মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

এক আলোকিত মানুষের গল্প

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

এক
মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর বুকে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য বহু মনীষী পাঠিয়েছেন। যারা তার নৈকট্য লাভের মাধ্যমে অর্জন করেছেন সুউচ্চ মর্যাদা ও সন্তুষ্টি। সেসব মনীষীর মাঝে অন্যতম হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)। এশিয়া মহাদেশের ইসলামি দার্শনিকদের অন্যতম যিনি। তিনি ইসলামবিরোধী ভ্রষ্টতাসমূহের মূলোৎপাটন করেছেন। যেমনটা সফলতা পেয়েছেন তিনি, তা কারোর জীবনে মেলা ভার। তাই তাকে ‘মুজাদ্দিদে মিল্লাহ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
জন্ম: হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) ১২৮০ হিজরির ৫ রবিউস সানি (বুধবার) সুবহে সাদিকের সময় ভারতের মুজাফফর নগর জেলার থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষ সবার জন্য সত্যের আলোর অভ্যুদ্বয়স্বরূপ। হজরত হাফেজ গোলাম মোর্তাজা পানিপথি (রহ.) (যিনি স্বর্গীয় ধ্যানে নিমজ্জিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন বুজুর্গ ছিলেন) হজরত থানবি (রহ.)-এর জন্মের আগে যখন তার জন্মের কোনো পূর্বাভাস প্রকাশ পায়নি, তখন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-‘পৃথিবীতে মহান সংস্কারক ও ইসলামের একজন মহামনীষীর আগমন ঘটতে পারে।’ হজরত থানবি (রহ.)-এর নাম ‘আশরাফ আলী’ রাখার প্রস্তাব তিনিই করেছিলেন। এই নামটি কোনো এক সাহাবির নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ায় আরও মর্যাদার অধিকারী হয়। নামটি তার নানার থেকে প্রস্তাবিত ছিলো। অপরদিকে দাদার পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হলো ‘আবদুল গনী’। বিশিষ্ট বুজুর্গ হজরত গোলাম মোর্তাজা (রহ.)-এর প্রস্তাবিত নামটিই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গৃহীত হলো। প্রসিদ্ধি লাভ করলো পৃথিবীজুড়ে।
বংশ: হজরত থানবি (রহ.) ছিলেন অভিজাত বংশের সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন কৃতিমান মহাপুরুষ। দাদার দিক থেকে ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর বংশধর। শ্রদ্ধেয়া নানির দিক থেকে শেরে খোদা হজরত আলী (রা.)-এর বংশধর। পিতা হজরত আবদুল হক (রহ.) ছিলেন একজন প্রভাবশালী দানশীল ও অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ফার্সিভাষায় যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে সাহিত্যের ময়দানে তার পরিচিতি ছিলো অপরিসীম।
শিক্ষাজীবন: তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয় নিজ মহল্লাতেই। সুদক্ষ পন্ডিত ফতেহ মুহাম্মদ (রহ.)-এর কাছ থেকে তিনি আরবিভাষার প্রাথমিক শিক্ষা, কিতাবসমূহ এবং মাধ্যমিক ফার্সি বিষয়সমূহ অধ্যয়ন করেন। এরপর ফার্সিভাষায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন মামা ওয়াজেদ আলী (রহ.)-এর কাছে। ইসলামি শিক্ষায় পান্ডিত্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ১২৯৫ হিজরির জিলকদ মাসে বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণাকেন্দ্র ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে রওনা হন। কৃতিত্বের সঙ্গে সেখানে পাঠ নেন রীতিমতো। শেষমেষ ১৩০১ হিজরি মোতাবেক ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি অর্জন করেন। তখন তার বয়স মাত্র বিশ বছর। দারুল উলুম দেওবন্দের তখনকার অন্যতম সদরুল মুদাররিসিন হজরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতাবি (রহ.) তার বিশেষ উস্তাদ ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই হজরত থানবি (রহ.) ইসলামি আইনশাস্ত্রে পান্ডিত্য লাভ করেন। তর্কশাস্ত্রের প্রতিও তাঁর ঝোঁক ছিলো প্রবল। বহু তর্ক প্রতিদ্বন্ধিতায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন ছাত্র থাকাকালেই। মেধায় ছিলেন অনন্য। হজরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতাবি (রহ.) তার জ্ঞানের পরিধি দেখে বলেছিলেন-‘তুমি যেখানেই যাও না কেনো, তোমার সামনে কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারবে না।’ আল্লামা আবদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর কাছে তিনি ইলমে কিরাত অধ্যয়ন করেন। তিনি ছিলেন সকল প্রকার জ্ঞানের অধিকারী একজন কালজয়ী মহাপুরুষ।
আধ্যাত্মিকতা: শিক্ষাজীবন থেকেই আধ্যাতিকতার অধ্যায়ে বিশেষ ভাবমূর্তি দেখা যায় তার মাঝে। তখনকার বুজুর্গদের মাঝে ফকিহুন নফস হজরত মাওলানা মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.)-এর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিলো তাঁর। হজরতের ইন্তেকাল অবধি তা বহাল থাকে। জীবদ্দশায় কোনো এক সময়ে হজরত গাঙ্গুহি (রহ.) দারুল উলুম দেওবন্দে আগমন করেন। তখন হজরত থানবি (রহ.) হজরতের কাছে বাইয়াত গ্রহণের আবেদন জানান। সে মুহূর্তে হজরত গাঙ্গুহি (রহ.) তাকে বাইয়াত করাটাকে অনুপোযোগী মনে করলেন। এরপর ১২১৯ হিজরিতে হজরত গাঙ্গুহি (রহ.) পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে মক্কা রওনা হন। সে সময় তিনি হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর কাছে একটা পত্র পাঠান। যেনো তিনি হজরত গাঙ্গুহি (রহ.)-কে নিজের বাইয়াতের জন্য রাজি করিয়ে দেন। উত্তরে হাজি সাহেব (রহ.) তাঁর আধ্যাত্মিকতার বিষয়ের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করলেন। হজরত থানবি (রহ.) ১৩১০ হিজরিতে মক্কা শরিফে যান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন