প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলো পূর্বঘোষিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বইমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। গতকাল রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাঙালীর এ প্রাণের মেলার উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ঢাকার দু’সিটি নির্বাচনের কারণে একদিন পরে শুরু হলেও ঠিক সময়েই মেলা শেষ হবে বলে জানা গেছে।
এবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায় মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমগ্র মেলাজুড়ে ছোঁয়া লেগেছে মুজিব বর্ষ উদযাপনের। নানন্দিকভাবে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের মেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি স্টল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি স্টলসহ মোট ৫৬০টি প্রিিতষ্ঠানকে ৮৭৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ ছাড়াও ৬টি উন্মুক্ত স্টল রাখা হয়েছে।
মেলা ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। আর ছুটির দিনে মেলা খুলবে বেলা ১১টায় চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ গ্রন্থমেলা খোলা থাকবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতাকে নিয়ে ২৫টি বই প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। নতুন এসব বই নিয়েও আলোচনা করা হবে। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে মেলার প্রথম দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধান রিবেরু, রেজা ঘটক, সৌম্য সালেক, সাইফুল ভুঁইয়া।
সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ১০ জন কবি ও লেখক: ১৯ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন ১০ জন কবি ও লেখক। এবার কবিতায় মাকিদ হায়দার, কথাসাহিত্যে ওয়াসি আহমেদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরোচিষ সরকার, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণে ফারুক মঈনউদ্দীন, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞানে নাদিরা মজুমদার, নাটকে রতন সিদ্দিকী, শিশুসাহিত্যে রহীম শাহ এবং ফোকলোরে সাইমন জাকারিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও লেখকদের হাতে তিন লাখ টাকা, সনদ ও স্মারক তুলে দেওয়া হয়। ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে করা হয়েছে তিন লাখ টাকা।
মেলা ঘুরে বই কিনলেন শিক্ষামন্ত্রী: বইমেলার উদ্বোধনের পরপরই বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখে বই কিনেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে কয়েকটি স্টল থেকে তাকে কিছু বই উপহার দেয়া হয়। তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) মুজিব স্টল, বাংলা একাডেমির স্টল পরিদর্শন করেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, একুশে বইমেলা প্রাণের মেলা। সারাবছরই বইমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। বইমেলায় আসা, নতুন বই দেখা, লেখকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। সারাবছর ধরে আসলে এ মেলার জন্য প্রতীক্ষায় থাকি।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আমার দেখা নয়াচীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রফেসর শামসুজ্জামান খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. ফকরুল আলম এবং কবি তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন