শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কথা ও দুর্নীতিতেই সরকারের উন্নয়ন হয়েছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:০৫ পিএম | আপডেট : ৬:২২ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

রাষ্ট্র ও সমাজের সবখানেই এখন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা নেই। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে। নারী-শিশু ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরটি ঘোষণা করেছেন তাঁর পিতার নামে। মানুষের ধারণা ছিল তাঁর পিতার সম্মানে হলেও মানুষকে একটু স্বস্তি ও নিরাপত্তা দেবেন। বন্ধ করবেন ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট আর টাকা পাচারের মহৌৎসব। বন্ধ করবেন বিরোধী প্রতিপক্ষের প্রতি কুৎসা রটানো। কিন্তু প্রতিদিন হতাশার খবর ছাড়া আর কিছুই নেই। বরং দেশজুড়ে নানা অপরাধের মধ্যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষিতা হচ্ছে নারী ও শিশু। অপরাধীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীনদের লোক। দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার-ব্যাংক ডাকাতি, অনাচার-অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নৈতিক কিংবা সৎ সাহস কোনটিই এই সরকারের নেই। কারণ, যেভাবে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে এই সরকার সেতু কিংবা ভবন নির্মাণ করছে ঠিক তেমনি এই সরকারটিও বারবার জন্ম নিচ্ছে প্রশাসনের সহায়তায় রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট ছাড়া। যে সরকারের জন্মই অবৈধ ও অনৈতিক তাদের দ্বারা সুশাসন সম্ভব নয়। তাদের দ্বারা উন্নত ও মানবিক সমাজ সম্ভব নয়। তাহলে কি কথাই এই সরকারের উন্নয়ন? কাদের উন্নয়ন কিংবা কাদের জন্য উন্নয়ন? আসলে পর্বত-প্রমান দুর্নীতিই এদের উন্নয়ন। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিলেটে সুরমা নদীর ওপর হযরত শাহজালাল তৃতীয় সেতুর প্যানের এক্সপানশন জয়েন্টে লোহার পাতের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে? কারণ এখানে সেতু নির্মাণ মুখ্য নয়। এখানে সেতু নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করাই হচ্ছে মুখ্য উদ্দেশ্য। কারণ, গত এক দশকে দেশের সকল লুটেরা-দুর্নীতিবাজরা দেখেছে, এই সরকারের শাসনামলে চলছে, দুর্নীতির উন্নয়ন আর উন্নয়নের নামে দুর্নীতি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পূর্বে দুটো ইশতেহার থাকে, একটি ঘোষিত আরেকটি অব দি রেকর্ড। ঘোষিত ইশতেহারে ভাল ভাল কথা থাকলেও ক্ষমতায় আসার পর সেই ইশতেহারটির বদলে অব দি রেকর্ড ইশতেহারের বাস্তবায়ন দেখা যায়। সেটি হলো-কর্তৃত্তবাদী বাকশালী শাসন, গণতন্ত্র হরণ, বিরোধী দল নিধন এবং অর্থনীতি লুন্ঠন। এ কারণে গত একদশকে নয় লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আটশো দশ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো হয়ে পড়েছে দেউলিয়া। সরকারের নীরবতাই প্রমাণ করে ডাকাতির সাথে তারা জড়িত।

রিজভী বলেন, খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ তিন জন গ্রাহক যদি কোনও কারণে ঋণ খেলাপি হন তাহলে দেশের ২১ ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। আর মাত্র ৭ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এবং ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত দেশের জনগণের সম্পদ হাতে গোনা কয়েকজন ব্যাক্তির কাছে জিম্মি। বিদেশে রাজকীয় জীবনে শতাধিক ব্যাংক লুটেরা। পরিস্থিতি এমন যে-ব্যাংক থেকে টাকা মেরে দেয়া সবচেয়ে সহজ। এই উৎসবে মেতেছিলেন বেশ কয়েকজন। হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে তারা এখন লাপাত্তা। যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বিনা বাধায়। করছেন রাজকীয় জীবন-যাপন। ব্যাংক থেকে টাকা মেরে বিভিন্ন সময় বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন শতাধিক লুটেরাকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের টাকা তুলতে না পেরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এসব ঋণকে মন্দ ঋণ (খেলাপি) ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি এদের কারণে একটি অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন। বিদেশে করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান আছে কানাডাতেও। কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফজাল হোসেন। এমন আরও অনেকে ব্যাংকের টাকা মেরে ব্যাংকক, দুবাই, অস্ট্রোলিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কানাডায় পালিয়েছেন স্ক্র্যাপ (জাহাজভাঙা) ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু ওরফে জি বি হোসেন। দুদক তার পাসপোর্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেও তাকে আটকানো যায়নি। গাজী বেলায়েত এখন কানাডার টরেন্টোয় থাকেন। অগ্রণী ব্যাংকের ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ও বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন এর মালিকরা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন এরশাদ ব্রাদার্সের মালিকরা। মালিকরা কানাডার টরেন্টোয় বাদশাহী-জীবন যাপন করছেন।

সরকারের সবটাই শুভঙ্করের ফাঁকি মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মহালুটপাট হরিলুটের কোন প্রতিকার বা প্রতিরোধ হচ্ছে না। কোন বিচার বা শাস্তিও হচ্ছেনা। দলকানা দুদক এসব দেখে না। কারণ এদের গোড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রসারিত। তারা ক্ষমতায় বসেছেন কেবল লুটেপুটে-চেটেপুটে খেতে। দেশে মানুষের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে একমাত্র নিরাপদে জনগণের ভোট ডাকাতি ছাড়া, আর খুন গুম ছাড়া দেশে কিংবা বিদেশে কোথাও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিএসএফ বাংলাদেশিদের হত্যা করলেও সরকার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেনা। প্রতিদিন সহায় সম্বল হারা মানুষ প্রবাস থেকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরছে, কিছুই করতে পারছেনা সরকার। আবার অনেকে উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশ যেতে গিয়ে ডুবে মরছে সাগরে।

বানিজ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন-পিঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই-বৈশাখ গেল, জৈষ্ঠ্য গেল, দেখতে দেখতে পৌষ-মাঘ সবই গেল, কিন্তু পিঁয়াজের দাম কমলো না। এখন শীতকাল, পিঁয়াজসহ শাকসবজীর সময়, অথচ শুধু পিঁয়াজই নয়, সকল শাকসবজীর দামই লাগামহীন ঘোড়ার মতো মানুষের নাগাল থেকে ছুটে চলছে। শাকসবজী ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে। অথচ মধ্যরাতের সরকারের বানিজ্যমন্ত্রী নি:সঙ্কোচে বললেন, পিঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের বক্তব্য-বিবৃতিতে মানুষ এখন অতিষ্ঠ। বাস্তবতা হলো, এই স্বাধীন দেশে এখন জনগণ পরাধীন। তাই জনগণের স্বাধীনতার জন্য আজ আমাদের শ্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Bully ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:১২ পিএম says : 0
The subject "Political Science" is a destroyer method in Bangladesh.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন