বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমাহীন দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা

আগ্রাবাদ হালিশহরে ধুলিঝড় ঘরে ঘরে রোগব্যাধি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

গৃহিনী তাসলিমা বেগমের ছেলে তানভির আহমেদ মেয়ে মাহিয়া তাবাসুম আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনী স্কুলের শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই প্রায় অসুখ-বিসুখে ভোগে। শান্তিবাগের বাসা থেকে কখনো রিকশা, কখনো টেম্পোতে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড হয়েই তাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। রোদের সময় ধুলা বালু আর বৃষ্টি, জোয়ারে কাদা মাড়িয়ে তাদের আসা-যাওয়া। তানভির-মাহিয়ার মতো চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ হালিশহরের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর যন্ত্রণার অন্ত নেই। গত চার বছরের বেশিসময় ধরে এসব এলাকার বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ আর বিড়ম্বার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

পোর্ট কানেকটিং রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সংস্কার কাজে চরম ধীরগতি মহানগরীর বিশাল অংশের বাসিন্দাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সম্প্রতি চিটাগাং চেম্বার আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ওই এলাকার বাসিন্দাদের ফুসফুসে কমপক্ষে আধাকেজি ধুলাবালি জমেছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চর্ম রোগ, অ্যালাজি, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগব্যাধি। সিটি কর্পোরেশন, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার নানা উদ্যোগেও রোগের প্রকোপ কমছে না। সড়কদুটির বেহাল দশায় ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি মালামাল পরিবহন ও যাতায়ত খাতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। বায়ু দূষণের পাশাপাশি রাস্তার খোঁড়াখুঁড়িতে ওয়াসার পাইপ লাইন ফেটে এবং জোয়ারের ওই এলাকার পানিও দূষিত হয়েছে কয়েক দফা। গেল দুই বছর এইসব এলাকায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানা রোগের প্রকোপ দেখা যায়।

দুঃসহ যন্ত্রণায় অনেকে বাসা বদল করে অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ আবার পৈত্রিক বাড়ি ফেলে রেখে অন্যত্রই ভাড়া বাসায় উঠতে বাধ্য হয়েছেন। চাকরি, ব্যবসা, সন্তানদের স্কুলসহ নানা কারণে যারা এলাকা ছেড়ে যাননি তাদের নিত্যসঙ্গী হয়েছে নানা দুর্ভোগ। আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনী স্কুল ছাড়া, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, সিলভার বেলস স্কুল, হালিশহর ক্যান্টমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ, মহিলা কলেজ, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনী বালিকা স্কুল, তালেবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্দর হাইস্কুল, বন্দর মোহাম্মদিয়া মাদরাসাসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই এলাকায়। আছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, কনভেনশান সেন্টার, কারিগরি প্রশিক্ষণ ক্ষেন্দ্রসহ নানা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আটিলারি সেন্টার, বিজিবির আঞ্চলিক সদর দপ্তর, জেলা পুলিশের অস্থায়ী দপ্তর, পুলিশ লাইন্স, আর আর এফ ব্যাটেলিয়ান দপ্তরসহ ওই এলাকায় আছে সরকারি বেসরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অফিস। সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে।

দুটি সড়কে দুর্ভোগের অজুহাতে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। ভাঙ্গা রাস্তায় বাসের বদলে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। গন্তব্যে যেতে বার বার গাড়ি বদল করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যানজট বাড়ছে আবার এসব ছোট যানবাহন অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছে। স্থানীয়রা জানায়, রাস্তার অবস্থা এতে বেশি খারাপ যানবাহন চলছে হেলেদুলে। গর্তে পড়ে প্রচন্ড ঝাকুনিতে যাত্রীদের হাড়গোড় ভেঙ্গে যাওয়ার দশা। প্রায়ই সেখানে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কর্মজীবী নারী ও বয়স্কদের অবস্থাও কাহিল। রাস্তায় নেমে ধুলা বালুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মার্স্ক পড়েও ধুলা থেকে রেহায় মিলছে না। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে রিকশা কিংবা টেম্পুতে চড়ার পর ধুলায় মাথাসহ গায়ের পোশাক বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় হোটেল রেস্তোঁরা। যারা নিয়মিত সেখানে খাবার খান তারাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হোটেলের সামনে পর্দা ঝুলিয়ে খাবার ঢেকে রেখেও ধুলা ময়লা থেকে রেহাই মিলছেনা। এসব খাবার খেয়ে লোকজন পেটেরপীড়ায় ভুগছেন।

এদিকে সংস্কারের ফলে সড়ক ও পাশের নালা উঁচু করে ফেলায় সড়কে পানি না উঠলেও জোয়ারে এলাকার বাসা বাড়িতে পানি উঠছে। বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির নীচতলা এখন খালি। ভাড়াটেরা অনেক আগে বাসা ছেড়ে গেছেন। লোকশানের মুখে পড়েছেন বাড়ির মালিকেরা। যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছেন তাদের ঋণের বোঝা বাড়ছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, জোয়ারের পানি ঠেকাতে নীচতলা এবং সেই সাথে নালা ও সেফটি ট্যাংকের উচ্চতা বাড়াতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ৭ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। তার মতো আশপাশের সবাই এভাবে জোয়ারের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কনভেনশান সেন্টার, গুদামে এবং শোরুমেরও একই দশা। একদিকে ব্যবসা প্রায় বন্ধ অন্যদিকে স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এতে দায়-দেনার পরিমাণ বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে পোর্ট কানেকটিং রোডের কয়েকটি অংশে বাজারও বসছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দুর্ভোগ লাঘবে বাজার উচ্ছেদ করেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে গৃহায়নের এক প্রকৌশলীর হেনস্থার মুখোমুখি হন তিনি। পরে অবশ্য ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, মেয়রের ওই পদক্ষেপের পর কিছু কিছু এলাকায় বাজার উঠে গেলেও নতুন নতুন এলাকায় বাজার বসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন