সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিবে দেশটির সরকারি বাহিনীর গোলাবর্ষণে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর অন্তত চার সদস্যের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবারের এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৯ তুর্কি সেনা। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, হামলার প্রতিশোধে তুরস্কের সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ অঞ্চল ইদলিবে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দিয়েছে। তুরস্কের সামরিক বাহিনীর অবস্থানের ব্যাপারে আগে থেকেই অবগত থাকা সত্তে¡ও গোলাবর্ষণ করেছে সিরীয় বাহিনী।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সমর্থিত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের সৈন্যরা সম্প্রতি ইদলিবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইদলিবে যুদ্ধবিরতি দেয়া না হলে তুর্কি সামরিক বাহিনী সেখানে অভিযান শুরু করতে পারে। এর মাঝে ইদলিবে নতুন করে ত্রিপাক্ষিক উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় তুরস্কমুখী নতুন শরণার্থী ঢল শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইদলিবে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর ১২টি সামরিক পর্যবেক্ষণ চৌকি রয়েছে; ২০১৭ সালে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে চুক্তির পর এসব চৌকি স্থাপন করে তুরস্ক। সম্প্রতি সিরীয় সরকারি বাহিনী চারদিক থেকে তুরস্কের এসব সামরিক পর্যবেক্ষণ চৌকি ঘিরে অভিযান পরিচালনা করছে।
এদিকে সিরীয় বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি ইদলিবে সরকারি বাহিনীর অভিযান জোরালো করায় সিরিয়ার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে তুরস্ক। নতুন করে শরণার্থী সংকটের আশঙ্কায় এই ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে আঙ্কারা।
রবিবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সিরীয় সীমান্তবর্তী হাতায় প্রদেশের রায়হানলি জেলায় অতিরিক্ত সেনা ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। তুর্কি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক সদস্য বলেছেন, ‘ইদলিবে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এবং ওই অঞ্চল স্থিতিশীল রাখতে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে যা করা প্রয়োজন তার সবই করবে তুরস্ক’। তিনি বলেন, ‘সিরীয় সরকারের অভিযান বিপর্যয় ডেকে আনলে আঙ্কারা হস্তক্ষেপ হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করবে না’।
আল জাজিরার ইস্তানম্বুল প্রতিনিধি সিনেম কোসেওগøু জানান, তুরস্ক সিরিয়ার সরকিব এলাকায় একটি সামরিক চৌকি ও পর্যবেক্ষণ পোস্ট স্থাপনের জন্য এসব সেনাবাহিনীর সদস্যকে নতুন করে পাঠিয়েছিল।
জাতিসংঘ বলছে, রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের সহায়তায় সিরীয় সেনাবাহিনী ইদলিক অভিমুখে অগ্রসর হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ওই অঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছে। গত বুধবার সংস্থাটি বলেছে, গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ ইদলিব ছেড়ে পালিয়েছে। এর বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বর্তমানে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে ৩৫ লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থী। নতুন করে শরণার্থী ঢলের আশঙ্কায় রয়েছে আঙ্কারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন