বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সাংঘর্ষিক পাকিস্তান নীতির অবসান ঘটাতে হবে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে পারি, যাতে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে,’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৬ সালে পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে কথাগুলো বলেছিলেন এবং তিনি ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত মোশাররফের স্বৈরতান্ত্রিক সামরিক সরকারকে ৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উন্নততর রাজনৈতিক শক্তির প্রতি নীরবে সমর্থন প্রদান করা ও প্রকাশ্যে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সমর্থন করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ওয়াশিংটনের। এ ধরনের দ্বিমুখী বক্তব্য কেবল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের জবাবদিহিতার বাইরে থাকা অংশ ও দুর্নীতিবাদদেরই সক্ষম করে তোলে। এর ফলে গণতন্ত্র বিকাশ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের আঞ্চলিক লক্ষ্য অর্জনেও যুক্তরাষ্ট্রকে বাধা প্রদান করে।

এই দ্বৈতনীতি পাকিস্তানের স্বাধীনতার একেবারে প্রথম দিক থেকেই ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কের মধ্যে গভীরভাবে নিহিত ছিল। পাকিস্তানে মার্কিন সহায়তা বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল মোহাম্মদ আইয়ুব খান, মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও পারভেজ মোশাররফের আমলে। এই তিন সামরিক শাসকই গণতান্ত্রিকপ্রক্রিয়াকে স্থগিত করেছিলেন, পাকিস্তানকে সামরিক শাসনের আওতায় এনেছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনকালে (১৯৭৭-১৯৮৮) ধর্মীয় চরমপন্থীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করা ও আফগান হেরোইন বাণিজ্যের প্রতি সরাসরি সমর্থন দিতে দেখা যায়। আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযানের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের বেসামরিক গণতান্ত্রিক শাসনকালে মার্কিন সহায়তা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি দেখা যায়।

তবে এর মাধ্যমে এটা বলা হচ্ছে না যে মার্কিন সহায়তা কখনোই পাকিস্তানের বেসামরিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার অনুক‚লে ছিল না। তবে বলা যায়, এ ধরনের সমর্থন ছিল ফাঁপা। আর চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন হলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তিকে ব্যবহার করা হতো পাকিস্তানের বিষয়াদিতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করার জন্য। কথা ও কাজের মধ্য এই বিরাট পার্থক্যই পাকিস্তানকে সামরিক-বেসামরিক হাইব্রিড রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠতে সহায়তা করে। এমনকি যখন সামরিক শাসন থাকে না, তখনও সামরিক বাহিনীর প্রভাব দেখা যায়। বেসামরিক শাসকদের পক্ষে সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের প্রভাবকে সংযত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর সুস্পষ্ট উদাহরণ হলো পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদÐাদেশ রদ করা এবং সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো।

এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প‚র্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। পাকিস্তানের প্রতি বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে এবং ওই নীতিতে তাকে অটল থাকতে হবে। পাকিস্তানে যদি সত্যিই বহুত্ববাদ, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কামনা করে যুক্তরাষ্ট্র, তবে তার কাজে ও নীতিতে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আর তা করতে ব্যর্থ হওয়া মানে দুর্নীতি, অক্ষমতা ও মানবাধিকারের অপব্যবহার অব্যাহত থাকা। এতে করে ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে, আফগানিস্তান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি হবে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না। দ্বিমুখী নীতির কারণেই ইরাক ও শ্রীলঙ্কায় মার্কিন নীতি বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি, ওয়াশিংটনের অবাধ ও উন্মক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বিকশিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই গণতন্ত্র বিকশিত করতে চায়, তবে সে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে বেসামরিক সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

পাকিস্তানের প্রতি মার্কিননীতি পর্যালোচনার সাথে যৌক্তিকভাবেই পাকিস্তানের কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের পাশাপাশি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি নয়া দিল্লিকে চাপ প্রয়োগ করে ইসলামাবাদ ও কাশ্মিরি নেতাদের সাথে আলোচনায় বসার জন্য, সেটা হতে পারে এই পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত, ইসলামাবাদের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক, ধর্মীয়, জাতিগত ও জেন্ডার সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের ব্যাপারে একমত হতে হবে। তৃতীয়ত, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অবশ্যই পাকিস্তানের জনগণের আওতায় থাকতে হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। চতুর্থত, উন্নয়ন সহায়তা হতে হবে টেকসই ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যপরিচর্যা, অবকাঠামোর মতো খাতে হতে হবে উন্নয়ন সহায়তা। দুর্নীতি বন্ধেও গ্রহণ করতে হবে কার্যকর পন্থা।

তবে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা যে সহজ নয়, তা সবাই জানে। গত ৭০ বছরে কাজটি করা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই যদি এতে আগ্রহী হয়, তবে তখনই সে পাকিস্তানের সাথে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। অন্যথায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সবসময়ই প্রতারণা আর ভ্রান্ত বিশ্বাসে জর্জরিত থাকবে। আর তা পাকিস্তান বা যুক্তরাষ্ট্র কারো জন্যই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হবে না। সূত্র : আটলান্টিক কাউন্সিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন