বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চিরকুটের সূত্র ধরে তদন্তে পুলিশ

ফলোআপ : দক্ষিণখানে মাসহ দুই সন্তান খুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় মা ও দুই শিশু হত্যার পলাতক আসামি প্রকৌশলী রকিব উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে গ্রেফতার করতে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও রকিব উদ্দিনের ঋণ ৬০ লাখ টাকা রয়েছে। অনেক দিন ধরে ঋণ পরিশোধ করে না পারায় তিনি এমন কান্ড ঘটনাতে পারেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়ার চিরকূটের সূত্র ধরেই পুলিশ মাঠে কাজ করছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ জানায়, নিহত মুন্নির ভাই মুন্না রহমান বাদি হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে পলাতক রকিব উদ্দিন আহমদকে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে রকিবের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাতশালা এলাকায়। তিনি আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া ও নাজিরা আক্তারের ছেলে। তবে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, রকিবের খোঁজে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকে সিসিটিবির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা ওই মামলার ছায়া তদন্তে নেমেছে। ইতোমধ্যে র‌্যাব সদস্যরা নিহতদের স্বজন ও পলাতক আসামির স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। এ সময় রকিব উদ্দিন আহমদের ৬০ লাখ টাকা ঋণের খবর পাওয়া গেছে।

র‌্যাব- ১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল জানান, রকিব উদ্দিনকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ ওই এলাকায় দেখা গেছে। এরপর থেকে তাকে আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি। এমনকি এরপর পর থেকে তার ফোনও বন্ধ রয়েছে। ঘটনার আলামত ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তিনজনকে হত্যা করে রকিব উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তবে তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে গ্রেফতার ও তার অবস্থান সনাক্তের চেষ্ঠা চলছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, রকিব উদ্দিনের ঋণের পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। কোনোভাবেই তিনি ওই টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। গত কয়েক মাস থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি তার আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে সহযোগিতা চান। এমনকি সহযোগিতা না করলে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার হুমকিও দেন। এর পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তবে তাকে গ্রেফতার করা হলে এ ঘটনার সত্যতা শতভাগ জানা যাবে।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, দক্ষিণখান এলাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ এক্সপার্টদের সহযোগিতা নিয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযানে মেনেছে পুলিশ। তবে তার কোনো হদিস মিলছে না।

তিনি আরো জানান, রকিব উদ্দিন গত ৩-৪ মাস আগেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। তবে ওই সময় থানায় কোনো সাধারণ ডায়রি করা হয়নি।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান রোডস্থ কেসি স্কুলের পেছনের ৮৩৮ নম্বর বাসা থেকে বিটিসিএলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিনের স্ত্রী মুন্নী বেগম (৩৭), তাদের ছেলে ফারহান ভুঁইয়া (১২) ও মেয়ে লাইবা ভূঁইয়া (৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়না তদন্ত করে চিকিৎসকরা জানান, মা মুন্নীকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করা হয়। এছাড়াও লাশ তিনটির উপরিভাগ বেশি পচনশীল ছিল।

বাসার মালিক মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে রকিব উদ্দিন তার ভাড়া নেন। তবে তাদের কোনো পারিবারিক বিবাদ ছিল না। কিন্তু কিছুদিন আগে রকিব উদ্দিনের ঋণের কথা শোনা যায়। এছাড়াও গত ১২ ফেব্রুয়ারি রকিব উদ্দিন তার সাথে কথাও বলেছিলেন বলে জানান মনোয়ার।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর ওই বাসা থেকে রকিব উদ্দিনের রেখে যাওয়া একটি চিরকূট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই চিরকূটের সূত্র ধরেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ১২ ফেব্রয়ারি লেখা ওই চিরকূটে নিজেকে ‘নিকৃষ্ট লোক’ হিসেবে তুলে ধরে দুই সন্তান ও স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এছাড়াও তার লাশ রেললাইনে পাওয়া যাবে বলেও ওই চিরকূটে উল্লেখ আছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে চিরকূটে লেখা পলাতক রকিব উদ্দিনের। এছাড়াও গত বুধবার বিকেলে রকিব উদ্দিন তার এক সহকর্মীর সাথে সর্বশেষ কথা বলেন। তখন তিনি বলেন বৃহস্পতিবার তিনি অফিসে যাবেন না। এটাই ছিল রকিবের শেষ কথা। এর পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, চিরকূটের সূত্র ধরে রেলওয়ে পুলিশকে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে বিষয়টি দক্ষিণখান থানা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি রকিব উল হোসেন জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে তারা সচেতন রয়েছেন। তবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর থেকে রেললাইনের কাটা পড়া কোনো মৃত বা আহত ব্যক্তির খবর পাওয়া যায়নি। এমন খবর পাওয়া গেলে দক্ষিণখান থানা পুলিশকে জানানো হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন