একসময় এই চিত্রা নদীতে জোয়ার-ভাটা হতো। বড় বড় ট্রলারসহ নৌকার যাতায়াত ছিল নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু এখন আর নেই সেই জোয়ার-ভাটা কিংবা ট্রলার কিছুই নেই। দখল-দূষণ আর পানির অভাবে মৃতপ্রায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বুক দিয়ে বেয়ে চলা চিত্রা নদীটি। কেউ পুকুর কেটে করছেন মাছ চাষ। আবার কেউ নদীর জমি দখল করে করেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে নদীর জমিতে। এছাড়া বাড়িঘর নির্মাণসহ নদীর মধ্যে দখল চাষ হচ্ছে ধান, ভ‚ট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের তালিকা মতে, চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশে ৮টি পুকুর আছে। এক গ্রামের ৮জন দখলদার নদীতে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। এই নদীর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ অংশের ৪৩ কিলোমিটারে আরো বেশ কিছু দখলদার রয়েছেন। নদীর মধ্যে যাদের পুকুর, বাগান এমনকি বাড়িঘরও রয়েছে। যা তালিকায় পাওয়া যায়নি।
অবশ্য চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলছেন, এই নদীর জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে নদীর মধ্যে। বড় বড় গাছ জন্মেছে এই চিত্রার বুকে। যেগুলো অপসারণ এর দাবিতে তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সেগুলো তালিকায় নেই এটা জানতে পেরে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। এই নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। নদীটি আরো দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখা হয়ে নবগঙ্গায় মিশেছে। ১৭০ কি. মি. দীর্ঘ এই নদীটির ঝিনাইদহ অংশ রয়েছে প্রায় ৪৩ কি.মি.। এক সময় এই নদীতে লঞ্চ-স্টিমার সবই চলতো। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে নদী ব্যবহার হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠে কালীগঞ্জ শহরটি। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে।
স¤প্রতি জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী দখলের পৃথক তালিকা তৈরি করেছেন। যেখানে কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের ৮ ব্যক্তি নদীতে ৮ টি পুকুর করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দখলদারের তালিকায় রয়েছেন সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মো. আব্দুল। এরা সকলেই নদীর মধ্যে পুকুর কেটেছেন বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। একই গ্রামের মান্নান হোসেন নামে এক দখলদারের প্রায় দেড় বিঘা ভ‚ট্টাক্ষেত রয়েছে নদীর মধ্যেই।
সরেজমিনে সিংদহ গ্রামে গিয়ে দখলদার ওই ৮ জনের কাটা ৮ টি পুকুর পাওয়া যায়। যেগুলো অনেক পুরানো। কোন কোন পুকুরের পাড়ে লম্বা লম্বা নারিকেল গাছও রয়েছে।
কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে চিত্রা নদীর ব্রীজ সংলগ্ন নির্মান শুরু হয়েছিল একটি বিশাল পাকা ভবন। যেটা আপাতত বন্ধ আছে। এরই কিছুটা পশ্চিমে শিবনগর গ্রামের নিচে জনৈক মুক্তার হোসেন নদীর জায়গায় ঘর তৈরী করে মুরগীর ফার্ম করেছেন। শহরের মধ্যে নদীর উপর থাকা সেতুটির (পুরাতন সেতু) দুইপাশে মার্কেট গড়ে উঠেছে। সেতুর পশ্চিমে নদীর দুইপাড়ে যেভাবে বড় বড় পাঁকা ভবন তৈরী হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা নদী, না খাল। সেতুর পূর্ব পাশেও দুইপাড়ে অসংখ্য পাঁকা ভবন। এক শ্রেণীর লোকজন নানা কাগজপত্র দেখিয়ে এই সকল জায়গাটি তাদের দাবি করে আসছেন।
শুধু দখল নয়, নদীতে নানা ধরনের ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ক্লিনিকের বর্জ্য, শহরের ময়লা ফেলে পানি দূষণ করা হচ্ছে। কুকুর-বিড়াল মারা যাওয়ার পরও বস্তায় ভরে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম আহসান হাবীব ইনকিলাবকে জানান, তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভ‚মি অফিসের তথ্য নিয়ে এই তালিকা করেছেন। আগামী ৯ ফেব্রæয়ারি থেকে ঝিনাইদহের কয়েকটি নদীতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক সিএস ম্যাপ ধরেই উচ্ছেদ অভিযান করি আমরা। এরমধ্যে যে অবৈধ ভবনগুলো থাকবে সব উচ্ছেদ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন