বলতে দ্বিধা নেই যে দেশের হাতেগোনা কয়েকটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সবার সেরা। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই ছুটে আসে এখানে পড়াশোনার জন্য। ফলশ্রুতিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা চাকরির ক্ষেত্রে তৈরি করে নিয়েছে তাদের একটি আলাদা অবস্থান।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার জন্য প্রতি বছর মাত্র ১০০০-১২০০ শিক্ষার্থীকে বিএসসি/অনার্স লেভেলে ভর্তি করা হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থীদের আবার ভাগ করা হয় বিভিন্ন শেকসন ও গ্রুপে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সৃজনশীল শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার লক্ষ্যে একটি গ্রুপে মাত্র ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীকে রাখা হয়। প্রতি গ্রুপের জন্য থাকেন একজন আলাদা গ্রুপ টিচার। শেসনজট মুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস হয়। এই দুই দিন ছাড়া এখানে নেই তেমন কোনো বড় ধরনের ছুটি। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সারা দিন ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল আর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রতিটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।
ভর্তির পর প্রথম ক্লাস থেকেই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে হাতেকলমে শিক্ষা দিতে থিওরি ক্লাসের পাশাপাশি প্রতিটি বিষয়ের ওপর নেওয়া হয় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস। এরপর প্রয়োজন মতো ওই ক্লাসের ওপর মাঠ পর্যায়ে নিয়ে তাদেরকে প্রয়োগমূলক শিক্ষা দেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি পায় বাস্তব অভিজ্ঞতা। উদাহরণস্বরূপ কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের কথাই ধরা যাক। এই অনুষদের একটি শিক্ষার্থীকে প্রথমে একটি বিষয়ে ক্লাসে বিস্তারিত পড়ানো হয়। এরপর তাকে আবার ওই একই বিষয়ের ওপর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে হয়। সবশেষে তাকে ওই দুই ক্লাসে অর্জিত জ্ঞানের যথার্থ প্রয়োগের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয়। যেমন- কৃষিতত্ত্ব বিষয়ের ক্লাস হলে তাকে জমিতে আবাদ করে ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সবকিছুই করতে হয়। লাঙ্গল দিয়ে অথবা ট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করতে হয়। কমপোস্টসহ বিভিন্ন জৈব সার প্রস্তুত করতে হয়। আগাছা দমন করতে হয়। উদ্ভিদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন ইন্টারকালচার অপারেশন করতে। এরপরও বাস্তব অভিজ্ঞতাকে আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষাসফর তো আছেই। আর এসবের মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই নিশ্চিত হয় একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীল শিক্ষা ও মেধা বিকাশের সুযোগ। এভাবেই তৈরি হয় বাকৃবির একজন সৃজনশীল কৃষি গ্র্যাজুয়েট। আর এই কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের হাত ধরেই দেশ আজ দানাদার খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, হাতেকলমে শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বাকৃবি।
ষ মু. শাহীন আখতার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন