দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমান মন্দাবস্থার মধ্যেও ভালো শেয়ারের চাহিদা মেটাতে বড় পরিসরে বাজারে আসছে বসুন্ধরা গ্রæপের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে রোড শো শেষ করেছে কোম্পানিটি। বাজারে শেয়ার ছেড়ে ২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে কোম্পানিটি। কোম্পানিটির অথরাইজড মূলধন ৫০০ কোটি আর পরিশোধিত মূলধন ১৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় রোড শোতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির পরিচিতি, আর্থিক অবস্থা, আইপিও ইস্যু ও কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে ট্রিপল এ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। রেজিস্ট্রার টু দ্য ইস্যু হিসেবে রয়েছে এফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড।
বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে পেপার ও পেপার সামগ্রী উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনাঘাটে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ইউনিট-৩ চালু রয়েছে।
জানা যায়, পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ ব্যবসায়িক কর্মকাÐের স¤প্রসারণ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। যার বড় অংশই থাকবে কারখানার মেশিনারিজ ও উৎপাদন সুবিধার আধুনিকায়ন। এ ক্ষেত্রে ব্যয় হবে ১২০ কোটি টাকা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ছয় কোটি, ইন্সটলেশনে তিন কোটি, যন্ত্রণাংশে তিন কোটি, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ৬০ কোটি, ভূমি ও ভূমি উন্নয়নে তিন কোটি টাকা এবং আইপিও প্রক্রিয়াতে খরচ হবে পাঁচ কোটি টাকা।
নিয়মানুযায়ী পুঁজিবাজারে আসতে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা। সেই হিসাবে বসুন্ধরা পেপার মিলসের প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে আইপিওতে শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হবে। বিডিংয়ের মাধ্যমে অভিহিত মূল্যের সঙ্গে আরো অর্থ যুক্ত হয়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হবে। আর এই মূল্য নির্ধারণের ওপরই নির্ভর করবে কোম্পানিটি কতগুলো শেয়ার ইস্যু করতে পারবে। জানা যায়, রোড শোর পর কোম্পানির বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাইলে তিনদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রসপেক্টাসে সংশোধনের কিছু থাকলে তা বিবেচনা করবে কোম্পানি। পরবর্তী সময়ে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে কোম্পানির ‘নির্দেশক মূল্য (ইনডিক্যাটিভ প্রাইস)’ উল্লেখ করা হবে। এর ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নিলামের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করা হবে। প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত শেয়ার যে দামে বিক্রি হবে, সে দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করা হবে। কোম্পানির প্রসপেক্টাস ও আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ০.৮৬ টাকা অর্থাৎ পয়সা আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৩০.৯২ টাকা। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩.৬৩ টাকা আর সম্পদ মূল্য ৬০.৮৮ টাকা। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইপিএস ছিল ৪.৪০ ও সম্পদমূল্য ৫৫.৩৬ টাকা। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইপিএস ছিল ৫.১০ ও সম্পাদমূল্য ১৩২.৫০ টাকা। ২০১২ সালে ইপিএস ছিল ৩.৪১ ও সম্পদমূল্য ১২৭.৪০ এবং ২০১১ সালে ইপিএস ছিল ৫.৫০ ও সম্পদমূল্য ১৪২.৬৩ টাকা। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ২০১৫ সালে মুনাফা ছিল ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৪ টাকা। ২০১৪ সালে ছিল ২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে ছিল ৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৬ টাকা। ২০১২ সালে ছিল ছয় কোটি ৫০ লাখ তিন হাজার ৬৮ টাকা আর ২০১১ সালে ছিল ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার ৯২১ টাকা। রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা পেপার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাফওয়ান সোবহান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান (এফসিএমএ), চিফ ফাইন্যানশিয়াল ও ডেভেলপমেন্ট অফিসার তোফায়েল হোসাইন, কোম্পানি সচিব নাসিমুল হাই (এফসিএস) ও ‘ত্রিপল এ’ (এএএ) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ হাফিজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বসুন্ধরা পেপার মিলস তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে এমজি পেপার, অফসেট পেপার, হোয়াইট রাইটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপার, ব্রাউন লাইনার, নিউজ প্রিন্ট পেপার, কোটেড অ্যান্ড আনকোটেড পেপার বোর্ড, এ৪ পেপার, গাসাইন পেপার, স্টাইফেনার, লেজার পেপার, পিপি ওভেন ব্যাগ ও স্যাক পেপার প্রভৃতি উৎপাদন করে মানুষের চাহিদ পূরণ করে আসছে। টিস্যুর মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, ওয়েট টিস্যু, গ্রিন টিস্যু, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বেবি ডায়াপার, টয়লেট টিস্যু ও কিচেন টাওয়েল উৎপাদন করছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাফওয়ান সোবহান বলেন, ‘আপনাদের উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
কোম্পানির প্রধান ফিন্যানশিয়াল ও ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক হিসাব তুলে ধরে সিকিউরিটিজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স প্রতিনিধিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, বসুন্ধরা পেপার মিলস পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থের বড় অংশ খরচ হবে কোম্পানির ব্যবসা স¤প্রসারণে।
বিশেষ করে নতুন মেশিনারিজ আমদানি ও আধুনিকায়নে।’ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের অন্যতম বড় একটি গ্রæপ। তারা নতুন কোম্পানি নিয়ে বাজারে আসছে। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে ভালো ভালো লভ্যাংশ প্রদান করতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আহŸান জানিয়ে ছায়েদুর রহমান বলেন, সুচিন্তিতভাবে শেয়ারের দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন, যাতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়। কারণ পুঁজিবাজার ভালো থাকলে দেশের অর্থনীতিরও উন্নতি হবে। Ñপ্রেস বিজ্ঞপ্তি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন