শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জাতির চিন্তার জগতে নৈতিকতার চর্চা থাকতে হবে

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম কালোত্তীর্ণ কবিতার একটি লাইন হলো: ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ কথাটি শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। ধন বলতে শুধু টাকা-পয়সা বোঝায় না। বৃহত্তর অর্থে ধন বলতে ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা বা ধনসম্পদ যেমন বোঝায়, তেমনি পরিবারের সন্তান-সন্তুতি, রাষ্ট্রীয় বা জনগণের ভূ-সম্পত্তি, রাষ্ট্রীয় বা জনগণের অর্থসম্পদ বা বৈষয়িক সম্পদ, রাষ্ট্রের বা জনগণের ক্ষমতা, জনগণের সম্মান বা ব্যক্তির সম্মান ইত্যাদি সব কিছুকেই বোঝায়। রাজা শব্দটি অভিধানে রয়ে গেছে, ব্যবহারে রয়ে গেছে, কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বা রাষ্ট্র পরিচালনার প্রেক্ষাপটে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজা বা রাজাদের ক্ষমতা বিলুপ্ত প্রায়। বৃহত্তর অর্থে, রাজা বলতে বোঝায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তি, প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক শক্তি, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ইত্যাদি একা বা যৌথভাবে বা যুগপৎ। এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিদেশের কথা বলব এবং কিছু দেশের কথা বলব। প্রথমে বিদেশের কথা।
এক
১৯৯০ সালের শেষাংশের এবং ১৯৯১ সালের প্রথমাংশের আমেরিকান গোয়েন্দাদের যেসব কাগজপত্র বা মূল্যায়নপত্র সা¤প্রতিককালে তথা আজ থেকে তিন-চার বছর আগে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রকাশের মাধ্যমে একটি সত্য বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপিত হয়েছে। সত্যটি হলো এই, আমেরিকা এবং তার মিত্রদের ইরাক আক্রমণের কোনো বাস্তবসম্মত কারণ ছিল না বরং একগুচ্ছ মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করে পৃথিবীবাসীকে বোঝানো হয়েছিল যে, এখন (মানে ১৯৯০-৯১) আক্রমণ করা অতি জরুরি। কী প্রচার করা হয়েছিল? প্রচার করা হয়েছিল এই যে, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন তার দেশের সামরিক বাহিনীতে প্রচুর গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ইংরেজি পরিভাষায় : ওয়েপন্স অফ মাস ডেসট্রাকশন) প্রস্তুত, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছেন। সেই ১৯৯০-৯১ সালে প্রচার করা হয়েছিল যে, বিশ্বসভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে, ইরাককে আক্রমণ করতে হবে, ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রগুলো দখল করে ধ্বংস করতে হবে। বিশ্ববাসীর চোখে ধুলা দিয়ে, মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করে বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করা হয়েছিল যে, এ আক্রমণ অতি দ্রæতই করতে হবে। আক্রমণ ঠিকই হয়েছিল এবং তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র ইরাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। ওই আক্রমণের কারণে শুধু ইরাক নামক রাষ্ট্রটিই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি বরং আজকের মধ্যপ্রাচ্য অতি নাজুক, সঙ্ঘাতময় এবং অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। ওই ইরাক আক্রমণের মাধ্যমে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করা হয় যে, যুদ্ধপরবর্তী ইরাক সরকার তার সরকার পরিচালনা-কর্মে, তার দেশের সম্পদের (বিশেষত তেল) ব্যবহার-কর্মে, তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-কর্ম পরিচালনায় তথা সব কিছুই বলতে গেলে এক প্রকারের বন্ধক বা মর্টগেজ দিয়েছে বিশ্বের মোড়লদের কাছে।
দুই
এখন থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে রাশিয়া নামক বিখ্যাত শক্তিশালী দেশ, তার পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র দেশ ইউক্রেনের একটি প্রদেশকে সম্পূর্ণ দখল করে এবং নিজের দেহের লেজ বানিয়ে নেয়। ওই প্রদেশের নাম ক্রিমিয়া। রাশিয়ার আয়তনের তুলনায় ক্রিমিয়ার আয়তন একশো ভাগের এক ভাগেরও কম। তবে হ্যাঁ, ক্রিমিয়ার ভূ-কৌশলগত অবস্থান, ক্রিমিয়ার নিজের আকৃতির তুলনায় হাজার গুণ বেশি মূল্যবান।
তিন
১৯৭৪ সালে ভারত, তার আয়তনের পঞ্চাশ ভাগেরও কম আকৃতির একটি ছ্ট্টো ল্যান্ড-লক্ড বা স্থলবেষ্টিত দেশকে কৌশলগতভাবে গিলে ফেলে। সেই ক্ষুদ্রাকৃতির স্থলবেষ্টিত দেশটির নাম সিকিম। হিমালয়ের পাদদেশে, নেপালের পূর্ব পাশে এবং ভুটানের পশ্চিম পাশে দুই দেশের চিপায়, বাংলাদেশের উত্তরতম সীমান্ত থেকে শ’-দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিকিম নামক সাবেক স্বাধীন দেশ। তবে হ্যাঁ, সিকিমের ভূ-কৌশলগত অবস্থান, সিকিমের আকৃতির তুলনায় বহু গুণ বেশি মূল্যবান। এখন থেকে দুই বছর আগে চীন এবং ভারতের মধ্যে এই অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার সময় সিকিমের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব বোঝা গিয়েছিল।
চার
তেলসমৃদ্ধ ও তেল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ হলো ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের মধ্যে আমেরিকার কাছে প্রিয়তম দেশ হচ্ছে ইসরাইল। আমেরিকা ও পাশ্চাত্য বিশ্ব, বহু বছরের প্রচেষ্টায়, ক্রমান্বয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি একটি করে সব দেশকে ইসরাইলবান্ধব করে ফেলেছে। দুই-একটি মাত্র দেশ বাকি যথা তুরস্ক ও ইরান। সেই ইরানকে সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে কব্জা করা বা দখল করা সম্ভব নয় বা অবাস্তব। এটা স্বীকার করেই আমেরিকা ইরানকে সর্বদাই বিভিন্ন প্রকারের চাপ দিতে দিতে অর্থনৈতিকভাবে ও মনোবলের আঙ্গিকে দুর্বল করে ফেলতে সচেষ্ট। এটাও এক প্রকারের আগ্রাসন। আমেরিকার তেলের অভাব নেই। ইরানের তেল না পেলেও আমেরিকার চলবে। কিন্তু আমেরিকার প্রিয়তম মিত্র ইসরাইলের নিরাত্তার জন্যই আমেরিকা ইরানকে পরোক্ষভাবে দখল করতে চায়; যেমন কিনা ইরাককে পরোক্ষভাবে দখল করেছে।
দেশের উদাহরণের বিস্তারিত ব্যাখ্যা আজ দেবো না। দেশের উদাহরণগুলো নিয়ে আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি কলাম লেখার নিয়ত রাখছি। আগের একটি লেখার একটা অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে আজকের আলোচনা শুরু করছি। উদ্ধৃতি এই: বর্তমান বাংলাদেশে চিত্র ঠিক উলটো। এক. যাদের হাতে ক্ষমতা তারা ক্ষমতা ব্যবহার করে, পরস্পরের সহযোগিতা করে আরো ক্ষমতা অর্জন করছে। দুই. যাদের হাতে ক্ষমতা তারা ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদের মালিক হচ্ছে। তিন. যাদের হাতে সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা ক্ষমতা ও সম্পদের যৌথ ব্যবহারে আরো ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছে, আরো সম্পদের অধিকারী হচ্ছে। চার. যাদের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা তারা সমাজের দুর্বল অংশের হাত থেকে অবশিষ্ট ক্ষমতা ও সম্পদও কেড়ে নিচ্ছে। পাঁচ. যাদের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা তারা অন্যদের ক্ষমতা ও সম্পদকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে এবং সেই অন্যরা ক্রমান্বয়ে সম্পদ ও ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছে। ছয়. যাদের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা তারা নিজেদের সুরক্ষা বাড়াচ্ছে; তাদের চতুর্দিকের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেদ করার ক্ষমতা দেশের সাধারণ মানুষের নেই। উদ্ধৃতি শেষ।
এবার ঢাকা মহানগরের ফুটপাথ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলি। আমরা ইদানীং প্রায়ই দেখি যে, ফুটপাথ পরিষ্কার করা তথা জনগণের চলাচলের সুবিধা করে দেয়ার জন্য, অভিযান চালানো হচ্ছে অথবা অবৈধ কাঁচাবাজার, অবৈধ দোকানপাট ইত্যাদি তুলে দেয়ার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু ঠিক দু’দিন পরই সেই একই এলাকা ঠিক আগের মতো করেই দখল হয়। অর্থাৎ জায়গা পুনরুদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ যেমন সক্রিয় ও সচল তেমনি জায়গা অবৈধভাবে দখল করার জন্যও সক্রিয় শক্তিশালী গোষ্ঠী আছে। এই কাজগুলো সমাজের সবার দৃষ্টির মধ্যেই হয়। যেহেতু সবার দৃষ্টির মধ্যে হয়, সেহেতু সবাই কর্মগুলোকে মেনে নেন বলে ধরে নেয়া যায়। তার মানে দুর্নীতি বা অন্যায় কাজ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। এরূপ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্ব কার, চিন্তা করার পর্যায় বা লেভেল কোনটি ইত্যাদি সবকিছুই আলোচনাযোগ্য। কিন্তু সেই আলোচনা গভীরভাবে বা নিবিড়ভাবে হচ্ছে না কোথাও। যাদের করা উচিত তারা করছেন না। দেশের নেতৃত্ব বা দেশ পরিচালনায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের দু’টি দলে বা স¤প্রদায়ে ভাগ করা যায়, যথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব। দেশের সামাজিক উন্নয়ন, দেশের মানুষের নৈতিক উন্নয়ন এটাও যে একটি মনোযোগের দাবিদার বিষয়, সে কথাটি আমাদের প্রশাসনিক অভিধানে নেই।
রাস্তাঘাট বানাতে হবে, রাস্তা মেরামত করতে হবে এটি একটি বিষয় এবং এ বিষয়ে চিন্তা বা পরিকল্পনা এবং বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার জন্য একটি মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ আছে। দেশে প্রাইমারি স্কুল বানাতে হবে, শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে, বইপত্র ছাপাতে হবে, ইত্যাদি বিষয় দেখার জন্য একটি মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ আছে। দেশে পুলিশের থানা আছে, সেই থানার কর্মকান্ড দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। দেশে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো বাজারজাত করা হয় এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কর্মগুলো দেখার জন্য বিভাগ আছে, কর্তৃপক্ষ আছে। যেই বিষয়টি আমাদের সমাজে নেই, আমাদের প্রশাসনে নেই, সেটি হলো মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও দেশপ্রেম সর্বদা জাগ্রত রাখার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার কোনো কর্তৃপক্ষ বা বিভাগ। পাঠক ভুল বুঝতে পারেন এবং কেন ভুল বুঝতে পারেন তা উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি। পাট বিষয়ে পাট মন্ত্রণালয় আছে। এই মন্ত্রণালয়ের কাজ পাট নিয়ে, পাটের বীজ নিয়ে, পাটের মূল্য নিয়ে, পাটের ক্রয় নিয়ে এবং পাট রফতানি নিয়ে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কাজ মৎস্য চাষ নিয়ে, মৎস্যের লালন-পালন নিয়ে, মৎস্যের বাজারজাতকরণ নিয়ে এবং মৎস্যের স্বাস্থ্যসম্মত গুণাগুণ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ হাসপাতাল স্থাপন, হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণ, ডাক্তারদের পদায়ন, হাসপাতালের শৃঙ্খলা ইত্যাদি। কিন্তু স্বাস্থ্য বলতে আমরা বোঝাচ্ছি মানুষের স্বাস্থ্য। পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পশুর স্বাস্থ্য দেখাশোনার জন্য কার্যক্রম আছে। যে বিষয়টি নেই, যে বিষয়টির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছি, সেটি হলো মনের স্বাস্থ্য। একটি ছোট প্রবাদ-বাক্য দিয়ে আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। প্রবাদ বাক্যটি হলো : ‘বনের বাঘ থেকে মনের বাঘের হুমকি বড়।’ অর্থাৎ কিনা বনের বাঘকে দেখা যায়, বনের বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া যায়; কিন্তু মনের বাঘকে দেখা যায় না বিধায় সেই বাঘকে হত্যাও করা যায় না। তাহলে প্রশ্ন থাকে, মনের বাঘকে কী উপায়ে দূর করা যাবে তথা মনের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় কী? যেহেতু মানুষের মনই চিন্তার উৎপত্তিস্থল এবং আশ্রয়স্থল অতএব সুস্থ মন বা সুস্বাস্থ্যের মন না হলে মন থেকে উৎপাদিত দ্রব্যাদি বা বিষয়গুলো ‘সু’ বা ভালো হবে না। অতএব দুর্বল স্বাস্থ্যের মন নিয়ে বা অসুস্থ মন নিয়ে ভালো সমাজ, ভালো অর্থনীতি, ভালো প্রশাসন এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন করা যাবে না।
মনে করুন, একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি আছে। মধ্যবয়স্ক স্বামীর কঠিন অসুখ হলো। হাসপাতালে নেয়া হলো। ডাক্তাররা দুই সপ্তাহ পর রোগীকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যান। রোগীর মনের বল যেন হারিয়ে না যায়, অর্থাৎ মনোবল যেন উচ্চ থাকে। রোগীর সেবা করতে হবে। সঠিকভাবে রোগীর সেবা-শুশ্রুষা হলে রোগী সেরে উঠবে। রোগীকে কখনো একা রাখা যাবে না। এরূপ পরিস্থিতিতে এই রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো সেবা প্রদানকারী কে? স্বাভাবিক সমাজে উত্তর হলো, প্রথমেই মা, দ্বিতীয়ত স্ত্রী অথবা প্রথমে স্ত্রী, দ্বিতীয়ত মা। এর কারণ হলো একান্ত আন্তরিকতা তথা ভালোবাসা থাকতে হবে রোগীর প্রতি। তা না হলে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি নিজের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে রোগীর খেদমত করতে পারবেন না।
সেবাকারীদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষা। আমাদের সমাজে গ্রাম-গঞ্জ-নগরে, পরিচিতজনদের মধ্যে, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এরূপ পরিস্থিতি প্রায়ই সৃষ্টি হয়। যেহেতু চব্বিশ ঘণ্টাই রোগীর দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেজন্য একজন সেবাকারীর পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই একাধিক ব্যক্তি লাগে। আমাদের তথা বাংলাদেশের সমাজ এখন একটি রোগী। বাঙালি জাতি বীরের জাতি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও সত্য যে, যেই আন্তরিকতা নিয়ে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই আন্তরিকতা নিয়ে দেশ পরিচালনা করা হয়নি। যার কারণে বাংলাদেশের সমাজ একটি রুগ্ন সমাজ। যার কারণে আমাদের বহুলাংশের নৈতিকতা অধঃপতিত। এই রোগী তথা এই সমাজকে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করতে হবে। সুস্থ করতে হলে আন্তরিক সেবাকারী লাগবে।
আজকের কলামের প্রথমাংশে আলোচনা করেছি যে, ক্ষমতাধর, শক্তিশালী, সম্পদশালীরা কী নিয়মে অন্যের সম্পদ, অন্যের ক্ষমতা, অন্যের শক্তি কুক্ষিগত করতে চায়। পৃথিবীর ভূ-কৌশলগত কর্মকা- থেকে চারটি উদাহরণ দিয়েছি কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই প্রক্রিয়ার তত্ত¡ বা নীতিটা উল্লেখ করেছি, ব্যাখ্যা দিইনি। আজকের কলামের দ্বিতীয়াংশে আলোচনা করেছি যে, মনের স্বাস্থ্যের চিকিৎসা প্রসঙ্গে আমাদের দেশে কোনো প্রক্রিয়া নেই। আমি কোনোমতেই ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রির কথা বলছি না; মাদকাসক্তি থেকে নিরাময়ের প্রক্রিয়া তথা চিকিৎসার কথা বলছি না; মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের তথা পাগলদের চিকিৎসার কথা বলছি না। বলছি একটি জাতির মনোবলের কথা; বলছি একটি জাতির সুচিন্তার কথা; বলছি একটি জাতির চিন্তার জগতে নৈতিকতা সৃষ্টির কথা।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ পিএম says : 0
Allah [SWT] created us and He gave us a manual [QUR'AN] .. All these criminal is committing act due to absent of QUR'ANIC RULE. If we still ignore Allah [SWT].. we will suffer by these criminal those who do not rule our beloved country by Alllah's Law,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন