কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদলে অবস্থিত শতাব্দীর প্রাচীন সেই বাংলোঘর এখনো বহন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি। শশীদল রেলস্টেশন সংলগ্ন এ বাংলোঘরে বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে অলোচনায় বসেছিলেন, খেয়েছিলেন দিনের খাবার, বিশ্রাম নিয়েছিলেন বাংলোর খাটে শুয়ে। ছোট্ট এ বাংলোটি শত বছর আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। জাতির জনকের সেই স্মৃতিময় বাংলোটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
শশীদল গ্রামের বৃদ্ধ মো. আবদুর রশিদ, আবদুল মতিন, নান্নু মিয়া ও অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মো. নুরুল ইসলামসহ এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শশীদলের ওই বাংলোতে বঙ্গবন্ধুর সময় কাটানোর সেই স্মৃতি তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলোটিকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। তারা আরও বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি স্মৃতি থাকলেও একটিতেও ফলকও নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন বুড়িচং উপজেলায় (পরে বিভক্ত হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা) নির্বাচনী প্রচারে আসেন। তিনি শশীদলের ঐতিহ্যবাহী বাসুদেব মাঠে নির্বাচনী বিশাল জনসভায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে বক্তৃতা দেন। নৌকার প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট আমির হোসেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু উপজেলার বেজোরা ও দুলালপুরে পথসভায় বক্তৃতা দেন। শশীদলে পথসভার আগে ও পরে শশীদল ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট (চেয়ারম্যান) মো. বাদরু মিয়ার এই বাংলোঘরে বিশ্রাম করেন ও দুপুরের খাবার খান বঙ্গবন্ধু। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, আবদুস সামাদ আজাদসহ অনেকে ওই সভায় বক্তব্য দেন।
অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মো. নুরুল ইসলাম সেদিন তরুণ ছিলেন। তিনি ছিলেন বাদরু মিয়ার নাতি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমি সরাসরি দেখেছি। আমার দাদার এই বাংলোঘরে বসে তিনি খেয়েছেন, বিশ্রাম নিয়েছেন। হাতাওয়ালা চেয়ার দেখিয়ে নুরুল বলেন, এ চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধু নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু তখন তরুণ হলেও সিনিয়র নেতারাও তার সঙ্গে সমতালেই কথা বলেছেন। ওই দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখতে স্থানীয় লোকজন এ বাংলোর চারপাশে ভিড় জমিয়েছিলেন বলে জানান নুরুল ইসলাম।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হয়ে ওঠায় এ বাংলোঘরটিকে বাদরু মিয়ার উত্তরসূরিরা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখেছেন। বাজারের ভেতরে এ বাংলোটির অবস্থান বলে এর অনেক বাণিজ্যিক মূল্যও রয়েছে। এটিকে ভেঙে দোকান করে ভাড়া দিলেও টাকা আসে। কিন্তু মালিকরা তা না করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দিয়েছেন বাংলোঘরটিকে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়ার বেজোরা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা তফাজ্জল হোসেন তজু মিয়ার বাড়িতে এসে বঙ্গবন্ধু দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, জাতির জনকের এ স্মৃতিগুলোর কথা আমাদের জানা রয়েছে। শশীদলের বাংলোঘর, বেজোরা গ্রামের তজু মিয়ার বাড়ি, বাসুদেব মাঠসহ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিগুলো সংরক্ষণে উপজেলা পরিষদ সর্বোচ্চ ভ‚মিকা রাখবে। খুব সহসাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন