কিডনির রোগগুলোর মধ্যে স্টোন বা পাথর হওয়া অন্যতম। কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নির্ভর করে কিডনির কোথায় স্টোন আছে এবং কীভাবে আছে। স্টোনের আকার আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পাথর খুব ছোট হলে সেটি কোনো ব্যথা ছাড়াই দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে সুপ্তভাবে থাকতে পারে। স্টোনটি বড় হলে বা বড় হতে শুরু করলে এটি কিডনির ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
এ পাথর কখনো মূত্র গ্রস্থি, কিডনী, মূত্রনালী, আবার কখনো মূত্র থলিতে এসে জমা হয়। ফলে বিভিন্ন সমস্যাসহ প্রস্রাব বন্ধ বা অবরোধ হতে পারে।
কিডনীর প্রধান কাজ হলো শরীরের রক্ত থেকে ময়লা আবর্জনা ও পানি প্রসাব আকারে শোধন করে বের করে দেয়া। দুটি ইউরেটারের মাধ্যমে প্রসাব মূত্র থলিথে এসে জমা হয়। তারপর প্রয়োজন মত বেরিয়ে আসে। ময়লা বেরিয়ে না এসে জমে শক্ত হতে থাকলেই এক পর্যায়ে তা পাথর আকারে দেখা দেয়।
সাধারনত পাথর যে কারনে হয়ঃ কিডনীতে অনেক রকম স্টোন হতে পারে, যেমন ইউরিক স্টোন, স্ট্রভাইন স্টোন, সিস্টিক এবং ক্যালসিয়াম স্টোন হতে পারে।
যে খাবারে ইউরিয়া বা ইউরিক এসিড বেশি থাকে এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার বেশী খেলেও কিডনী সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা প্রতিনিয়ত পান-চুন খায় তারাও ক্যালসিয়াম খাচ্ছে। এসব রুগীদের ইউরেট বা ক্যালসিয়ামের পাথর হয়। যে কোন সংক্রামক রোগ যদি মুত্রতন্ত্র আক্রমন করে, শরীর হতে অতিমাত্রায় পানি বের হওয়ার ফলে, সর্বপরি বংশে থাকলেও এটি হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন কিডনীর পাথর আছেঃ বার বার প্রস্রাবের বেগ, ব্যথা কিডনী বরাবর কোমরে শুরু হয়ে নিচে কুচকির দিকে, পেটে ও বুকেও প্রসারিত হতে পারে।
কুচকী, অন্ডকোষ প্রভৃতি স্থানে বেশী ব্যথা হতে পারে। যে কোন ভারী জিনিস তুলতে গেলে বা রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ব্যথা হতে পারে। অন্ডকোষ উপরের দিকে টেনে ধরার মত অনুভব হতে পারে। কখনোও হঠাৎ ব্যথা বা সব সময় ব্যথা থাকতে পারে।
বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। হিক্কা, কপালে ঘাম, নাড়ী দ্রুত ক্ষীণ, দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত। সর্বদাই প্রস্রাব করার ইচ্ছা থাকে কিন্তু প্রসাব বের হয় না। প্রসাব ফোটা ফোটা বের হয়। তলপেটে ব্যথা হয়। প্রস্রাব পুঁজ-রক্ত মিশ্রিত থাকতে পারে, রক্ত প্রস্রাব, প্রস্রাব ধোঁয়ার মত দেখায়, দু তিন নালে প্রসাব হতে পারে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোন কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে রোগী বোধ করে পাথর যেন নড়া চড়া করে। ছোট বাচ্চারা প্রস্রাব করতে গিয়ে কান্না করতে পারে। যথা সময়ে চিকিৎসা না নিলে এর জটিলতা কিডনীর প্রদাহ, শরীর হাত- পা ফুলে যেতে পারে। মূত্র অবরোধ হয়ে যন্ত্রনায় অস্থির ও অজ্ঞান হতে পারে।
যা করতে হবে আপনাকে ঃ পানি পানের অভ্যাস রাখতে হবে প্রয়োজন মতো। বেদনা উপশমের জন্য হালকা গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। হাটা হাটিতে বা ঝাঁকিতে অনেক সময় ছোট পাথর নেমে আসতে পারে।
করনীয়ঃ রোগ নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। চুন-সুপারি খাবেন না। অ¤ø উৎপাদি খাদ্য, মদ্যপান, মাংস, গুরুপাক খাদ্য বর্জন করবেন। পেইনকিলার দীর্ঘদিন সেবন না করা উওম ।
হোমিওপ্রতিবিধান ঃ রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসককে রোগীর সব লক্ষণ নির্বাচন করে চিকিৎসা দিতে পারলে পিত্ত পাথরের রোগীর চাইতে কিডনী পাথর রোগীর চিকিৎসা দেওয়া অল্প সময়ে সম্ভব।
হোমিও চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথিতে কিডনীর স্টোনের জন্য অনেক মেডিসিন আছে। তবে ঔষধ গুলো এলোপ্যাথির ন্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রয়োগ করা চলে না।
যেমন, লাইকোপোডিয়াম, লিথিয়াম কার্ব, সার্সাপেরিলা, থ্যালাপসি- বার্সা, এপিজিয়া, ক্যানথারিস ও ক্যালকেরিয়া সহ অনেক মেডিসিন লক্ষনের উপর আসতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে মেডিসিন ব্যবহার করলে রোগ আরো জটিল আকার পৌছতে পারে।
ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি,
কো-চেয়ারম্যান: হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
drmazed96@gmail.com
সেল-০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন