শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফুলপুরে ছোট্ট টিনের ঘর থেকে এখন বিশ্বজয়ী রাকিবুল

ফুলপুর(ময়মনসিংহ)উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৫:১৫ পিএম

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য রাকিবুল হাসানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুরে। জয় উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে তার গ্রামে। তাকে নিয়ে সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে।

জানা যায়, ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে রূপসী ইউনিয়নের বাশাটি গ্রামের ছেলে রাকিবুল হাসান। তবে জন্মের পর থেকে রাকিবুল হাসান গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেনি। রাকিবুলের বাবা শহীদুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন গাড়ি চালক। রাবিকুল পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। তবে বছরে বেশ কয়েকবার গ্রামে বেড়াতে যান রাকিবুল হাসান। ওই সময় গ্রামের কিশোরদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। রূপসী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেটও খেলেন।

মঙ্গলবার রাকিবুল হাসানের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছোট্ট পুরানো বাড়ি রাকিবুল ইসলামের। এই বাড়িতে আজও বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি। বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি প্রায় অকেজো। বাড়িতে কেউ না থাকায় রাকিবুলের ফুফা কামাল হোসেন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
দরিদ্রতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি যুব ক্রিকেটার রাকিবুল হাসানের। সফলতার দ্বারপ্রান্তে উড়তে জীবনের সঙ্গে করতে হয়েছে যুদ্ধ। দরিদ্র বাবার আয় থেকে প্রাইভেটের যে টাকা দেয়া হতো সেই টাকা থেকে বাঁচিয়ে ক্রিকেট অনুসরণে খরচ করত দামাল ছেলে ইয়ং টাইগার রাকিবুল হাসান। লেখাপড়ার চেয়ে খেলাধুলার প্রতি ছিল তার বেশি আগ্রহ। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে করতে এক পর্যায় ঢাকার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সফলতা আসতে থাকে তার ঝুলিতে।

রাকিবের ফুফু রোখসানা খাতুন জানান, রাকিবুল ইসলাম বেশি পড়তে চাইত না। সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলায় লেগে যেত। এ জন্য আমরা বিরক্ত থাকলেও আজ সে দেশের মুখ উজ্জল করেছে। এখন আমরা খুবই আনন্দিত।

গ্রামের বিভিন্ন বয়েসি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাকিবুল যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলছেন, এ খবর টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই জানে গ্রামবাসী। বিশেষ করে গ্রামের কিশোরেরা বেশি খবর রাখে। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রামের মানুষ রূপসী বাজারে গিয়ে রাকিবুলের খেলা দেখেছে।

এলাকার তরুনরা জানায়, রাতে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হলেও খেলা দেখার জন্য পরিবারের অনুমতি নিয়ে গত রোববার রাতে রূপসী বাজারে বসেই খেলা দেখেছেন। টানা উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বজায়ের শেষ রানটা আসে রাকিবুলের ব্যাট থেকে। এ আনন্দের ঘোর কাটছেই না তাদের। রাতেই গ্রামের মানুষ রাকিবুলের দলের জয়ে আনন্দ মিছিল করেছে। এক বছর আগে রূপসী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তারা রাকিবুলের খেলা দেখেছে।

বাশাটি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, গ্রামে এখন বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। মানুষের দম ফেলার সময় নেই। এমন দিনে রাকিবুলের সাফল্যের খবরে গ্রাম গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমের সাংবাদিকেরা এসেছে। এটি তাদের জন্য বড় আনন্দের বিষয়।

আবদুল হামিদ বলেন, খেলা এত বুঝি না। তবে গ্রামে সাংবাদিক আসায় এতটুতু বুঝেছি যে, আমাদের গ্রামের ছেলে বড় কিছুই করেছে।

গ্রামের মানুষের এ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে চান রাকিবুল হাসানের বাবা শহীদুল ইসলাম।

গ্রামের মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দের খবর শুনে রাকিবুল হাসানের বাবা তার স্ববজনদের জানান, ছেলে (রাকিবুল) দেশে আসলেই তাকে নিয়ে গ্রামে আসব। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে এ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিব। তবে দেশের আসার পর কয়েকদিন হয়তো আনুষ্ঠানিকতাতেই কেটে যাবে। এরপরই গ্রামে আসব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন