বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর খুশির দিন

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান
মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনটি অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। সিয়ামপালনকারী যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণœ রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর সমাগত হয়। এদিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্য দ্বারা পরিপূর্ণ। নতুন চাঁদ দেখা মাত্র রেডিও-টেলিভিশন ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় খুশির বার্তা ‘ঈদ মোবারক’।
আওদ শব্দ থেকে ঈদের উৎপত্তি। ঈদ অর্থ আনন্দ, খুশি, ফুর্তি, আমোদ, উৎসব ইত্যাদি। ফিতর অর্থ সিয়াম ভঙ করা, স্বভাবজাত বা স্বাভাবিক। ঈদুল ফিতর অর্থ কঠোর সিয়াম সাধনার মুদ্দৎ উতরিয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবার খুশি। ঈদ মুসলিম জাতির একটি বার্ষিক সম্মেলন ও উৎসবের দিন। বিশ্বের প্রত্যেকটি জাতিরই আনন্দ-উৎসবের জন্য বছরে কিছু দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকে। তেমনি মুসলমানদের আনন্দোৎসবের জন্য বছরে দু’টি দিন নির্ধারিত রয়েছে। একটি হলো ঈদুল ফিতর ও আরেকটি ঈদুল আজহার দিন। রমজানের সিয়াম সাধনার পরে যে ঈদ তার নাম ঈদুল ফিতর। আর জিলহজ মাসে হজ উপলক্ষে যে ঈদ উৎসব পালন করা হয় তাকে বলে ঈদুল আজহা।
সারা বিশ্বের মুসলমানের সর্বজনীন আনন্দ-উৎসব ঈদুল ফিতর। বছর জুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। ঈদগাহে কোলাকুলি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মাহে রমজানের এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে পারার পবিত্র অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। আর আনন্দ ও পুণ্যের অনুভূতিই জগতে এমন এক দুর্লভ জিনিস, যা ভাগাভাগি করলে ক্রমেই তা বৃদ্ধি পায়। ঈদুল ফিতর বা সিয়াম ভাঙার আনন্দ-উৎসব এমন এক পরিচ্ছন্ন আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত করে, যা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথপরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে।
ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। ঈদের দিন ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব সালাত আদায় এবং একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে সাম্যের জয়ধ্বনি করেন। রমজান মাসে সংযম ও আত্মশুদ্ধি অনুশীলনের পর ঈদুল ফিতর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ করে, গড়ে ওঠে সবার মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। ঈদের দিন মসজিদে, ময়দানে ঈদের সালাতে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিমের সমাগম হয়ে থাকে। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে ঈদের সালাত আদায় করেন।
ঈদের ঐতিহাসিক পটভূমিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, তৎকালে মদিনাতে স্থানীয় কিছু উৎসবের প্রচলন ছিল যা ছিল আইয়্যামে জাহেলিয়াত তথা মূর্খতা, গোমরাহি ও শিরক মিশ্রিত আমোদ-প্রমোদের উপকরণে ভরপুর। যেগুলোর সাথে ইসলামী বিধিবিধানের সাদৃশ্য ছিল না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের জন্য দু’টি দিনকে ঈদ হিসেবে ঘোষণা করেন।
মুসলিম সমাজ আনন্দ উল্লাস তথা মানুষের আত্মিক চাহিদা বিবর্জিত নিছক বৈরাগ্যবাদী ধর্মীয় অনুশাসনের অনুকরণ করে না। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (ঈদের দিন একবার) আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু এলেন। তখন আনসারদের দু’টি মেয়ে আমার নিকট (বসে) বুআস যুদ্ধের দিনে আনসাররা পরস্পর যা বলেছিল সে সম্পর্কে গীত গাইছিল। তিনি বলেন, তারা পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গৃহে শয়তানি বাদ্যযন্ত্র! এটা (ঘটেছিল) ঈদের দিনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির জন্যই ঈদ (খুশি) রয়েছে। আর এ হচ্ছে আমাদের ঈদ। (সহীহ আলবুখারী : ৮৯৮]
বাংলাদেশের ঈদোৎসবের কালক্রমিক ইতিহাস নির্মাণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। এ কাজের উপযোগী সুস্পষ্ট ও অনুপুঙ্খ ধারাবাহিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। ফলে কখন, কীভাবে ঈদোৎসবের শুরু হলো তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে নানা ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও সূত্র থেকে বাংলাদেশে সিয়াম পালন এবং ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের খবর পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এদেশে সালাত, সিয়াম ও ঈদপর্বের প্রচলন হয়েছে তার বেশকিছু আগে থেকেই। এতে অবশ্য বিস্মিত হবার কিছু নেই। কারণ, বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলমান সুফি, দরবেশ ও ধর্ম-প্রচারকেরা বাংলাদেশে আসেন। এদের অধিকাংশই উত্তর ভারত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন। অন্যদিকে আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমে বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই বহিরাগত মুসলমান বণিক, ধর্ম সাধক ও ইসলাম প্রচারকেরা নিজস্ব পরিম-লে তাদের প্রধান ধর্মীয় পর্ব হিসেবে ঈদ পালন করতেন। এদের ঈদ উদযাপন ছিল সীমিত গ-িবদ্ধ। একে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন ধর্মীয় পর্ব উদযাপন বলা গেলেও সর্বজনীন সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। তবে বাংলাদেশে ঈদোৎসবের ভিত্তি হিসেবে এর গুরুত্ব একেবারে উপেক্ষণীয় নয়।
বাহ্যিক দৃষ্টিতেও ঈদের গুরুত্ব অনেক। এক ঘেয়েমি চলমান সমাজ জীবনে মানুষের মনে জড়তা বন্ধ্যাত্বতা তথা বিষময় কঠোরতার জন্ম দিতে পারে। এ সমস্ত বিষয়কে দূরীভূত করে সমাজকে কর্মচাঞ্চল্যের আদলে ঢেলে সাজানোই হলো এ সাময়িক নির্মল বিনোদনের এ ব্যবস্থা। মুসলিম জীবন প্রবাহ আবর্তিত হয় মহান রাব্বুল আলামীনের মহিমা তার একত্ববাদ ও তার সার্বভৌমত্ব ঘোষণার মর্মবাণীর মধ্য দিয়েই। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তার বান্দাকে রমজানুল মুবারকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার শুকরিয়া অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা, ক্বিয়ামুল লাইলসহ অন্য ইবাদাতের যে তাওফিক আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মুসলমানদেরকে দান করেছেন তাঁরই শুকরিয়া আদায়ই হলো ঈদুল ফিতর উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, ঈদের যে দু’ রাকাত ওয়াজিব সালাত রয়েছে, তার মধ্যেও অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির সংযোজন করা হয়েছে। যার অর্থই হলো মহান রাব্বুল আলামীনের সর্বাধিক প্রশংসা ও তাঁর সীমাহীন ক্ষমতার স্বীকৃতি দান। আর ঈদের মাঠের দিকে রওয়ানা হবার সময়ও যে দু‘আ পাঠ করতে হয় তা এরূপ, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ অর্থাৎ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। ঈদের দিন অতি প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করে মিসওয়াক অজু-গোসল মোট কথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সালাতুল ফজর আদায় করে সম্ভাব্য উত্তম পোশাক পরিধান করে উপরোক্ত তাসবিহ পাঠ করতে করতে যখন মুসলমানগণ ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হয় এবং দু’রাকাত ওয়াজিব সালাত জামায়াতের সাথে আদায় শেষে পুনরায় উক্ত তাসবিহ পড়তে পড়তে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে থাকে হাদীসের বর্ণনা মতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে তাঁর এ মু’মিন বান্দাদের আমল সম্পর্কে গর্ব করতে থাকেন।
ঈদুল ফিতরের দিন গরিব-মিসকিন ও অভাবী লোকদের মধ্যে শরিয়তের নির্ধারিত যে অর্থ বা খাদ্যবস্তু বিতরণ করা হয় তাকে বলে সদাকাতুল ফিতর। সদাকাতুল ফিতরকে সিয়ামের কাফফারা বলা হয়। পক্ষান্তরে ঈদের দিনে অভাবী ব্যক্তিরাও যাতে অনাহারে থাকার কারণে ঈদের খুশি থেকে একেবারে বঞ্চিত না হয় তার জন্যই এ ব্যবস্থা। ঈদুল ফিতরকে সার্বজনীন করে তুলতে ইসলাম সামর্থ্যবানদের উপর সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব করে দিয়েছে। কারণ ঈদের উপকরণ নতুন কাপড়, ভালো খাবার, সুগন্ধি ঈত্যাদি যোগাড় করতে চাই টাকা। সমাজের দরিদ্র মানুষ যাদের দৈনন্দিন জীবনটা চলে বঞ্চনা আর বেদনায় জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে, তাদের পক্ষে আনন্দের উপকরণ যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই ইসলাম সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর তাদের সিয়ামের শোধক (ভুল-ত্রুটির পরিমার্জনা) হিসেবে সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করেছে। আর এটাকে দরিদ্র মানুষের অধিকার হিসেকে ঘোষণা করেছে। যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠি অন্যের দয়া বা অনুগ্রহের অসহায় ভোক্তা হিসেবে হীনমন্যতায় ঈদ আনন্দে আত্মার অভিব্যক্তি হারিয়ে না ফেলে।
আনন্দ মনের একটি অবস্থার নাম। জান্নাতের যে আনন্দ তার মধ্যে কোথাও কোনো দুঃখের ছায়া মাত্র পড়বে না। সে আনন্দ পৃথিবীর আনন্দ নয়। জান্নাতের আনন্দ যেমন পৃথিবীর জীবনের কর্মের একটি প্রতিফল ও উপহার, তেমনি পৃথিবীর আনন্দও একটি শুভ কর্ম সম্পাদনের প্রতিফল মাত্র। ঈদের আনন্দ অনন্ত আনন্দের একটি খ-িত অংশ মাত্র। ঈদুল ফিতরের আনন্দ একজন মুমিনের জীবনে ও মুসলিম সমাজে তখনই প্রবাহিত হয় যখন ব্যক্তি ও সমাজ রমজান মাসের কর্তব্য ও দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য ও কর্তব্য সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, “রমজান মাস এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কোরআন নাজিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং অবতীর্ণ কোরআনের হক যথাযথভাবে আদায়ের প্রচেষ্টা করে।” [সূরা আলবাকারা : ১৮৫]
উৎসব মানুষের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের একটি ধারা। জীবনের বিভিন্ন ধারাকে অন্তর্ভুক্ত করেই সংস্কৃতি মানব জীবনের বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটায়। উৎসবের মধ্যেও থাকে বিভিন্নধারিক বৈশিষ্ট্য। ঈদ উৎসব তার অন্যতম উদাহরণ। এক মাস ধরে উপবাস পালনের অর্থ জীবনের কৃচ্ছ্রসাধন। সারা দিন অন্ন দূরে সরিয়ে রাখা, অন্যায় থেকে দূরে সরে আসা, জীবনের প্রতিটি প্রাত্যহিক দিক নিয়ন্ত্রণ করা। এর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি চর্চার দিকই প্রকাশিত। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষের মানসিক পরিবর্তন, অতিরিক্ত অর্থলোভে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা রমজান মাসের সিয়ামের আদর্শকে অনেক সংকুচিত করে ফেলেছে। মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফা, ওজনে কম দেয়া সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শ্রেণির মানুষের কাছে শুচিতা মূল্যহীন বললে অন্যায় বলা হবে না।
মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে, আমলের খাতায় ইবাদাত ও সাওয়াব হিসেবে গণ্য হবে। আনন্দ কি বেদনা, কোন কিছুই এর ব্যতিক্রম নয়। আনন্দের অতিশায্যে সীমা অতিক্রম করে পাপের পাল্লা ভারি করে তোলা মুমিনের কাজ হতে পারে না। তাছাড়া ঈদ আনন্দের মূলে তো রয়েছে মহান আল্লাহর হুকুম, মাহে রমজানের ত্রিশ দিন সিয়াম সাধনার কঠিন ব্রত পালন করতে পারার তৃপ্তি। সুতরাং আনুগত্যের অনুভূতি প্রকাশে যে উৎসব তা আনুগত্যহীনতায় কলঙ্কিত হওয়া বাঞ্ছনীয় হতে পারে না।
বলতে গেলে আমাদের সমাজে বর্তমানে যে ঈদের আনন্দ তা ত্যাগের আনন্দ নয়, এক মাস সিয়াম সাধনার পূর্ণতার আনন্দ নয়-শুধুমাত্র ভোগের আনন্দ, সাজ-সজ্জার আনন্দ, বিলাস-ব্যাসনের প্রতিযোগিতার আনন্দ। সাজ-সজ্জা, আমোদ-স্ফূর্তিতে ডুবে যাওয়ার আগে মুমিনকে সাজতে হবে আধ্যাত্মিকতার পোশাকে।
বাংলাদেশে নাগরিক সভ্যতার আধুনিকতা ঈদের আনন্দ উপভোগ ও প্রকাশের ধারায় আবার যেন জাহেলিয়াত ছড়াচ্ছে। ঈদের আনন্দ ঘিরে যেসব নাটক রচিত ও পরিবেশিত হয়, যেসব সাময়িকী প্রকাশিত হয় তার অধিকাংশ সংখ্যায় ঈদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে গরহাজির। থাকে না সিয়াম সাধনার শিক্ষা প্রচার প্রসারের কোনো পরিকল্পনা। ঈদের আনন্দ উপভোগের বেলেল্লাপনা আচরণ দেখে মনে করা বড়ই কঠিন যে, এই ঈদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপহার দেয়া মুসলমানদের জাতীয় উৎসব।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবালবৃদ্ধবনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে আমাদের কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা হলো জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। পৃথিবী সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক। সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন দৃঢ়তর হোক। আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যম-িত হোক। হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন