শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তৃণমূল রাজনীতি চাঙ্গা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আসন্ন। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীর মেয়র এবং কাউন্সিলরদের নির্বাচনকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি। আগামী ১৬ ফেব্রিয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) চসিক নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার কথা রয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ পড়তে পারে মার্চ মাসের শেষের দিকে। ইতোমধ্যে প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক পক্ষ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি চসিক নির্বাচনমুখী তৎপরতায় মাঠে নেমে গেছে। সিটি মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি গত সোমবার শুরু হয়েছে। বিএনপি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির পুরোদমে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। চসিক নির্বাচন নিয়ে ইসি’র প্রস্তুতিও এগিয়ে চলেছে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবিযুক্ত পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন বিলবোর্ডে চোখে পড়ছে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় সর্বত্র। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাঘের শীত ছাপিয়ে বইতে শুরু করেছে ভোটের সরগরম হাওয়া।

বিগত শত শত বছরে রাজনৈতিক বহু উত্থান-পতনের সূতিকাগার চাটগাঁ। তাই বলা হয় বীর চট্টলা। এছাড়াও দেশের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্রবন্দর, বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক বাহক চট্টগ্রাম মহানগরীর জনপ্রতিনিধি তথা সিটি মেয়র, ৫৫ জন কাউন্সিলর নির্বাচনকে সবাই গুরুত্বের সাথে দেখেন। প্রায় ৬৫ লাখ নগরবাসীর ভাবনা অনেক। চসিক নির্বাচনের এপিঠ-ওপিঠ নানাদিক নিয়ে আলোচনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাটগাঁর মানুষজন অতিমাত্রায় রাজণিিত সচেতন। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে হরেক প্রশ্ন, সন্দেহ-সংশয় আর অভিযোগ এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের খুবই কম হারে উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়কে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীর ভোটারদের আলাপচারিতায় হতাশার সুর বেরিয়ে আসছে।

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যার যার কৌশলী হিসাব-নিকাশ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ভোটের রাজনীতির মাঠে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং মন জয়ের লক্ষ্যে শুরু হয়েছে প্রাথমিক মহড়া। গত ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে লালদীঘি ময়দানে ‘সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গীবাদ বিরোধী মহাসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ৪১টি ওয়ার্ড থেকে ব্যানার নিয়ে আসা দলীয় কাউন্সিলর, কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে এটি ছিল মূলত আওয়ামী লীগের চসিক নির্বাচনী শো-ডাউন। এর মধ্যদিয়ে দলের তৃণমূলে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়।

অন্যদিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে দলীয় কার্যালয় চত্বরে নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চসিকসহ স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, নির্বাচন বিএনপির জন্য বড় আন্দোলনেরই অংশ। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন। দলীয় মহাসচিবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার ফলাফলে চট্টগ্রাম মহানগরে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হবেন এমনটি প্রত্যাশা নেতৃবৃন্দের। বিশেষ করে আসন্ন চসিক নির্বাচনে মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়াও চট্টগ্রামে অন্যান্য ছোট দল-জোট চসিক নির্বাচন ঘিরে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে।

চসিক নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার লক্ষ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র পদে ৮ জন এবং কাউন্সিলর পদের জন্য প্রায় ৩শ’ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ঢাকায় ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান মেয়র ও দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, মহানগর নেতা মো. ইউনুছ। আওয়ামী লীগের মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে প্রার্থীজট অবস্থা তৈরি হতে চলেছে।

তাছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র বিশিষ্ট ব্যবসায়ী-সমাজসেবী এম মনজুর আলম এবং চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমও রয়েছেন জোরালো আলোচনায়। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত তিন দিন ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নামামুখী লবিং দেন-দরবার চলছে। চসিক মেয়র পদে মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে তা পুরোপুরি নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। বিকল্প প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান।

মেয়র ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর মিলিয়ে ৫৫ জন কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য বা প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশ কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রধান দুই দলের ভেতরে চলছে এ নিয়ে তোড়জোড়।

বিগত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র পদে বিজয়ী হন। ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আজম নাছির উদ্দীনসহ কাউন্সিলরগণ দায়িত্বগ্রহণ এবং প্রথম সভা করেন। সেই হিসাবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট বর্তমান চসিকের পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তি হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০ লাখ। ২০১৫ সালে চসিক নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ভোটার হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় নতুন প্রায় ১০ শতাংশ হারে ধরলে দেড় থেকে দুই লাখ ভোটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৪০ এএম says : 0
চসিক নির্বাচন ও কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে? কারচুপির অভিযোগ আসবেনা তো?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন