রাজধানীর কদমতলী এলাকার মিরাজনগরে খালে পাড়ে নিখোঁজ হওয়া তোহা মনিকে পাঁচ দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এতে স্বজনদের মধ্যে বেড়েই চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তোহা মনির বাবা-মা। তাকে দ্রুত উদ্ধারে দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। তবে তাকে উদ্ধারে টানা পাঁচ দিন থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কাজ করছেন। খালে ময়লা-আর্বজনা বেশি হওয়াতে উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে জানান ডুবুরি দলের সদস্যরা।
এর আগে গত শনিবার বিকেলে কদমতলী রায়েরবাগে মিরাজনগর এলাকায় খেলতে গিয়ে তোহা মনি (আশামনি) নিখোঁজ হয়। পরে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তোহা মনির বাবা এরশাদ মিয়া মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরশেলই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রায়েরবগের মিরাজনগর এলাকায় ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে তিনি মিরাজনগরে ডি বøকে মোহাম্মদনগর কালভার্ট এলাকায় বিক্রমপুর হাউজ নামের একটি বাসায় বসবাস করেন। চার তলা বিশিষ্ট ওই বাসার নিচ তলার একটি রুমে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
গতকাল সরজমিনে মিরাজনগর এলাকায় ডি ব্লকে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রমপুর হাউজের পাশে ঘিরে একটি খাল রয়েছে। সেটি ডিএনডি খাল নামে পরিচিত। ওই খালের পাড়ে কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে ছোট একটি ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই মাঠে রাতে বয়স্করা খেলাধুলা করন বলে জানান স্থানীয়রা। আর প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় শিশুরা খেলাধুলা করেন। সেই সুবাধে গত শনিবার বিকেলেও শিশুরা খেলাধুলা করছিল। এ সময় পার্শবর্তী খালে পড়ে যায় তোহা মনি।
যেভাবে নিখোঁজ হয় তোহা মনি:
গত শনিবার দুপুরে স্কুল থেকে আসার পর মায়ের সাথে খাওয়া-ধাওয়া করে তোহা মনি। পরে বিকেলে অন্য শিশুদের সাথে সেও বাসার পার্শবর্তী খেলার মাঠে খেলতে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে অন্য শিশুরা তোহা মনি পানিতে পড়ে গেছে বলে চিকিৎকার করে। এ সময় দ্রুত পার্শবর্তী বাসার লোকজন ও এলাকার ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু এর আগেই খালের পানিতে তলিয়ে যায় সে। পরে তাকে উদ্ধারে তার বাবা ও এলাকার কয়েকজন লোক খালে নেমে সন্ধান করেন। অপরদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই দিন তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে রাতে উদ্ধার কাজ স্থগিত করে পরদিন সকালে আবার উদ্ধার শুরু করা হয়।
তোহা মনির মামা মো. মোশারফ হোসেন জানান, প্রতিদিনের মত গত শনিবারও তোহা মনি অন্য শিশুদের সাথে বাসার পাশে খালি মাঠে খেলতে যায়। খেলা করতে গিয়ে তাদের একটি বল খালে পড়ে যায়। এ সময় তোহা মনি বলটি তুলতে খালের কিনারায় যায়। এরপর বুঝতে না পেরে ময়লায় ঢাকা একটি জায়গায় পা দেয়। তখনই সে খালে তলিয়ে যায়।
উদ্ধারে বাঁধা ময়লা-আর্বজনা:
তাকে উদ্ধারে গতকালও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা কাজ করেন। তবে খালে অতিরিক্ত ময়লা ও আর্বজনা থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে জানান তারা। পরে সরজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খালে প্রচুর পরিমাণে ময়লা-আর্বজনা রয়েছে। এমনকি খালের পানি ঘন কালো সিরাপে পরিণত হয়েছে। এতে খাল সংলগ্ন এলাকায় খালের পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া পানির স্রোত কমানোর জন্য ঘটনাস্থলের পার্শবর্তী একটি কালভার্টের এক পাশে টিন ও কাট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আর আশপাশ এলাকায় ময়লা ও আর্বজনাগুলো পরিস্কার করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা।
উদ্ধার কাজে নেতৃত্বদানকারী ফায়ার সার্র্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পাঁচ দিন থেকে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ডুবুরি দল কাজ করছে। প্রতিদিন সকালে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। আর সন্ধ্যায় উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। তবে খালে ময়লা ও আর্বজনা বেশি থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে। তবে ময়লা-আর্বজনা সরিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
বাকরুদ্ধ বাবা-মা:
গতকাল নিখোঁজ তোহা মনির বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, তোহা মনির মা তানিয়া বেগমকে ঘিরে কয়েকজন নারী বসে আসেন। কিছুক্ষণ পরপর মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তবে কারো সাথে তিনি কথা বলছেন না। বাকরুদ্ধ অবস্থায় বসে থাকা মাকে সবাই সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এক অবস্থা তোহা মনির বাবা এরশাদ মিয়ারও। তিনি বাসার বাহিরে ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবে কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না। তবে মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে দেখা গেছে।
তোহা মনির নানী মুরশেদা বেগম ইনকিলাবকে জানান, ঘটনা শুনার পরপরই তারা গ্রাম থেকে ছুটে আসেন। তবে শনিবার পর থেকে তোহা মনির বাবা-মা ভেঙ্গে পড়েছেন। তারা খাবারও খাইতে চাচ্ছেন না। তবে দ্রুত তোহা মনিকে উদ্ধার করার জন্য সরকারের কাজে অনুরোধ করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, তিন সপ্তাহ আগে ঘরোয়াভাবে তোহা মনির ৫ম জন্মদিন পালন করা করা হয়। সেই স্মৃতিগুলো বলে তার বাবা-মা কান্না করছেন।
এলাকাবাসীর মানববন্ধন:
তোহা মনিকে দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার এ কর্মসূচি পালন করা পরে ঘটনাস্থলের পাশে তোহা মনি উদ্ধারের জন্য দুটি ব্যানার সাটানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, তোহা মনির বাবা-মাকে সান্তনা দিতে এলাকার লোকজন তাদের বাসায়ও ভিড় করতে দেখা গেছে।
লাইলী বেগম নামের এক প্রতিবেশি ইনকিলাবকে জানান, তোহা মনি সব সময় হাসিমুখে থাকতো। অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলত। কিন্তু হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে গেলো সে। পাঁচ দিয়েও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কেন? তাই উদ্ধার কাজে আরো জনবল বাড়িয়ে তাকে দ্রুত উদ্ধার করার আহ্বান জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন