শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নৈরাজ্যের কারণে সড়কে বেড়েছে হত্যাকান্ড

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

সড়কে আগের মতোই নৈরাজ্য বাড়ায় হত্যাকান্ড বেড়েই চলেছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কারণে মাঝখানে সড়কে প্রাণ ঝরা কিছুটা কমলেও গত কয়েকমাসে তা আবারও বেড়েছে। নতুন সড়ক আইন হলেও এর প্রয়োগ না থাকায় এমনটি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক। এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেশ কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, সড়কে নৈরাজ্যের কারণে যাদের সন্তান হারিয়েছে, বিনিময়ে টাকা চান না তারা। তারা চায় যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার হোক। তারা চায়, সড়কে মৃত্যু ফাঁদ বন্ধ হোক। যদি ন্যায় বিচার হতো তাহলে সড়কে প্রাণ ঝরতো না। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হলে ভয়ে দুর্ঘটনা কমাতো চালকরা। কঠোর আইন পাওয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি মালিকদের ক্ষমতার কারণে সরকারও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর হতে হবে। সরকার প্রধানেরও সদিচ্ছার দরকার রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছোটভাই মোস্তাক আহমেদ ভাসানী বলেন, যাদের বেলায় আন্দোলন হচ্ছে শুধু তারাই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন, আর যাদের বেলায় আন্দোলন নেই তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বিচার ও ক্ষতিপূরণ দুটোই সবার বেলায় থাকা দরকার। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। মামলা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি নিরাপদ যাতায়াতও চাই।
গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর ওয়ারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে ওয়াসার গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান আবির নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় মামলা হলে ঘাতক চালক চুন্নু মিয়াকে কারাগারে পাঠায় আদালত। এখন নানাভাবে ভয়ভীতি ও মামলা তুলে নিতে হুমি দেওয়া হচ্ছে।

আবিরের বড়বোন লিজা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াসার গাড়িটি যখন তার শরীরে উঠিয়ে দেয় তখন একটি হাত চাকার নীচে যায়। আবির বারবার চিৎকার করে জানায়, গাড়িটা সামনে নেন। সেদিন গাড়িটা সামনে বাড়ালে আমার ভাইয়ের হাত যেতো তবে বেঁচে থাকত। চালক না শুনে আবারও পেছন দিকে যাওয়ায় আমার ভাইয়ের মাথা থেতলে গিয়ে মগজ বের হয়ে যায় এবং মারা যায়।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত জোয়ারসাহারা বাসস্ট্যান্ডের কাছে উত্তরা পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪৫৮) চাপায় হত্যার শিকার হন সেন্টযোসেফ কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান তাসিন। আদনানের বাবা আহসান উল্লাহ টুটুল জিপিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রশাসনের দারে দারে ঘুরেছেন। এরপরেও তিনি বিচার পাননি।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ছেলেকে হত্যার পর চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। থানা পুলিশ গাড়িটিকে আটক করে থানায় নিলেও পরে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। থানায় মামলা করতে গেলে জিডি নিয়ে ফেরত দেওয়া হয়। পরে পুলিশ আর এ নিয়ে এগুয়নি।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ জানায়, আপনার ছেলে হত্যার ঘটনায় আন্দোলন হয়নি। কোনো কিছু ভাইরাল হয়নি তাই এ ঘটনায় বিচার পাওয়া কঠিন হচ্ছে আপনার। ছেলে হত্যার বিচারের জন্য আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, গুলশান বিভাগের ডিসি, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে শুরু করে সব সেক্টরে গিয়েছি। কোনো ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। এ বিষয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেওড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আদনান তাসিনের বাবা আহসানউল্লাহ টুটুল, ৫ ফেব্রুয়ারি নিহত ফাইজার বাবা ফয়েজুল ইসলাম, গুলশানে নিহত পপি ত্রিপুরার ভাই জয়ন্ত নিকোলাস ত্রিপুরা, এ বছরের ২৭ জানুয়ারি ওয়ারীতে নিহত আবিদের বোন লিজা, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর শেওড়ায় নিহত সাইফুল ইসলামের ভাই নাজিমউদ্দিন, কুড়িল বিশ্বরোডে নিহত আলফাজ শিকদারের ভাই আমান উল্লাহ্ সিকদার, ২০১৮ সালে নিহত গফুর শেখের ছেলে মিলন।

সংবাদ সম্মেলনে শেওড়ায় নিহত সাইফুল ইসলামের ভাই নাজিদউদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর ঘাতক বলাকা বাস ও তার চালককে আটক করে থানায় রাখা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে চালককে ছেড়ে দেয়া হয়। আমরা লাশ ময়নাতদন্ত না করার অনুরোধ জানিয়ে লাশ নিয়ে দাফন করি। এরপর এই দুর্ঘটনার তেমন কোনো তদন্তই হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন