বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক কোটি ৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান

বিডিএফ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর ৫ বছরের ভিশন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৪ এএম

শেষ হলো দুই দিনের বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলন। কয়েকবছর আগেও বিডিএফ সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি চাইত বাংলাদেশ। এবারের সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া শর্ত নিয়ে বেশি আলোচনা করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বেশি শর্ত না দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মেলনের শেষ দিনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অন্যান্য মন্ত্রীরাও ঘুরেফিরে উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত নিয়ে সমালোচনা করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটি পূরণ না করার কঠোর সমালোচনা করেন মন্ত্রীরা। চতুর্থ বিডিএফ সম্মেলন শেষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হারমনি হলে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সাপ্পো ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। এবারের বিডিএফ সম্মেলন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে সামনে রেখে এবারের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের মূল স্লোগান ‘ইফেক্টিভ পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’।

অর্থমন্ত্রী দেশের অগ্রগতি সম্পর্কে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে অর্থায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাক্কলন অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার ২০২১ সালে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ২০২৫ সালে ১২ দশমিক ১ শতাংশ হবে। অতি দারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হতে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসবে। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপি’র তুলনায় ২০২০ সালের ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ হতে বেড়ে ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে। এর মধ্যে সরকারি খাতের বিনিয়োগ ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ শতাংশ এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৫ থেকে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর সময়কালে দেশের ভিতরে এবং বাহিরে মোট এক কোটি ৫ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে। পরিকল্পনার প্রাক্কলন অনুযায়ী জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ হবে। আগামী পাঁচ বছরে মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ব্যবসায় বান্ধব, ম্যানুফ্যাকচারিং-বান্ধব ও রপ্তানি-বান্ধব ট্যাক্স-রেজিম সৃষ্টি করা হবে। সরকারি বিনিয়োগে দেশীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্যমোট রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দুই দিনের বিডিএফ সম্মেলনে জিডিপির অনুপাতে আমাদের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম-এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। জিডিপির অনুপাতে আমাদের রাজস্ব আদায়ের হার কমের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে রাজস্ব আদায়ের হার যতটা কম বলা হয়, ততটা নয়। শিল্প উদ্যোক্তাদের সরকার অনেক প্রণোদনা দিতে হয়। কর ছাড় দিতে হয়। বিশ্বের কোথাও আমাদের মতো এত কর ছাড়, প্রণোদনা নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন খাতে আমরা কত টাকা কর বা শুল্ক ছাড় দেই, এবং প্রণোদনা দেই তার একটি হিসাব আগামী অর্থবছর থেকে রাখা শুরু করব। যেটা এখন নেই। এগুলো পরোক্ষভাবে রাজস্ব আদায়ই। এসব কর ও শুল্ক ছাড় যদি আমরা না করতাম তা আমাদের রাজস্ব ঝুঁড়িতেই জমা হতো। তবে আগামী বছর যদি আমরা এসব হিসাব রাখতে পারি তাহলে অন্তত আমাদের রাজস্ব আদায়ের হার কম এটা বলা যাবে না। এখন যেমন এশিয়ার ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার সর্বনিম্ন বলা হয়, তখন আর বলার সুযোগ থাকবে না।

আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পর যেসব সুবিধা হারাবে তার কতটুকু প্রস্তুতি সরকারের আছে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা কি উপরে উঠব না? আমরা কি সারাজীবন স্বল্পোন্নত দেশেই পড়ে থাকব? কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আগামী জুলাই থেকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। বিষয়টি আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের জানিয়েছি। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের অংশীদারিত্ব চাওয়া হয়েছে সম্মেলনে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম এবার এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে এগিয়ে চলেছে। এখন ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একই সঙ্গে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে সরকার। একই সঙ্গে সম্মেলনে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের পদক্ষেপসমূহ বা বিভিন্ন আর্থসামাজিক অগ্রাধিকার খাতে সরকারের মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা প্রেসক্রিপশন চাই না; তাদের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা চাই। উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের শুধু ব্যবস্থাপত্র দিতে চায়। আমাদের এখন ব্যবস্থাপত্রের দরকার নেই। দরকার সহযোগিতা। তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামোতে সমস্যা আছে। বন্দর, সড়ক, জ্বালানি ও মানব সম্পদ সূচকে আমরা বেশ পিছিয়ে আছে। এটা মানতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সৃজণশীল ও উদ্ভাবনী ধারণা পেতে চাই। অবশ্যই কোনো প্রেসক্রিপশন নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতিবছর গরীব দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডলার করে অর্থ দেওয়ার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি পয়সাও দেখিনি। অথচ তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল টাকা দেবে। টাকা না দিলেও তারা শুধু উপদেশ দেয়। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না বলে অভিযোগ করেন আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ৩০ থেকে ৩৫টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কুটনীতিকরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বেশ নাক গলাচ্ছে। এটা সমীচিন নয়। তাদের কাজ কি সেটা তারা ভালো করেই জানে। কিন্তু তারা কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করছে। ভবিষ্যতে যদি এমন করতে থাকে, তাহলে আমরা তাদেরকে নিজ দেশে চলে যেতে বলব।

মিয়া সাপ্পো বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অবশ্যই প্রশংসনীয়। গড় আয়ু বেড়েছে। আর্থ-সামাজিক খাতে বিনিয়োগ বাড়ার কারণেই এসব অগ্রগতি হয়েছে।

ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, এবারের বিডিএফ সম্মেলনে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের বিডিএফ সম্মেলনে ৩৫-৪০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও সদেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে মোট আটটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিডিএফের উৎপত্তি ১৯৭০ এর দশকে যখন এর নাম ছিল প্যারিস কনসোর্টিয়াম। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ এইড গ্রæপ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ) হিসাবে যাত্রা শুাং করে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। এবারের সম্মেলনটি হল চতুর্থ সম্মেলন।

এদিকে বিডিএফ সম্মেলন ২০২০ উপলক্ষ্যে গতকাল জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন সেন অর্থমন্ত্রীর শেরে বাংলানগর কার্যলয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা পারস্পারিক বিভিন্ন বিষয় ও সহযোগীতা সম্পর্কে আলোচনা করেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Sajib Hasan ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
মানলাম ।কিন্তু ৫বছর পরে আবার এককোটি বেকার তৈরিও হবে ।
Total Reply(0)
Shakil Ahmed ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
এগুলো কাজ কলমেই বাস্তবে কিছুর মিল নেই
Total Reply(0)
Md Abu Talha Razu ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
কথাটা শুনে ভাল লাগলো।
Total Reply(0)
Nure Alam Siddique ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
৫ বছরে আবার কয় কোটি বেকার হবে?
Total Reply(0)
Md Nahid ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
Thanks a lot
Total Reply(0)
salman ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৩০ এএম says : 0
Sotti ? Tai naki KAMAL??
Total Reply(0)
** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:৩১ এএম says : 0
মাননীয় মন্ত্রীমহাদয়,আমার একটি ছেলে সংগিত শিখ্খক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। শুক্র/শনিবার ক্লাশ করে যতদুর শুনেছি দুই হাজার টাকা ভাতা পাবে।এর ভবিস্বাত কি ??জানতে চাই। অদুর ভবিস্বাতে এদের স্থায়ী ভাবে শিখ্খক হিসেবে নিয়োগ পাবে??
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন