শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকার সিটি নির্বাচন : বিবিসি বাংলার চোখে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪২ পিএম

গতকাল শনিবার ঢাকার দুই সিটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনাবহুল এ ভোটে জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল, ইভিএম বিড়ম্বনা নিয়ে নানা অভিযোগ ছিলো গতকাল দিনভরই। সরকার প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড় ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই। বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকেই তাদের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। ভোটার উপস্থিতির হতাশাজনক পরিস্থিতির খবর ওঠে আসে গণমাধ্যমে। এর মধ্যেই কেউ কেউ ভোট দিতে গেলেও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বের করে দেয়া হয়। বিবিসি বাংলা নির্বাচন নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি, ইভিএম ব্যবহার এবং পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির সংবাদদাতারা।


বিবিসি বলছে, এবারের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রেই রয়েছে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি। অনেক কেন্দ্রেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ভোটার দেখা গেছে অল্প কয়েকজন। চোখে পড়েনি ভোটারদের লাইন।

ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, তেজগাঁও: বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা কাদির কল্লোল সকাল থেকেই ঢাকার ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, লালবাগ এবং তেজগাঁও এলাকার ৮টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন।

ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনের এসব ভোট কেন্দ্রে সকালে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটারের অভাবে খাঁ খাঁ করছিল। কোনও কোনও কেন্দ্রে লম্বা সময় অপেক্ষা করে দুই তিনজন করে ভোটার চোখ পড়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের চাইতে কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি এমনটাই মনে হয়েছে। কোথাও ভোটারদের কোন লাইন দেখা যায়নি।

ঢাকার জিগাতলা এলাকায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে নারী ভোটারের কেন্দ্রে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে ১ হাজার ১শো’র বেশি ভোট থাকলেও সকালে প্রথম এক ঘণ্টায় ১২টির মতো ভোট পড়েছে। কোনও কোনও বুথে সকাল ৯টা পর্যন্ত একটিও ভোট পড়েনি।

তেজগাঁও এলাকায় ইন্সটিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৪ শো’র বেশি ভোটার। কিন্তু সেই কেন্দ্রে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত প্রথম দেড় ঘণ্টায় ৫০টি ভোট পড়ে।

মিরপুর ও মোহাম্মদপুর: বিবিসি বাংলার আকবর হোসেন মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরের অন্তত ১৪টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। এরমধ্যে মিরপুরের ৯টি কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টায় তিনি দেখতে পান, সেখানে গড়ে কোনভাবেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পড়ছে না।

কোন কোন কেন্দ্রে ৬%-৭% ভোট পড়লেও, কিছু কেন্দ্রে এই হার ২ শতাংশেরও কম।

মোহাম্মদপুরের ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোট পড়ার হার মিরপুরের তুলনায় কিছুটা বেশি। সেখানে গড়ে ভোট পড়ার হার ছিল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। ভোটগ্রহণ ইভিএম পদ্ধতিতে হওয়ায় ওই ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা এবং তাদের মধ্যে কতজন ভোট দিয়েছেন সেটা বুথে থাকা কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিল। সেই হিসাবটি পরে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা।

ঢাকা দক্ষিণের চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম: উত্তর সিটি করপোরেশনের মতো দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রায় একই ধরণের চিত্র দেখেছেন সংবাদদাতা সায়েদুল ইসলাম। সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতাভুক্ত ১৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেন তিনি। শুরুতেই তিনি যান কলাবাগানের মেহেরুন্নিসা গার্লস স্কুল ভোটকেন্দ্রে। সকাল থেকেই ওই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। অনেকক্ষণ পরপর একজন/দুজন করে ভোটার আসছিলেন। কর্মকর্তারা দীর্ঘসময় বসে ছিলেন ভোটারের প্রতীক্ষায়। তাদের আশা ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু উপস্থিতি সামান্য বাড়লেও সেটা ছিল চোখে না পড়ার মতোই। দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ইশরাক হোসেনের ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতেও ভোটার সংখ্যা ছিল খুব কম।

প্রশ্নের তীর নির্বাচন কমিশন আর প্রার্থীদের দিকে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীদেরও এই ইস্যুতেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপির প্রার্থীরা সরাসরি অভিযোগ করেন যে তাদের ১০০ জন এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

‘মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে, তাই তারা ভোট দিতে আসেনি’: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ভোটকেন্দ্রগুলো ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে, এ কারণে মানুষ ভোট দিতে আসেনি। কিন্তু তাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভোটের তারিখ হঠাৎ করে পরিবর্তন করায় ভোটের তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারে পড়েছে। এ কারণে অনেক ভোটার ঢাকার বাইরে চলে গেছে বলে তারা মনে করছেন। এছাড়া কেন্দ্রে কোন পোলিং এজেন্টকে যেতে বাধা দেয়া হয়নি বলেও তারা দাবি করেন। কেন্দ্র কারও দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল না বলেও তারা জানান।

প্রার্থীদের দায়ী করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার: এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবার ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার দায় চাপিয়েছেন প্রার্থীদের ওপর। তার মতে, প্রার্থীদের দায়িত্ব ছিল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার। আবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বক্তব্যও আলোচনায় এসেছে, যেমন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন যে বাংলাদেশ যে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তার প্রমাণ, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসও এ বিষয়ে বলেছেন, উন্নত দেশে ভোটার উপস্থিতি কম হয়।


ভোট দেয়া-না-দেয়ায় কিছু আসে যায় না- বলছেন ভোটাররা: উত্তর সিটিতে কেন্দ্রের বাইরে বেশ কয়েকজন ভোটারকে দেখা গেলেও তাদের মধ্যে ভোট দিতে অনাগ্রহ দেখা যায়। এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশের যে নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ভোট দেয়া না দেয়া তাদের কাছে একই অর্থ বহন করে। ভোট দিলেও যিনি জিতবেন, না দিলেও তিনিই জিতবেন। দক্ষিণ সিটির এমন কয়েকজন ভোটারদের কাছে বিবিসির সংবাদদাতা জানতে চেয়েছিলেন, যে তারা কেন ভোট দিতে যাননি। উত্তরে ওই ভোটাররা বলছেন যে, তাদের ভোট দেয়া না দেয়ায় কিছু যাবে আসবে না। কারণ বিজয়ী কে হবেন, সেটা তারা জানেন। তাই তারা আর ভোট দেয়ার দরকার মনে করেননি।

পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেয়ার অভিযোগ: বিবিসির কাদির কল্লোল জানাচ্ছেন, কেন্দ্রগুলোয় ঘুরেছের তার কোনটিতেই তিনি বিএনপির এজেন্ট দেখেননি। এগুলোর একটিতে বিএনপির এজেন্ট আসার পর কেন্দ্র থেকে তাকে বের করার দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি কেন্দ্রগুলোতে বিএনপি এজেন্টদের প্রবেশ করতেই দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে মোহাম্মদপুরের একটি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টকে দেখেছেন সংবাদদাতা আকবর হোসেন। তবে সেই এজেন্ট ছিলেন ভোটকেন্দ্রের বাইরে। তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেও কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ তাকে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। অন্য দলের এজেন্ট নেই কেন, এমন প্রশ্নে প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের কাছে ধানের শীষ মার্কার কোন এজেন্ট আসেননি। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। অবশ্য ভোটকেন্দ্রের আশপাশে খোঁজখবর নিয়েও বিরোধী প্রার্থীর কোন এজেন্ট এমনকি কোন সমর্থককেও দেখা যায়নি। দক্ষিণ সিটির ওই ১৫টি ভোটকেন্দ্রের সবকটিতে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের দেখা গেলেও এর ১৪টি কেন্দ্রে বিএনপির কোন পোলিং এজেন্টকে দেখেননি বিবিসির সংবাদদাতা। আজিমপুরের যে একটি কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পরিচয়ে এক নারীকে দেখা গেছে, তাকে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তার কাছে, প্রার্থীর নাম জানতে চাওয়া হলে, তিনি সেটা বলতে পারেননি।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে তাদেরকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন চাপ দিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, অনেক পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রের প্রবেশ মুখ থেকেই বের করে দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সকাল থেকে এজেন্টদের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কেউ আসে নি। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে টেবিল চেয়ারে বসে যারা ভোটারদেরকে নাম পরিচয় ও ভোটার নম্বর সংবলিত স্লিপ দিচ্ছেন তাদের সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। কোথাও বিএনপির কোন কর্মীকে তিনি ভোটার স্লিপ বিতরণের কাজে দেখা যায়নি। এ নিয়ে মি. তাপস ওই এজেন্টদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি বলেছেন, বিএনপির শক্তি নেই, এজন্য তারা এজেন্ট রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে আতিকুল ইসলাম বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে।

এদিকে ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে অভিযোগের পর অভিযোগ করছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তাদের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। বিবিসির সংবাদদাতারা ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে ভোটারদের ভোটের নম্বর দিয়ে সহায়তা করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের দল বেঁধে থাকতে দেখেছেন। বিরোধী দলের সমর্থকদের বলতে গেলে কোন ভোটকেন্দ্রেই সেভাবে দেখা যায়নি। সার্বিকভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ছিল। এছাড়া দুই একটি কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষ হয়েছে।

ইভিএম ভোট নিয়ে জটিলতা: এবারের পুরো নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এর মাধ্যমে। এর আগে জাতীয় নির্বাচনে হাতে গোনা কয়েকটি বুথে ইভিএম থাকলেও পুরোপুরি ইভিএমে ভোটগ্রহণ এটাই প্রথম। এই ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সায়েদুল ইসলাম। কারও কারও কাছে ইভিএমে ভোট দেয়া বেশ সহজ মনে হয়েছে। তারা আঙুলের ছাপ দিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে সহজেই ভোট দিতে পেরেছেন। আবার অনেকের কাছে এই পদ্ধতিটি বেশ জটিল লেগেছে। কারো কারো আঙুলের ছাপ মিলছিল না। এজন্য কয়েকজন ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। আবার অনেকে আঙুলের ছাপ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারলেও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যান। অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না ভোট কিভাবে দেবেন। বিশেষ করে প্রবীণ ভোটারদের তিনি এই জটিলতায় পড়তে দেখেন।

কোন কোন কেন্দ্রে এটাও দেখা গেছে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারদের ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন, যেটা কিনা নির্বাচনী নিয়ম বহির্ভূত। তাদের দাবি হল যারা বুঝতে পারছেন না যে কিভাবে ভোট দেবেন তাদেরকে সেটা সহায়তার জন্য তারা ভেতরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ইভিএমের মাধ্যমে দেয়া ভোটের স্বচ্ছতা নিয়েও আশঙ্কার প্রকাশ করেছেন। উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রগুলোয় ইভিএম নিয়ে সন্তুষ্টির পরিবর্তে ভোটারদের অভিযোগের কথাই বেশি শুনেছেন আকবর হোসেন।

মোহাম্মদপুরের একটি ভোটকেন্দ্রে তার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তারা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট না দিয়েই ফিরে যাচ্ছিলেন। এর কারণ হিসেবে তাদের একজন জানিয়েছেন, তিনি যখন তার ভোটার নম্বর মিলিয়ে তার ভোটটি দেয়ার জন্য পর্দার আড়ালে গেলেন, তখন পেছন থেকে এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তার কাছে এসে বলেন যে ওই বাটনটা চাপুন। উনি যখন ওই বাটনটি চাপ দিলেন তখন দেখতে পান যে উনি যে মার্কায় ভোট দিতে চান, সেই মার্কা সেখানে নেই। তখন তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন আপনি যেকোনো একটায় ভোট দিয়ে দেন।

এছাড়া বিবিসির সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন যে ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের যে এজেন্ট বা নির্বাচন কর্মকর্তা আছেন তারা পর্দায় ঘেরা জায়গাটিতে ঢুকে ভোটারকে বলছেন যে তিনি যেন এই বাটনটি চাপেন। প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব অভিযোগের কথা জানালেও তারা সব অস্বীকার করেন। কোন নির্বাচনী কর্মকর্তা অভিযোগ না করা পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না বলে তারা উল্লেখ করেন।

আবার আরেকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের পাঁচটি ইভিএম মেশিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁডড়য়ে থাকলেও, পরে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যেসব ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন, তাদের ভোট দিতে কোন সমস্যা হয়নি, তারা সহজেই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দিয়েছেন।

কিন্তু ভোটারদের মধ্যে যে শ্রমজীবী মানুষরা আছেন তারা একেবারেই বুঝতে পারছিলেন না যে কিভাবে ভোট দেবেন। এ অবস্থায় তারা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছিলেন নির্বাচনী কর্মকর্তা বা ক্ষমতাসীন দলের এজেন্টদের ওপর। আবার তারা যে ভোট দিয়েছেন সেটা ঠিকভাবে গণনা করা হবে কিনা। এটা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মাসুদ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:০৫ পিএম says : 0
আমাদের দেশের মানুষ এখন সর্ব শিক্ষিত এবং এতোই ............!!!!!!! তাই উন্নত দেশে ভোটার উপস্থিতি কম হয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন