শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

বাংলাদেশের চিত্রকলা

এনাম রাজু | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম


যার সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই সাধারণত তাকেই শিল্প বলি। কিন্তু এই সংজ্ঞাহীন শিল্পের সমাজ গঠন ও পরিবর্তনে যে কতোটা উপযোগী ভূমিকা পালন করে তা এতোদিনে মানুষ ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছে। কেননা প্রতিটি মহৎ শিল্পের প্রধান উপজীব্য বিষয়ই যে মানুষ ও প্রকৃতির যাবতীয় উপাদান ও উপকরণ। যদিও পূর্বেই বলেছি, শিল্পের সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবুও জেনে নেই শিল্প সম্পর্কে কয়েকজন মণীষীর মতামত, রবীন্দ্রনাথ শিল্প প্রসঙ্গে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন- ‘চিত্রশিল্প দুই প্রকারের আছে। এক - অনুভাবপূর্ণ মুখশ্রী ও প্রকৃতির অনুকৃতি, দ্বিতীয়- যথাযথ রেখা-বিন্যাসের দ্বারা একটা নেত্ররঞ্জক আকৃতি নির্মাণ করা। কেহই অস্বীকার করিবেন না যে, প্রথমটি উচ্চতম শ্রেণীর চিত্রবিদ্যা। আমাদের দেশে শালের উপরে, নানাবিধ কাপড়ের পাড়ে, রেখাবিন্যাস ও বর্ণবিন্যাস দ্বারা বিবিধ নয়নরঞ্জক আকৃতিসকল চিত্রিত হয়, কিন্তু শুদ্ধ তাহাতেই আমরা ইটালীয়দের ন্যায় চিত্র-শিল্পী বলিয়া বিখ্যাত হইব না।’ জর্জ সান্টায়ানার মতে, ‘শিল্পকলার কাজ হলো মানুষকে আনন্দ দেয়া›। টলস্টয় মতে, ‘শিল্পকলা হবে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়, হবে নতুন সৃষ্টি, হবে সুখবোধ্য’। স্যার কেনেথ ক্লার্ক আধুনিক চিত্রকলার তিনটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন, ১. শুদ্ধতম বিমূর্তরূপ ২. কম্যুনিকেশন গুণ ৩. চিত্রে বিজ্ঞানের বর্ধিত ব্যবহার। আমরা চিত্রকলা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি, এটা এমন একটা মাধ্যম যা সকল শ্রেণী এবং গোত্রের মানুষের কাছে খুব দ্রুত বোধগম্য বিষয়। সেই সাথে সকলের মাঝে খুব সহজেই একটা যোগাযোগের ভীত তৈরি করে দিতে পারে। 

এখন আসা যাক বাংলাদেশের চিত্রকলার সংক্ষিপ্ত আলোচনায়- ১৯৪৭ সালের পূর্বকালে এ অঞ্চলের চিত্রকলার অন্যতম ও প্রথম চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন পরে সফিউদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান। পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন ঢাকা আর্ট স্কুলের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীরা এ দেশে চারুশিল্পের নতুন দিক উন্মোচন করেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশের শিল্পাঙ্গনে আসে নতুন ধারা। এই ধারায় চল্লিশের দশকের শেষে গড়ে ওঠে ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি শিল্পীসঙ্ঘের আর্বিভাব ঘটে। উল্লেখযোগ্য, ‘স্কেচগ্রুপ, ‘সেঁজুতি’, ‘ফাইভ ফিংগারস, ‘আর্ট গ্রুপ, ‘ঢাকা আর্ট সার্কেল, এবং ‘সময়’।’
তদানীন্তন পূর্ব পাকিন্তানের চারুশিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান- চারুকলা ইনস্টিটিউট)। আধুনিক চিত্রকলা পাঠের প্রথম প্রতিষ্ঠানও এটি। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা থেকে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানে পাঠ নিতে এসেছেন। ১৯৪৮ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষালয়টি আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাসের একটি অন্যতম অঙ্গ। এ প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছে কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী প্রমুখ শিল্পীর। অন্যদিকে স্কেচ গ্রুপের সদস্যরা হলেন কাইয়ুম চৌধুরী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, হাশেম খানসহ আরও অনেকে। এ সঙ্ঘের শিল্পীরা মূলত চেয়েছেন ইতিবাচকতায় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে। এদিকে কোনো সঙ্ঘের সদস্য না হয়েও স্বমহিমায় উজ্জ্বল শিল্পী মনিরুল ইসলামের অবদান বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। তিনি নিসর্গ বিশ্লেষণে ও মানুষের প্রতিক্রিয়া ফুটিয়ে তোলার প্রয়াসে সৃষ্টি করেছেন নতুন শিল্পভাষা। অপরদিকে শহীদ কবীরের কাজে উপস্থাপিত হয়েছে অবয়বধর্মী ছবির নতুন ভাবনা। তিনি ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি এঁকেছেন ক্যানভাসে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির যে জোরালো শক্তির উন্মেষ ঘটে, সেখানে গেরিলা যোদ্ধা চিত্রায়ণে শিল্পী শাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের অবয়বধর্মী রূপককে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিস্তত করেছেন। তাঁর চিত্রকর্মে এমন একটি শিল্পভাষা প্রকাশ পেয়েছে যাকে চিত্রকলার অভূতপূর্ব নিরীক্ষা বলে আখ্যায়িত করা যায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের চিত্রকলায় চট্টগ্রামের চিত্রশিল্পীরা অন্যতম ভূমিকা রাখেন।
এদেশের আধুনিক শিল্পীদের বেশির ভাগই পাশ্চাত্য-আধুনিক ধারার। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীরা বিশ্ব চিত্রশিল্পীদের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন