শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জুমাতুল বিদায় স্বতঃস্ফূর্ত ও ধর্মীয় আবেগভরা মুসল্লিদের ছিল বিপুল উপস্থিতি

প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ১ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : গতকাল ছিল চলতি রমজান মাসের শেষ জুমার দিন, যাকে রমজানের বিদায়ী জুমা তথা জুমাতুল বিদা বলা হয়। সারাদেশের মুসল্লিরা যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে জড়ো হয়েছিলেন গতকাল দেশের সব জামে মসজিদে। রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের প্রধান প্রধান মসজিদে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। গ্রামে-গঞ্জেও ছিল নামাজিদের অভূতপূর্ব উদ্দীপনা। সকল পর্যায়ের কোটি মানুষ ছুটে আসেন রমজানের মহাসম্মানিত শেষ জুমায় শরিক হতে। রাজধানীর মসজিদগুলোতে লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও ধর্মীয় আবেগভরা উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আল্লাহর রহমত বরকত নাজাত প্রত্যাশী নানা বয়সী মানুষ যেন ¯্রােতের গতিতে ছুটে এসেছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, মহাখালী মসজিদে গাউসুল আজম, গুলশান আজাদ মসজিদ, ধানমন্ডি সেন্ট্রাল মসজিদ, সোবহানবাগ মসজিদ, এলিফ্যান্ট রোড মসজিদ, বনানী বাজার মসজিদ, মহাখালী বায়তুল মাহফুজ, মিরপুর কাজীপাড়া জামে মসজিদ, শেওড়াপাড়া বড় মসজিদ, ১১নং কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, মতিঝিল ওয়াপদা মসজিদ, কাওরান বাজার আম্বারশাহ ও হাইকোর্ট মাজার মসজিদসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জামে মসিজদগুলোয়।
গতকাল জুমার আজানের আগে থেকেই মুসুল্লিগণ মসজিদে সমবেত হতে শুরু করেন। জুমাতুল বিদার জামাতে প্রায় সকল মসজিদই ছিল পূর্ণ। ভবনের ছাদ-বারান্দা ভরে নামাজিদের কাতার চলে যায় সড়কে। নামাজ শেষে মসজিদে মসজিদে হয় দীর্ঘ মুনাজাত। খতিবগণের বিশেষ মুনাজাতের সময় ছিল আমিন আমিন ধ্বনি আর গুনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহর কাছে কান্না। ভাবগম্ভীর ইবাদত ও মুনাজাত গোটা রাজধানীর পরিবেশকে মোহিত করে তুলেছিল। পবিত্র আবহ বিরাজ করছিল মসজিদ নগরী ঢাকায়। প্রাণের উচ্ছ্বাসে আর হৃদয়ের টানে মসজিদে ছুটে আসা মানুষ অভিবাসী নির্যাতিত মুসলিম ভাইবোন ও শিশুদের জন্য প্রার্থনা করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও জাতির সর্বাঙ্গীণ মুক্তি-সাফল্যের পথে সকল বাধা দূর করা, দুর্নীতি-লুটপাট, অন্যায়-অত্যাচার, অযোগ্যতা-দায়িত্বহীনতায় পূর্ণ নেতৃবৃন্দের হেদায়েত জন্যও আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। মুনাজাতে দেশের ঘৃণ্য রাজনীতির ব্যর্থতার চক্র থেকে উত্তরণ, অভিশপ্ত দুর্বৃত্তায়নের করাল গ্রাস থেকে পরিত্রাণ লাভ এবং বিশ্বময় উন্নতির যুগে, বাংলাদেশের অকর্মা, দুর্বৃত্ত ও লুটেরা চক্রের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ বের হওয়ার জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণা কামনা করা হয়।
চট্টগ্রামে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মাহে রমজানের শেষ জুমা জুমাতুল বিদা উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামের মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। মহানগরী ও জেলার মসজিদগুলোতেও ছিল ব্যাপক উপস্থিতি। মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে রাস্তায় জুমার নামাজ আদায় করেন। এসময় বিভিন্ন মসজিদ এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। সেখানে মহান আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া কামনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
জুমাতুল বিদায় নগরীর আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে হাজারো মুসল্লি অংশ নেন হন। মসজিদের আঙিনা, ছাদ ছাড়িয়ে মুসল্লিদের উপস্থিতি এসে পড়ে সামনের সড়কের অনেকদূর পর্যন্ত। নামাজ শুরুর আগে প্রচ- খরতাপ মুসল্লিদের ভোগালেও নামাজ শুরু হতে হতেই হালকা বৃষ্টি সবার মাঝে যেনো প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে আসে। নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজদি, লালদীঘি জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, চট্টেশ্বরাই গায়েবি মসজিদ, সিজিএস কলোনী জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, অলি খাঁ জামে মসজিদ, চন্দপুরা শাহী জামে মসজিদ, বহদ্দারহাট জামে মসজিদসহ নগরীর প্রায় সব মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। নামাজের আগে জুমাতুল বিদা ও রমজানের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ খুতবা দেন ইমাম ও খতিবেরা।
খুলনাতে জুমাতুল বিদা পালিত
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনাতেও পালিত হল জুমাতুল বিদা বা রমজানের শেষ জুমা। রোজাদার মুসল্লীগণ জুমা আদায়ের জন্য মসজিদে একত্রিত হন। ঈমামগণ খুৎবা দানকালে রমজান মাসের শেষ জুমার, শাবে কদরের ও ফিতরার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। খুলনার টাউন জামে মসজিদে জুমাতুল বিদার খুৎবা দেন মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। খুলনার প্রত্যেকটি মসজিদে নামাজ শেষে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করা হয়। এসময় মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। কেউ কেউ শেষ রাতে কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারাত করে মৃত আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
বগুড়ায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভীড়
বগুড়া অফিস জানান, পবিত্র রমজান মাসের শেষ জুমাহ জুমাতুল বিদা’র জামায়াতগুলোতে বগুড়ার মসজিদগুলোতে ছিল মুসল্লিদের উপচে পড়া ভীড়।
বগুড়ার মহাস্থান গড় জামে মসজিদ, বগুড়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, বগুড়া সেন্ট্রাল জামে মসজিদসহ ছোট বড় সব মসজিদেই দেখা যায় হাজার হাজার মুসল্লি মসজিদের ভিতরে যায়গা না পেয়ে আশেপাশের রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়ে।
হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে লাখো মানুষের ঢল
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুমা’তুল বিদায় লাখো মানুষের ঢল নামে। সকাল থেমে থেমে বৃষ্টি ও বিশাল জামায়াতকে রুখতে পারেনি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে সকাল ১০টার পর থেকে হাজীগঞ্জের প্রত্যান্ত অঞ্চল ও জেলা শহর থেকে মুসল্লিরা এসে নামাজ পড়ার জন্য জায়গা নেয়। মসজিদ, মসজিদের ছাদ, কওমী মাদরাসা ১-৬ তালা, হাজীগঞ্জ প্লাজা, হাজীগঞ্জ টাওয়ার, হাজীগঞ্জ পৌর সুপার মার্কেটের ২য় ও তৃতীয় তলা, বিভিন্ন মার্কেটের ওলিগলি পূর্ণ হয়ে যখন নামাজ শুরু হয় তখন চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে পড়লে নামাজের সময় সড়কটি বন্ধ থাকে। জুমাতুল বিদার নামাজ সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসনের আগে থেকে প্রস্তুত থেকে সেবা প্রদান করে। এ ছাড়া ২০টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কাজ করে। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মা ও বিশ্ব শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি আবদুর রউফ।
গফরগাঁওয়ে জমাতুলবিদা পালিত
গফরগাঁও উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার পবিত্র জমাতুল বিদা গফরগাঁও উপজেলার পৌরসভাসহ বিভিন্ন মসজিদে পালিত হয়েছে। প্রতিটি মসজিদে মুসুল্লিদের উপচে পড়া ভীর ছিল। কোথাও জায়গা নেই। সকলস্তরে মুসুল্লিরা জুমা নামাজে অংশ নেয়। এ উপলক্ষে প্রতিটি মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
রাজশাহীতে জুমাতুল বিদা পালিত
রাজশাহী ব্যুরো জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শুক্রবার রাজশাহীতে পালিত হয়েছে পবিত্র জুমাতুল বিদা। জুমার আজানের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় শাহ্ মখদুম (র.) দরগা মসজিদ, সাহেব বাজার বড় মসজিদ ও হেতেম খাঁ মসজিদ, সোনাদিঘী মসজিদসহ নগরীর সব মসজিদে নামাজে মুসল্লিদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। জুমাতুল বিদাকে কেন্দ্র করে নামাজ শুরুর আগেই সব মসজিদ কানায় কানায় ভরে যায়। ঠাঁই না হওয়ায় অনেকেই বাইরে নামাজ আদায় করেন। জুমাতুল বিদার খুতবায় উচ্চারিত হয় ‘আলবিদা, আলবিদা, ইয়া শাহর রামাদান। অর্থাৎ বিদায়, বিদায় হে মাহে রমজান। জুমার দুই রাকাত নামাজ শেষে রাজশাহীসহ গোটা দেশ ও জাতির সুখ সমৃদ্ধি, কল্যাণ ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি এবং কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ আদায়ের পর মহানগরের টিকাপাড়া, কাদিরগঞ্জ, হেতেম খাঁ, গৌরহাঙ্গাসহ বিভিন্ন কবরস্থানে বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে যান। এ মাসের শেষ জুমার দিন পালিত হয় আল কুদস দিবস।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, পবিত্র জুমাতুল বিদা নামাজে গতকাল বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে।
জুমাতুল বিদা উপলক্ষে গতকাল দক্ষিণাঞ্চলে সর্ববৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার জাকেরান ও আশেকানবৃন্দ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল জামে মসজিদে জুমাতুল বিদার নামাজ আদায় করেন। পরে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব খাজাবাবা ফরিদপুরী নকসবন্দী মুজাদেদ্দী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতের নিয়তে ফাতেহা শরিফ পাঠান্তে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফ মসজিদ, পিরোজপুরের ছারছীনা দরবার শরিফ মসজিদ এবং ঝালকাঠীর নেছারাবাদ দরবার শরিফ মসজিদ ও মোকামিয়া দরবার শরিফ মসজিদ ছাড়াও জামে বরিশাল মহানগরীর এবাদুল্লাহ মসজিদ, জামে কসাই মসজিদ, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ নগরীর বিভিন্ন মসজিদে জুমাতুল বিদার বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন