চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি বিপদ তৈরি করেছে সাগরে ভাসমান একটি জাহাজ। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যটকভর্তি ব্রিটিশ পতাকাবাহী এই প্রমোদ জাহাজটিতে ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়ার পরপরই এটিকে জাপানের ইয়োকোহামায় নোঙর করা হয়। চেষ্টা চলছে কোনওভাবেই যেন অন্য যাত্রী বা ক্রুরা এতে সংক্রমিত না হন।
সে সময় ওই জাহাজে যাত্রীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৬৬৬ জন। তারা ৫৬টি দেশের নাগরিক। নাবিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ছিল মোট ১০৪৫ জন। তখন থেকেই তাদের ডাঙায় নামতে দেওয়া হচ্ছে না। জাহাজের ভেতরেও কেবিনের মধ্যে এক ধরনের অবরুদ্ধ সময় কাটাতে হচ্ছে; যাতে যতটা সম্ভব এক অন্যের সংস্পর্শে না আসতে পারে।
যাদের শরীরে যখনই করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের তীরে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসের বিস্তার।
জাহাজটিতে প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে চার থেকে পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকছে। প্রতিদিনই নতুন করে কয়েক ডজন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস বাসা বাঁধছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাপানের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডায়মন্ড প্রিন্সেসে নতুন করে ৮৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে জাহাজটিতে গত ১৪ দিনে ৫৪২ জন যাত্রী এবং ক্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। আর এমন সংক্রমণে কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে জাপান।
ডায়মন্ড প্রিন্সেসের শেফ (বাবুর্চি) হিসেবে কাজ করেন ভারতীয় নাগরিক বিনয় সরকার। হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, যত দিন যাচ্ছে জাহাজে যাত্রী এবং ক্রুদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে যে কে কখন আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. অ্যান্টনি ফাউচি গত সোমবার খোলাখুলি বলেছেন, কয়েক হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে যেভাবে জাহাজটিতে ভাইরাস আটকানোর চেষ্টা চলছে, তা কাজ করছে না।
সম্ভবত সে কারণেই একের পর এক দেশ ওই জাহাজে আটকে থাকা তাদের নাগরিকদের নিয়ে যেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই জাহাজে তাদের ৩৮০ জন নাগরিকের অধিকাংশকেই গত সোমবার বিশেষ একটি ভাড়া বিমানে করে নিয়ে গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার কানাডা জানিয়েছে, নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে তারা একটি বিমান ভাড়া করেছে। জাহাজে ২৫৬ জন কানাডার নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
জাহাজটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার চারজন নাগরিক রয়েছেন। মাত্র চারজন নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে তারা। অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনও তাদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
বিনয় সরকার বলেন, ‘সম্ভবত বিদেশিদের কাছ থেকে কিছুটা চাপ তৈরি হওয়ার কারণে গত সোমবার থেকে জাপানিদের কাছ থেকে অনেক বেশি তৎপরতা চোখে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকশ সৈন্য জাহাজে উঠে পুরোদমে স্যানিটাইজেশনের কাজ করছে। বিশেষ করে যেসব যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন, তাদের ছেড়ে যাওয়া কক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে সৈন্যরা।’
জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাহাজের সব যাত্রী এবং ক্রুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তবে কিছু পরীক্ষার ফল পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাত্রীদের নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সব যাত্রী ও ক্রুকে আলাদা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আপনি এবং আপনার কক্ষের সহযাত্রীর শরীরে যদি কোনো ভাইরাস না পাওয়া যায়, শরীরে কোনও লক্ষণ না থাকে তাহলে আপনি জাহাজ ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।’ তবে হাজারেরও বেশি ক্রুকে আরও কিছুদিন জাহাজে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
বিনয় সরকার জানান, তাদের জানানো হয়েছে যে যাত্রীরা নেমে গেলে ক্রুদের আলাদা আলাদা ঘরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এ সময় তাদের কোনো কাজ করতে হবে না। জাপানিরাই সব কাজ করবে। বাইরে থেকে ইতোমধ্যেই সবার জন্য খাবার পাঠানো শুরু হয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন