বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আবী আহমেদের সাফল্য ও সম্ভাবনা

ইথিওপিয়া কি অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারবে- শেষ পর্ব

কোয়ার্টজ | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

যদিও কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইতিবাচক বিষয়, তবে টেকসই অর্থনৈতিক বিকাশের সেরা লক্ষণ হচ্ছে মূলত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। এর অর্থ নাগরিকেরা ও সংস্থাগুলো পণ্য তৈরি ও পরিষেবা প্রদানে আরও দক্ষ হয়ে উঠছে, এবং উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধিতে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো সাধারণত টেকসই হয়।

২০১০ সালের দিকে, ইথিওপিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০০০ সালের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তবুও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি স্থবির ছিল, ২০০০ সালে যেখানে বাৎসরিক উৎপাদনশীলতা ৪ শতাংশের বেশি ছিল, ২০১০ সালে তা কমে ২ শতাংশেরও নিচে নেমে যায়। এ বিষয়ে ইথিওপিয়ান বংশোদ্ভূত সেলেসি জানিয়েছিলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জায়গাগুলো বেশিরভাগই মূলধন বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, যার বেশিরভাগই সরকার বা রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগে করা হয়েছে।’

এটি ফলে ইথিওপিয়ার ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপির ৪০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। তাদের এই ঋণবৃদ্ধির পেছনে বেশিরভাগই দায়ি বিদেশী সংস্থাগুলোর উপর সরকারের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা। সরকারের উচ্চ মাত্রার ব্যয় এবং সাধারণ মানুষ ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।
দীর্ঘমেয়াদে, ইথিওপিয়ায় বর্তমানে বিনিয়োগের পেছনে ব্যয় করা বেশিরভাগ অর্থই সুফল বয়ে আনতে পারে। রাস্তাঘাট, স্কুল ও হাসপাতালের পেছনে সরকারের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে ইথিওপিয়াকে ভালভাবে সেবা দিতে পারবে। বিশ্বব্যাংকের ‘সরকারের কার্যকারিতা’ এর পরিমাপের ভিত্তিতে দেশটি অস্বাভাবিকভাবে ভালো করেছে। তারা উচ্চ রেটিং পয়েন্ট পেয়েছে, যার অর্থ সরকার অর্থের বেশিরভাগই দক্ষতার সাথে ব্যয় করছে।

অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন যে ইথিওপিয়ায় অস্থিতিশীল আর্থিক সংকট দেখা দিলে এসব দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কখনই বাস্তবায়িত হতে পারবে না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে, আর্ন্তজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মুডি’ তাদের বিশ্লেষণ পরিবর্তন করে জানিয়েছে, ইথিওপিয় সরকারের ঋণ শোধের ক্ষমতা নেতিবাচক। আগে তারা জানিয়েছিল যে সরকার ঋণ ও আয়ে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। সেলাসি ইথিওপিয়ার আর্থিক সঙ্কটের বর্ধিত সম্ভাবনা সম্পর্কেও উদ্বিগ্ন এবং তিনি এড়ানো দুটি উপায় দেখেন। এক, সরকারের বাড়তি করের রাজস্ব দরকার, যা ২০০০ এর দশকের শুর থেকে জিডিপির অংশ হিসাবে হ্রাস পাচ্ছে। দেশটিতে তাদের প্রতিবেশিদের তুলনায় ট্যাক্সের হার অস্বাভাবিকভাবে কম। বেশিরভাগ কারণেই এটি স্থানীয় সংস্থাগুলিকে অনেক ছাড় এবং করমুক্তি মঞ্জুর করে। দ্বিতীয়ত, সেলাসি বিশ্বাস করেন যে দেশটির রফতানি খাতটি আরও উন্নত করা এবং আরও বেশি বিদেশী বেসরকারী বিনিয়োগ অর্জন করা প্রয়োজন। এটি অর্থনীতিকে বৈচিত্রযুক্ত করবে এবং এর ঋণ শোধে আরও কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে।

একদিক থেকে, বেসরকারীকরণের ইথিওপিয়া অর্থনীতিকে ধরে রাখতে এবং রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে। যদিও এখনও এক বছরও হয়নি প্রধানমন্ত্রী আবী আহমেদ ক্ষমতায় এসেছেন, তবে তিনি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বøুমবার্গের মতে, ফোন সিস্টেম এবং রেলপথের মতো সম্পদ বিক্রি করে সরকার ৭৫০ কোটি ডলার আয় করতে চায়। তবে তারা ইথিওপীয় এয়ারলাইন্সের বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা করছে না। কারণ এটি সরকারী সংস্থা হলেও এটি সুসংগঠিত এবং ভাল ব্যবসা করছে।

আর্থিক সমস্যা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ইথিওপিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা অত্যন্ত ফলস্বরূপ। ‘পরবর্তী চীন’ হিসাবে বিবেচিত দেশটি যদি সফল হয়, তবে এটি কয়েক কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু, ব্যর্থ হলে তা বিপর্যয় বয়ে আনবে। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন