শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বেনাপোলের সরকারি মোটেল পর্যটকদের উপযোগিতা হারাচ্ছে : কমছে রাজস্ব

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা আর অনৈতিক অর্থ আয়ের কারণে দিনে দিনে রুচিশীল পর্যটকদের কাছে ব্যবহার উপযোগিতা হারাচ্ছে যশোরের বেনাপোল পর্যটন মোটেল। প্রতিনিয়ত এখানে কলগার্লদের দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মোটেলের ইউনিট ম্যানেজার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষকসহ কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় তালিকাভুক্ত কলগার্লরা এখানে নিয়মিত যাতায়াত করছে। এই ব্যবসার জন্য মোটেলকে ঘিরে একটি চক্রও গড়ে উঠেছে।
মোটেলের কক্ষ বরাদ্দ নিয়েও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। সঙ্গত কারণেই বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধী, ব-দ্বীপ আকৃতির বাহাদুরপুর বাঁওড়, পুটখালী বিলের নৈসর্গিক দৃশ্য, হরিচাঁদ ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রম, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টের রোমাঞ্চকর অনুভূতি উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা সরকারি মোটেল বাদ দিয়ে বেসরকারি হোটেল ও মোটেল ব্যবহার করছেন। একই কারণে সরকারি এই মোটেল ব্যবহার করতে পারেন না দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলে আসা দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি শাখা বেনাপোল পর্যটন মোটেল। এখানে একটি এসি স্যুইট রুম এক দিনের জন্য ভাড়া নেওয়া হয় তিন হাজার আটশ’ টাকায়। আর এসি ও ননএসি রুমের ভাড়া যথাক্রমে দুই হাজার দুইশ’ ও দেড় হাজার টাকা। ডরমেটরিতে নেওয়া হয় ৩০০ টাকা করে। এছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের জন্যে নেওয়া হয় ইচ্ছেমত টাকা।
প্রতিটি রুমে টিভি, পিএবিএক্স টেলিফোন, গরম পানিসহ আধুনিক সব সুযোগসুবিধা রয়েছে। কিন্তু এতো সব সুবিধা থাকার পরেও বর্তমানে এই মোটেলে পর্যটকরা অবস্থান করছেন না। মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা একটি চক্র বর্তমানে পর্যটকদের থাকার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। এই চক্রের সদস্যরা মোটেলে চাহিদামত কলগার্ল সরবরাহ করে।
এর পেছনে বর্তমান ইউনিট ব্যবস্থাপক এসএম মুজাহিদুল আলম ও হিসাবরক্ষক আবুল কালাম মোল্লা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন! ব্যবস্থাপক তার কাছের সুবিধার্থে হিসাবরক্ষককে মেহেরপুর থেকে এই শাখায় নিয়ে আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোটেলের একজন কর্মচারী জানান, মোটেলে এক দিনের কক্ষ ভাড়া নিলে ২৪ ঘণ্টা সেই ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কলগার্ল ব্যবহার করা ব্যক্তিরা কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান। তারপর ওই কক্ষ অন্য আরেকজনের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। এভাবে এক কক্ষ দিনে একাধিকবার ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু খাতা-কলমে ভাড়া দেখানো হয় একবার।
অন্যদিকে, কোনো ব্যক্তি একাধিক কক্ষ ভাড়া নিলে মাত্র একটি কক্ষ ভাড়া দেখিয়ে বাকি কক্ষের ভাড়া আত্মসাৎ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কলগার্লপ্রতি খরিদ্দারদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। তবে স্কুল-কলেজের ছাত্রী কলগার্ল হিসেবে সরবরাহ করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এই টাকার মধ্যে মোটেলের অভ্যর্থনাকারী এক হাজার টাকা ও দায়িত্বে থাকা বেলম্যান ৫০০ টাকা পায়। বাকি টাকা কলগার্লের। আর ম্যানেজার খরিদ্দারের কাছ থেকে বাড়তি পাওনা আদায় করে।
সূত্রের দাবি, এই দুই কর্মকর্তা ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাকের জন্য সরকারের দেওয়া বরাদ্দে ৮২ হাজার ৯১৭ টাকার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করেন।
বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক দায়িত্ব গ্রহণের পর মোটেলের আয় কমে এসেছে প্রায় অর্ধেক। এর আগের ব্যবস্থাপকের সময় ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোটেলের আয় হয় সাত লক্ষাধিক টাকা।
পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক এসএম মুজাহিদুল আলমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রসঙ্গে। মোটেলে অনৈতিক কোনো কাজ হয় না দাবি করে তিনি বলেন, সবটাই গুজব। আমি ভালোভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি। ৮ মাস দায়িত্বে আছি ভদ্রলোকদের রুম দেবার চেষ্টা করেছি। বাকিটা আপনাদের বিবেচনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কোনো গেস্ট যদি কাউকে নিয়ে এসে স্ত্রী পরিচয় দেয়, তবে কিছু বলার থাকে না। কিন্তু আমার তীক্ষè নজর থাকেÑকোনো অসামঞ্জস্য দেখা দিলে বা সন্দেহের উদ্রেক হলে আমি তাদের মোটেলে ঢুকতেই দিই না।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন