা হয়। সেটি বংশগত এক রোগের কারণে হয়। যার নাম নিউরোফাইব্রোমাটোসিস।
সাধারণ মেছতা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে। শরীরের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু কিছু মেছতা আছে যেগুলোকে স্কিন ক্যান্সার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। যেমন লেনটিগো ম্যালিগনা, মেলানোসা ও ব্যাসাল সেল কারসিনোমা। তবে প্রাথমিক স্টেজে এগুলো ধরা পড়ালে নিরাময় করা সম্ভব। রোদে বের হলেই সবার মেছতা হবে এমন কোনো কথা নেই। এখানে বংশগত প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গবেষণায় দেখা গেছে জেনেটিক কারণে ও সূর্যরশ্মির কম্বিনেশনে মেছতা তৈরি হয়। কিছু কিছু মানুষের দেহে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি পড়ার সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে পিগমেন্ট সেল বা মেলানিন বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় ত্বকের বাইরের স্তর হয়ে যায় আগের চেয়ে পুরু। যাদের গায়ের রঙ কালো তাদের সেভাবে মেছতা দেখা যায় না। কারণ কালো বর্ণের ত্বকে সূর্যরশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না।
শ্রেণীভেধে মেছতাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়
১) সাধারণ মেছতা ২) রোদেপোড়া মেছতা
সাধারণ মেছতা মূলত ফর্সা ত্বকে বেশি দেখা যায়। এইধরনের মেছতা তামাটে কিংবা লালচে রঙের হয় । যাদের চুল লালচে, চোখের রং হালকা তাদের এই প্রকার মেছতা বেশি দেখা যায়। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই রোগ ছড়ানোর আগেই প্রতিকার সম্ভব।
রোদেপোড়া মেছতা আবার এই ধরনের মেছতা থেকে একেবারে আলাদা। এটি অপেক্ষাকৃত গাঢ়, এবং শীতকালেও এর রং হালকা হয় না।
মেছতা বয়ঃসন্ধি কালে বেশি দেখা যায়। দুই বছরের বেশি কোনো কোনো বাচ্চাদের মুখেও মেছতার প্রকোপ লক্ষণীয়। আসলে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির একটি লক্ষণ হল মেছতা।
প্রতিরোধের উপায় : বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে এস.পি.এফের মাত্রা যেন আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক হয়য়। সেটা ১৫-৩০ যে কোনোটা হতে পারে।
বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ, ওড়না বা আঁচল মাথায় জড়িয়ে নিন। সম্ভব হলে চওড়া ঘেরের টুপি পরুন। ঘাড়-পিঠ ঢাকা, ফুলহাতা জামা পরুন। বিøচিং ফেসিয়াল শতভাগ এড়িয়ে চলুন। এমন ফেসিয়াল ট্রিটমেন্ট নিন যার মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ অ্যাসিড, ঢাজোরাক ও ডিফেরিন জাতীয় উপাদানগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এছাড়া মেসতা দূরীকরনে লেজার একটি বিশেষ পদ্ধতি। যা খুবই কার্যকর। মেছতা হলে বেশি চিন্তা না করে অ্যায়েসথেটিকস ও ডার্মাটোলজি বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিন।

ডা. মাসুদা খাতুন
সহযোগী অধ্যাপক,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
চর্ম যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ,
ইবনে সিনা ডি ল্যাব এন্ড কনসালস্টেশন সেন্টার
সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি. ঢাকা ।
সেল-০১৬২৫৮৩১০০০।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন