বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

ভাইরাসজনিত রোগ ও করোনা ভাইরাস

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

এ মুহূর্তে আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস । যা নিয়ে শঙ্কায় আছে বিশ্ববাসী, কেননা করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হলেও সম্প্রতি এটি ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ২৪ টির বেশী দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত লোকের দেখা মিলেছে । ইতিমধ্যে চীন থেকে জাপান , যুক্তরাজ্য . ইউরোপসহ সারাদেশের নাগরিকদেরকে বিশেষ সতর্কতায় ফিরিয়ে নেওযা হচ্ছে । আর চীনগামী বিমান বা ফ্লাইট অনেক দেশ বন্ধ করে দিয়েছে । সর্বশেষ মরণঘাতী এই ভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের বেশী মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর আক্রান্ত ১৪০০০ ছাড়িয়ে গেছে। আতঙ্কের বিষয় হলো এই ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশেধক আবিষ্কার হয়নি। ফলে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এটি আরও আতঙ্কের। কেননা রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ণ রাজধানীর একটি। আর চীন বাংলাদেশের সন্নিকটে চীনের সাথে আমাদের ব্যবসা-বানিজ্য সহ বহুবিদ আদান-প্রদান রয়েছে। এছাড়া আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়নের স্তম্ভ পদ্মা সেতুতে চীনা নাগরিকরা কাজ করে এবং কাজে তাদের শিফটিংও রয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মাসেতুতে কাজ করা চীনা নাগরিকদের বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। শুধু চীনা নাগরিক নয় করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারী ও বেসরকারীভাবে আমাদের সবারই সতর্ক থাকতে হবে। 

গত বছর সংক্রমনজনিত মশাবাহিতরোগ বা ডেঙ্গুজ্বর আমাদের দেশে মহামারী রূপ ধারন করেছিল। ভুলে গেলে হবেনা ডেঙ্গু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শীততো শেষ হয়ে যাচেছ গরমের শুরুতেই ডেঙ্গুর প্রাদূর্ভাব দেখা দিতে পারে। তাই এখন থেকে বাড়তি সতর্কতা জরুরী। শুধু ডেঙ্গু নয় ভ্ইারাস জনিত সকল অসুখ সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকতে হবে। আমরা নিপাহ ভাইরাসের কথা শুনি, ইবোলা ভাইরাসের কথা শুনি আবার শোয়াইন ফ্লু এর কথা শুনি। কিন্ত এসব সম্পর্কে শোনা নয় জানতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগ বা ভাইরাস রোগ মানুষের প্রায় এক ডজন গুরুত্বপূর্ণ রোগের জন্য দায়ী। সচরাচর সংক্রামিত এসব রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেঙ্গুজ্বর, ইয়েলো ফিভার, পোলিওমাইলিটিস, জন্ডিস, রেবিস, ইনফ্লেুায়েঞ্জা, মাম্পস, হাম, বসন্ত, হার্পিস, রোটাভাইরাস ডায়ারিয়া, ফিভার এবং কয়েক ধরনের এনসেফালাইটিস। এছাড়া কিছু ক্যানসারও ভাইরাসজনিত বলে মনে করা হয়। আন্তজার্তিক ও জাতীয়ভাবে এসব রোগ সম্পর্কে যে গবেষণা নেই তা কিন্ত নয় । আসলে ভাইরাস রোগ সম্পর্কে আমাদের ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। ১৯৬৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বপ্রথম সারা বিশ্বে গুটি বসন্ত নির্মূলের প্রচারণা চালায় এবং সফলভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ফলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবী থেকে গুটি বসন্ত বিতাড়িত হয়। বাংলাদেশে সর্বশেষ গুটি বসন্তের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে ১৯৭৫। বাংলাদেশে সচরাচর ভাইরাসজনিত যেসব রোগসমূহের দেখা মেলে, তারমধ্যে রয়েছে জন্ডিস হাম, মাম্পস এবং জল বসন্ত। জল বসন্ত সংক্রমণের জন্য দায়ী ভাইরাসের সঙ্গে গুটি বসন্তের ভাইরাসের সম্পর্ক নেই। আশার কথা হলো পোলিওমাইলিটিস ভাইরাসজনিত রোগটি বাংলাদেশে অনেক বছর আগে থেকেই নির্মূল করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত রোগগুলি তাদের বৈশিষ্ট্যময় উপসর্গের মাধ্যমে এবং কতক ল্যাবরেটরি-পরীক্ষার সহায়তায় চিকিৎসকরা শনাক্ত করতে পারেন। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলিতে রোগ নির্ণয়ের জন্য এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। মারাত্মক হেপাটাইটিস বি-ভাইরাস শনাক্তের জন্যও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা পদ্ধতি এখন দেশেই সহজলভ্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগ লোক হেপাটাইটিস এ-ভাইরাসের এন্টিবডি বহন করে। এতে বোঝা যায় জীবনের কোন এক পর্যায়ে তারা সম্ভবত এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। শতকরা প্রায় ৭.৫ ভাগ মানুষে হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানা গেছে, অর্থাৎ দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষের শরীরে বি-ভাইরাস রয়েছে। বাংলাদেশে অন্যান্য হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলির উপস্থিতির সম্ভাব্য পরিমাণের কোন হিসাব পাওয়া যায়নি ।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছু ধারনা : করোনাভাইরাস মূলত পশুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেও অন্য ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে এলে বা তার সঙ্গে হাত মেলালেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
করোনোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ: এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হলো-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি। তবে অসুখের মাত্রা আরও বাড়লে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। করোনাভাইরাস মরণব্যাধি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো-এখনো এই ভাইরাস থেকে বাঁচার কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হযনি।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে যা করবেন: ১. বাইরে বের হওয়ার আগে সঙ্গে মাস্ক নিতে ভুলবেন না ২. বাস, ট্রেন বা এ জাতীয় গণপরিবহনগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন ৩. বাইরে থেকে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ বা লিকুইড সোপ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন ৪. ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত সময় ধরে রান্না করতে, যাতে এগুলো যেন অবশ্যই ভাল সেদ্ধ হয় ৫.ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে রাখার চেষ্টা করুন, দিন বা সপ্তাহ ধরে ফেলে রাখবেন না। ৬.ঘর পরিষ্কার রাখুন ও নিয়মিত আপনার থাকার ঘর এবং কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন। ৭. এ সময়ে বিয়ে বাড়ী, বিপনি বিতান বা মার্কেট প্লেছ বা যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় তা এরিয়ে চলা উচিৎ।

অধ্যাপক (ডাঃ) মনজুর হোসেন
শিশুরোগ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ,
সাবেক পরিচালক, শিশু হাসপাতাল
ডাঃ মনজুর’স চাইলড’স কেয়ার সেন্টার
৮৪/১(৩য়তলা), রোড-৭/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৯ ।
মোবাইল-০১৭১১৪২৯৩৭৩।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন