মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
ফুড সেক্টর বাংলাদেশে দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। এ সেক্টরে রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ। ক্রমবর্ধমান এই সেক্টরে সারা বছরই লোক নিয়োগ করা হয়। আহামরী কোন যোগ্যতা লাগে না। অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি পাওয়া সম্ভব। বেতন ভাতা, অনান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভাল। কিছুটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে চ্যালেঞ্জ গ্্রহণ করতে পারলে দ্রুত উন্নতি লাভ সম্ভব। যেটা অন্যান্য পেশায় হতে সময় লাগে। এফএমসিজি কোম্পানির সংখ্যা দেশে দিন দিন বাড়ছে। সে কারণে বিপুলসংখ্যক লোক এ সেক্টরে দরকার।
যে সব পদে লোকবল নিয়োগ করা হয় : এসআর, এসপিও (সেলস প্রমোশন অফিসার), টিএসও (টেরিটরী সেলস অফিসার), এরিয়া ম্যানেজার, এরিয়া সেলস এক্সিকিউটিভ, আরএসএস (রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার), এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ইত্যাদি।
যোগ্যতা ও দায়িত্ব : এসআর, টিএসও পদের জন্য ডিগ্রি পাস হলে ভাল। তবে কিছু কোম্পানি এইচএসসি পাস লোক নেয়। এমএম পাস হলে শুরুতেই বেতন ভাল পাওয়া যায়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দোকান থেকে অর্ডার সংগ্্রহ, পণ্য ডেলিভারী দেখ-ভাল, পরিবেশকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উত্তোলন, বিক্রি অনুযায়ী স্টক রাখা, দোকানে পণ্যের দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতি নিশ্চিত করা- এগুলো হল প্রধান কাজ। কোন কোন কোম্পানিতে শুরুতেই ট্্েরনিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ সময় কোন অর্থ প্্রদান করা হয় না। সময় তিন থেকে সাত দিন। অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল। না থাকলে সমস্যা নেই। ফ্রেশ লোক নিয়োগ করা হয়। আধুনিক, চটপটে, স্পার্ট ছেলেরা এই পদের জন্য উপযুক্ত। পারফরমেন্স ভাল হলে ইনক্রিমেন্ট, প্্রমোশন দ্রুত হয়। কর্মক্ষেত্র দেশের যে কোন জায়গা হতে পারে। কিছু কোম্পানি নিজ জেলায় পোস্টিং দিয়ে থাকে।
এরিয়া ম্যানেজার, এরিয়া সেলস এক্সিকিউটিভ, টিএসও : সর্বনিম্ন যোগ্যতা ডিগ্রি পাস। তবে এমবিএ, এমএম পাস হলে অগ্্রাধিকার পাওয়া যায়। অভিজ্ঞদের জন্য কোম্পানিগুলো শিক্ষাগত যোগ্যতার ছাড় দিয়ে থাকে। মূলত নামে ভিন্ন হলেও কাজ একই রকম। এরিয়া ম্যানেজার, এরিয়া সেলস এক্সিকিউটিভ, টিএসওদের কাজ এসআর, এসপিওদের মনিটরিং করা। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয়া। প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া। পরিবেশক, পণ্য ডেলিভারীতে সমস্যা হলে তা মিটমাট করা। নতুন দোকানে পণ্য তোলা, কভারেজ বাড়ানো। মূলত এগুলো এরিয়া ম্যানেজারদের প্রধান প্রধান কাজ। উপস্থিত বুদ্ধি যাদের ভাল। সহজে যারা আপত্তি সমাধান করতে পারে। কাজে-কর্মে কৌশলী। তারা সাধারণত এরিয়া ম্যানেজার পদে ভাল করে থাকে। পোস্টিং দেশের যে কোন জায়গায় হতে পারে। কোম্পানিগুলো এরিয়া ম্যানেজারদের ট্্েরনিং দিয়ে থাকে। এ জন্য কোন টাকা-পয়সা প্রদান করতে হয় না। সর্বনিম্ন ছয়জন, সর্বোচ্চ দশজন এসপিও একজন এরিয়া ম্যানেজারের অধীনে কাজ করে থাকে। অবশ্য কোম্পানিভেদে এই সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে।
আরএসএস (রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার), এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার : যে কোন কোম্পানির জন্য মিড লেভেলের এই পদ দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুরো একটা রিজিওন বা জোনের দায়িত্ব থাকে এদের উপর। এসপিও থেকে শুরু করে এরিয়া ম্যানেজার সকলের মনিটরিং-এর দায়িত্ব আরএসএম-এর। পরিবেশক থেকে পণ্যের অর্ডার প্রদান, বিক্রি অনুযায়ী পরিবেশক টাকা প্্রদান করছে কিনা, পরিবেশক পয়েন্টে পণ্যের স্টক থাকে কিনা ইত্যাদি দেখা আরএসএম-এর প্্রধান দায়িত্ব। কিভাবে বিক্রি বৃদ্ধি করা যায়, স্থানীয়ভাবে কোন অফারের ঘোষণা করে বিক্রি বৃদ্ধি করা যায় কিনা। এসব কৌশল আরএসএমকে জানতে হয়। মার্কেট শেয়ার, মার্কেট সাইজ, প্্রতিযোগী কোম্পানির তৎপরতা, ট্্েরড রিলেশন- এই বিষয়গুলোতে আরএসএম-এর দক্ষতা থাকা প্্রয়োজন। পারফরমেন্স ভাল করলে শুধু ইনক্রিমেন্ট নয়, দ্্রত সেলস ম্যানেজার, চ্যানেল সেলস ম্যানেজার, এনএসএম পদে প্্রমোশন পাওয়া সম্ভব। দেশী কোম্পানিগুলো নিজেদের লোকদের প্্রমোশন বেশি দিয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে তারা বড় পদে নতুন লোক নিয়োগ কম করে। পোস্টিং যে কোন জায়গায় হতে পারে। ল্যাপটপ, রিজওনাল হেড কোয়ার্টারে বসার অফিসের ব্যবস্থা কোম্পানি করে থাকে। বছর শেষে বেশিরভাগ কোম্পানি বিদেশ ভ্রমণের সুবিধা প্্রদান করে।
বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা : এসপিও, টিএসওদের বেতন ন্যূনতম আট হাজার। এরিয়া ম্যানেজারদের বেতন পনের হাজার, আরএসএম ত্রিশ হাজার। কোম্পানি ভেদে বেতনের পরিমাণ হেরফের হয়। নিয়োগের সময় দর কষাকষি করে অনেকে ভাল বেতন আদায় করে নিতে পারেন। প্্রত্যেকটি পদেই বেতনের সাথে টিএ-ডিএ রয়েছে। মোবাইল, মোবাইল বিল সুবিধা কোম্পানিগুলো দিয়ে থাকে। প্্রায় সব কোম্পানিতে ইনসেনটিভ সুবিধা থাকে। ইনসেনটিভ থেকে প্্রচুর অর্থ উপার্জন সম্ভব। অনেক কোম্পানি বছর শেষে লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। এরিয়া ম্যানেজারদের মোটরসাইকেল, আরএসএমদের গাড়ির সুবিধা কিছু কিছু কোম্পানী দেয়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া : রেফারেন্স, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করা হয়। সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এসপিও, টিএসও নিয়োগ দেয়া হয়। কিছু কিছু এফএমসিজি কোম্পানিতে প্রথমে লিখিত, পরে সাক্ষৎকার দিতে হয়। সকল পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত কপি, দুই কপি ছবি, জীবন-বৃত্তান্ত, সর্বশেষ চাকরিস্থলের ছাড়পত্র, স্যালারী সাটিফিকেট বা পে সিলিপের কপি, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, অভিজ্ঞতার সনদপত্রের ফটোকপি ইত্যাদি কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
ফুড সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে যারা অগ্্রহী তাদের বিষয়ে এক প্্রশ্নের জবাবে ব্্র্যাক ডেইরী এন্ড ফুড প্্রজেক্টের ডিজিএম (সেলস) ছাইফুর রহমান বলেন, ফুড সেক্টর তরুণ-তরুণীর চাকরির প্্রধান পছন্দ হতে পারে। বেতন, বোনাস, ইনসেনটিভ, লভ্যাংশ ভাতা, টিএ-ডিএ, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইন্স্যুরেন্সসহ প্রচুর সুবিধা রয়েছে। কাজ ভাল করলে অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে এই সেক্টরে দ্রুত পদোন্নতি লাভ সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন