বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

এক আলোকিত মানুষের গল্প

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

শেষ
হাজি সাহেব (রহ.)-এর কাছে অনবরত ছয় মাস লেগে থাকেন আত্মশুদ্ধির কাজে। শেষমেষ তার আধ্যাত্মিকতা এতো বেশিই বৃদ্ধি পেয়েছিলো, যেনো গুরু-শিষ্যের কোনো পার্থক্য রইলো না। যা হজরত হাজি সাহেব (রহ.) অনুধাবন করতে পেরে বললেন-‘তুম ঠিক মেরে তরিকা পর হো।’ তখন থেকে কোনো সমস্যার কথা জানিয়ে কোনো ব্যক্তি হাজি সাহেবের কাছে এলে বলতেন-‘ঐ আমার শিষ্যের (আশরাফ আলীর) কাছে যাও। তার কাছ থেকে সমাধান করে নাও।’
হাজি সাহেব (রহ.)-এর কাছে দীর্ঘ ছয় মাস অবস্থান করার পর হজরত থানবি (রহ.) দেশে ফেরার কথা ভাবলেন। তখন হাজি সাহেব (রহ.) তাকে দুটি উপদেশ দিলেন- ১. তুমি কানপুরেই দীনি খেদমতে আত্মনিয়োগ করবে। যদি সেখানে কাজ না হবার আশঙ্কা থাকে, তাহলে থানাভবন ফিরেই দীনের খেদমতে লেগে যাবে। ২. সদা সর্বদা রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করবে।
কর্মজীবন: তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে জাতীয় খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। হজরত হাজি সাহেব (রহ.)-এর অসিয়তের পর কানপুরে ‘মাদরাসায়ে ফয়জে আম’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে প্রধান পরিচালকের পদ শূন্য ছিলো। কারণ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হজরত আহমদ হাসান কোনো এক কারণে নিজ পদ থেকে ইস্তফা দেন। তখন তাঁর ব্যক্তিত্বের খুবই প্রভাব ছিলো। তাঁর উপস্থিতিতে হজরতের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অন্য কারোর হিম্মতও ছিলো না। হজরত থানবি (রহ.)-এর কাছে যখন এ মাদরাসা থেকে শূন্য পদের জন্য আবেদন পৌঁছুলো, তিনি তখন মুরুব্বিদের পরামর্শে সম্মতি জানালেন। তবে কানপুরে পৌঁছার পর তাঁর কিছু অসুবিধে দেখা দিলো। কিন্তু মহান আল্লাহর অসীম রহমে সমস্ত সমস্যা কেটে গেলো। এভাবে তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক মাস পেরোবার পর মাদরাসায় অন্যান্যদের থেকে কিছু সমস্যা সামনে আসে। তাই তিনি ইস্তফাপত্র পেশ করে থানাভবন চলে যাবার কথা ভাবেন। কিন্তু রওনা হবার আগে হজরত শাহ ফজলুর রহমান মুরাদাবাদি (রহ.)-এর খেদমতে উপস্থিত হন। কানপুরে তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব ছিলো সর্বমহলে সমাদৃত। তাই কানপুরবাসী ছেড়ে আসায় বড়ই মর্মাহত হলো। মুরাদাবাদ থেকে নিজ এলাকার দিকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন, এমন সময় কানপুরের জনগণ তাকে কানপুরে থাকার জন্যই বাধ্য করলো। ফলে আবার তিনি কানপুরেই অবস্থান করবার কথা ভাবলেন। তিনি সেখানকার জামে মসজিদে আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করলেন। নাম রাখলেন ‘জামিউল উলুম’। যেখানে আজও শতো শতো ছাত্রকে দীনিজ্ঞান দেওয়া হয়। হজরত থানবি (রহ.) এ প্রতিষ্ঠানে সুদীর্ঘ ১৪ বছর কাটান। এ দীর্ঘ সময়ে তার অসংখ্য যোগ্য শিষ্য তৈরি হলো। যারা তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতেন। অপরদিকে কানপুরে অবস্থান করতে করতে একটা সময় তার ভিন্ন চিন্তা এলো। তখন তিনি সূ²পদ্ধতিতে সেখান থেকে থানাভবন ফিরে আসেন।
খানকায়ে ইমদাদিয়ায় যখন: হজরত হাজি সাহেব (রহ.)-এর উপদেশমতো হজরত থানবি (রহ.) ১৩১৫ হিজরিতে থানাভবনে ‘খানকায়ে ইমদাদিয়া’য় অবস্থান করতে লাগলেন। একে একে ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যদিয়ে বেশ ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি হতে লাগলো। ‘খানকায়ে ইমদাদিয়া’ পরিণত হলো অন্তরের ব্যাধিগ্রস্থ লোকদের চিকিৎসাকেন্দ্রে। আমজনতা থেকে আরম্ভ করে শিক্ষিত-অশিক্ষিত সর্বমহলের লোকজন ছুটে আসতে লাগলো। এভাবে লোকজনের ব্যাপক জমায়েত হতে লাগলো। ফলে তখনকার শাসনব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ ছোট্ট শহর ‘থানাভবন’কে রেলস্টেশন ঘোষণা করতে বাধ্য হলো। শিষ্যদের সংখ্যা শতো শতো নয়, লাখ ছাড়িয়ে গেলো। উল্লেখ্য, তার শুধু মুজাজ (বাইয়াতের অনুমতিপ্রাপ্ত) শাগরিদদের সংখ্যা দেড়শোরও অধিক। যাদের মাধ্যমে তার বরকত আজও পৃথিবীময়। তার মেহনতের সীমা এবং প্রভাব শুধু পাক-ভারতে নয়, হেজাজ-আফ্রিকা সবখানেই বিরাজমান। তার কারণেই একসময় ভারত মুসলিম-জনবসতিতে রূপ নেয়।
ইন্তেকাল: ১৭ রজব ১৩৬২ হিজরি রাতে এ মহামনীষী রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর ৩ মাস ১০ দিন। সকাল হতে না হতেই সবাই তাঁর বাড়ি এসে পৌঁছোন। লাখো আশেকের সামনে বের করা হয় তাঁর লাশ। কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জানাজা আদায় করা হয়। সবশেষে ‘কবরস্তান-ই ইশক বাজান’ নামক তাঁর ওয়াকফকৃত কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন