ঘরের ভেতরে মাচায় সারি সারি হাঁড়ি। সেই হাঁড়িতে তৈরি হয় শিদল শুটকি। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় শিদল শুটকির গ্রাম খ্যাত পেন্নাই। গ্রামের বাতাসেও পাওয়া যায় শিদল শুটকির ঘ্রাণ।
পেন্নাই গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার শিদল শুটকি ব্যবসা করে আসছে। পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ এই ৬ মাস শিদল শুটকি ব্যবসায়ীদের স্বর্ণকাল। বাজার কিংবা হাওর থেকে মাছ সমস্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে হাঁড়িতে রাখা হয়। ২ মাস পর সেই মাছ শিদলে পরিণত হয়। গ্রামের ব্যাবসায়ীরা এসব শিদল শুটকি বিক্রি করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুরের মতলব, কচুয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে।
স্থানীয়রা জানান, শিদল শুটকির কারিগর হচ্ছেন পেন্নাই গ্রামের মো. খোরশেদ আলম। তার দাদা অছুম উদ্দিন ব্যাপারীও ছিলেন শিদল ব্যবসায়ী। তিনি শিদল নিয়ে যেতেন স্থানীয় বাজারে। শুরুর দিকে তেমন বিক্রি হতো না। তবে ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তা পায়। অছুম উদ্দিনের মৃত্যুর পর ছেলে আবদুল খালেক শিদল তৈরি ও বিক্রির এই ধারা অব্যাহত রাখেন। খোরশেদ আলম ছাড়াও একই গ্রামের ২০টি পরিবার শুঁটকির ব্যবসায় যুক্ত। সিলেট, সৈয়দপুর, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রোদে শুকানো পুঁটি মাছ এবং সেই মাছের পেটির তেল কেনা হয়। প্রতিটি হাঁড়িতে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি শুকনো মাছ রাখা হয়। বিক্রির সময় প্রতি হাঁড়িতে ৩৫ থেকে ৪২ কেজি শিদল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি শিদল তৈরি করতে চলতি বছরে খরচ হচ্ছে ১৮০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
খোরশেদ আলম বলেন, তিনি চলতি বছরের পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ হাঁড়িতে শিদল তৈরি করবেন। গত বছর তিনি ১ হাজার ৭০০ হাঁড়ি শিদল তৈরি করেছিলেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুরের মতলব, কচুয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবাসহ আশপাশের উপজেলার ব্যবসায়ীরা পেন্নাই গ্রামে এসে শিদল কিনে নিয়ে যান। পেন্নাই গ্রামের বাসিন্দা হাসান হায়দার, মো. ইউনুস ও নুরুজ্জামান বলেন, অতীতে বর্ষা মৌসুমে দাউদকান্দি উপজেলার খাল, বিল ও নদীতে প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। এসব মাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ শেষে অনেক মাছ পচে নষ্ট হতো। অনেকে অবশিষ্ট মাছ রোদে শুঁকিয়ে শিদলসহ রকমারি শুঁটকি তৈরি করতেন। বর্তমানে খাল-বিল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ এলাকায় পুঁটি মাছ তেমন পাওয়া যায় না।
শিদল শুঁটকি কিনতে আসা কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের ব্যবসায়ী নুরুদ্দিন বলেন, তাদের দোকানে প্রতি মাসে দেড় হাজার কেজি পর্যন্ত শুঁটকি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জন শিদল কেনেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন