মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পরিবার যেন বোঝা না হয় সেজন্যই খুন

বারডেমের চিকিৎসক হত্যায় গ্রেফতার নেই

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর দক্ষিণখানে মা ও দুই শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্বামী রাকিব উদ্দিনকে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারনা, স্ত্রী মুন্নী বেগমকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং দুই সন্তানকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর পালিয়ে গেছেন রাকিব উদ্দিন। অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত মাতুয়াইলের ফ্রেন্ডশীপ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ডা. মোবারক করিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন বা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, গত তিন-চার দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ৫তলা ভবনের চতুর্থ তলার ওই বাসাটি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ পায় পুলিশ।

ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ্য করা হয়েছে, দক্ষিণখানে নিহত মুন্নী বেগমের মাথায় হাতুড়ির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া মেয়েকে গলা টিপে এবং ছেলেকে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয়েছে। গতকাল ময়না তদন্ত শেষে চিকিৎসকরা এ তথ্য জানানা। এদিকে, মাতুয়াইলে ডা. মোবারক করিম হত্যার ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান রোডস্থ কেসি স্কুলের পেছনের ৮৩৮ নম্বর বাসায় তিনটি লাশের খবর পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিটিসিএলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিনের স্ত্রী মুন্নী বেগম (৩৭), তাদের ছেলে ফারহান ভুঁইয়া (১২) ও মেয়ে লাইবা ভূঁইয়া (৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে ওই কর্মকর্তাকে এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে এবং স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে তিনি পালিয়ে গেছেন।
তিনজনের ময়না তদন্ত শেষে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক একে এম মাইনুদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, লাশ তিনটির উপরিভাগ বেশি পচনশীল ছিল। নারীটির মাথার পেছনে আঘাত পাওয়া গেছে। এছাড়াও দুটি শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, লাশ তিনটি থেকে ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হবে। তবে আলামত দেখে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা একজনই ঘটিয়েছে।
মুন্নী রহমানের চাচাতো ভাই মামুনুর রশীদ বাবু সাংবাদিকদের জানান, আর্থিক চাপে পড়ে এমন ঘটনা হয়তো ঘটিয়েছেন নিহতের স্বামী রকিব উদ্দিন। এছাড়া তিনি দাবি করেছেন, তাদের হত্যার আগে একটি নোট লিখে গেছেন নিখোঁজ রকিক উদ্দিন। সেখানে তিনি লিখেছেন, তার পরিবার যেন কারো ওপর বোঝা না হয় এজন্য তাদের তিনি হত্যা করেছেন। নিখোঁজ রকিব উদ্দিনকে কোনো এক রেল লাইনের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাবে বলে লিখে রেখে গেছেন। এদিকে, এ ঘটনার পর বাসার বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। যদিও পাশের ভাড়াটিয়ারা জানান তেমন পারিবারিক কলহ ছিল না পরিবারটিতে। তবে গত কয়েকদিন ধরে নিহত স্ত্রী মুন্নী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।

ডিএমপির উত্তরা ডিভিশনের এডিসি হাফিজুর রহমান বলেন, নিহত নারীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। নিহত নারীর স্বামীকে পাওয়া গেলে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, পলাতক স্বামীকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গন্ধযুক্ত লাশ। দুর্গন্ধ পাওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। তিনজনই হত্যার শিকার বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তিন-চার দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়।
দক্ষিণখান জোনের সহকারী কমিশনার এফএম ফয়সাল জানান, প্রকৌশলী রকিবউদ্দিন কিছুদিন আগে বিটিসিএলের প্রধান কার্যালয় থেকে উত্তরায় বদলি হন। কিন্তু গত তিনদিন ধরে রকিবের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আত্মীয়-স্বজন এই পরিবারের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না। তবে রাকিবউদ্দিনকে পাওয়া গেছে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

এদিকে, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক ডা. মোবারক করিম হত্যার ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই রুহুল আমীন বাদি হয়ে ওই মামলা দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন- মাতুয়াইলের ফ্রেন্ডশীপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক জামাল হোসেন ও তার সহযোগি মামুন আহমেদ। তবে তারা দু’জনই পলাতক। নিহতের স্বজনরা জানান, ফ্রেন্ডশীপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক জামাল হোসেনের সাথে লেনদেন সংক্রান্ত ঝামেলা ছিল। ওই ঝামেলা মিমাংসার জন্য গত বৃহস্পতিবার মোবারক করিমকে ডেকে নিয়ে যান জামাল। পরে ঝামেলা মিমাংসা না হওয়াতে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, ওই হত্যাকান্ডকে পুলিশ বলছে অপমৃত্যু। নিহতের পিঠে ও কোমরে আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেলেও সুরতহাল প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো তৎপর নয়।

লেনদেন সংক্রান্ত ঝামেলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফ্রেন্ডশীপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের এমডি ফেরদৌস আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মোবারক হোসেনের সাথে হাসপাতালের পরিচালক জামাল হোসেন ও মামুন আহমেদের লেনদেন সংক্রান্ত একটি ঝামেলা ছিল। তবে তারা দুইজনই পলাতক রয়েছে। তাই সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাসির উদ্দিন জানান, আসামিদের গ্রেফতার করতে তাদের বাড়ি, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তারা যাতে দেশের বাহিরে না যেতে পারে সে ব্যাপারেও সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে খুব দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে সঠিক তথ্য জানানো হবে। এর আগে গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইলের ফ্রেন্ডশীপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালকের রুম থেকে ডা. মোবারক করিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার রাতেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরে গতকাল বাদ আছর মোবারকের গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত ডা. মোবারক করিম (৩৪) ভোলা জেলার লালমহন উপজেলার বাসিন্দা। তিনি রাজধানীর দক্ষিণ ধনিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সাত মাস আগে তিনি বিয়ে করেছেন বলে জানা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
পারভেজ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৪৫ এএম says : 0
এগুলো কোন কথা হলো ?
Total Reply(0)
কামাল ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৪৬ এএম says : 0
রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন