শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের কুটনৈতিক একগুঁয়েমি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

কাশ্মীর পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই হত, তা হলে বিরোধীদের কথা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন কেন ভারত সরকার? বার বার সেই প্রশ্ন উঠছে। চিড়িয়াখানায় নতুন কোনও পশু-পাখি এলে অথবা বিশেষ কোনও সৌন্দর্যায়ন হলে বিজ্ঞাপন করা হয়। টিকিট কেটে কর্তৃপক্ষের দেখানো রাস্তায় হেঁটে দর্শককে উপভোগ করতে হয় সেই দৃশ্য। কখনও কখনও বিশিষ্ট মানুষদেরও আহŸান জানানো হয়। বিনাম‚ল্যে কর্তৃপক্ষ তাদের চিড়িয়াখানা ঘুরিয়ে দেখান। কিন্তু তারই মধ্যে কেউ যদি সেই পথ থেকে সামান্য সরে গিয়ে পশু অধিকারের বেমক্কা প্রশ্ন তোলেন, জানতে চান, খাঁচায় বন্দি পশু-পাখিদের পুষ্টির কথা, যাপনের কথা, তখন একটা সহজ রাস্তা নেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তি যাতে আর কখনও চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই না পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের নীতি এখন অনেকটা তেমনই। বিশ্বের কাছে ভারত প্রমাণ করতে চাইছে উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শান্ত। নিরুপদ্রব। দেশ বিদেশের রাষ্ট্রদ‚তদের দফায় দফায় কন্ডাকটেড ট্রিপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাজোয়া গাড়ির কনভয় সাজিয়ে তাদের দেখানো হচ্ছে মহল্লা, বাজার, রাস্তাঘাট। আপাত ভাবে কাশ্মীর সত্যিই শান্ত। অতীতে কাশ্মীর যে অশান্তি দেখেছে, ইদানীং তা যে খুব দেখা যাচ্ছে, এমন নয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আগুন যে জ্বলছে, তা বুঝতেও খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয় না। সমস্যা হল, সে কথা কেউ বলতে গেলেই নেমে আসছে শাস্তির খাঁড়া। সকলকে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে হবে। এটাই চাইছে রাষ্ট্র। উল্টো কথা বললেই বিপদ। স¤প্রতি যুক্তরাজ্যের এক সংসদ সদস্যকে দিল্লি বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে ভারতে আসছিলেন ওই লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। সঙ্গে ছিল ভারত সরকারেরই দেয়া বৈধ ভিসা। কিন্তু বিমানবন্দরে নেমে তিনি জানতে পারেন ভিসাটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। অভিবাসন দফতর সে কথা জানিয়ে তাকে তুলে দেয় ফিরতি বিমানে। কারণ সহজ, বিলেতের পার্লামেন্টে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছিলেন মানবাধিকারের। ভারত সরকার কাশ্মীরকে যে ভাবে মরূদ্যান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। অভিযোগ, সে জন্যই এই শাস্তি। যুক্তরাজ্যের এক কেউকেটা সংসদ সদস্যের সঙ্গে যদি এ ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে দেশের ভিতরে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কী ঘটছে তা সহজেই অনুমেয়। বুঝতে অসুবিধা হয় না, কী ভাবে বেঁচে আছেন কাশ্মীরের মানুষ। বিরোধীদের বক্তব্য, কাশ্মীরে যে শান্তি পরিস্থিতি দেখানোর চেষ্টা করছে সরকার, তা আসলে কার্ফু, জলপাই উর্দি, বন্দুকের নল আর পেলেট গানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝড়ের আগের নীরবতা। ফেরা যাক সা¤প্রতিক অতীতে। গত ৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যটিকে ভেঙে দু›টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। আর বাতিল করা হয় উপত্যকার বিশেষ অধিকার। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে সেই সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কেন দেয়া হয়েছিল? ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মহারাজা হরি সিং এর স্বাধীন রাজ্য কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন চুক্তি সই হয়েছিল। ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার পরে কাশ্মীর কার থাকবে তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তানের। প্রাথমিক ভাবে কোনো দেশেই যেতে চাননি হরি সিং এবং কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। কিন্তু একপর্যায়ে সই হয় ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন। ভারতের আরও বহু স্বাধীন রাজ্যের সঙ্গেও এই একই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কাশ্মীরের সঙ্গে চুক্তিতে হরি সিং স্পষ্ট করেই বলেছিলেন কোন কোন বিষয়ে কাশ্মীর ভারতের কাছে অনুগত থাকবে এবং কোন কোন বিষয়ে থাকবে না। কাশ্মীরের আলাদা সংবিধানের প্রস্তাব সেখানেই দেয়া ছিল। এবং তারই জের ধরে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরের জন্য আলাদা একটি অনুচ্ছেদ তৈরি হয়েছিল, ৩৭০। কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল অনুচ্ছেদটি সাময়িক। প্রয়োজন ফুরোলে অনুচ্ছেদটি বাতিল করা হবে। প্রয়োজন ফুরিয়েছিল কি না, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক। বছর কয়েক আগেও একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদ এখনও প্রাসঙ্গিক। তবে প্রশ্ন অন্য। গত ৭০ বছরে ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ সত্যিই কি প্রচুর সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন? উত্তর এক কথায় দেয়া যায় না। সুবিধা যেমন মিলেছে, অসুবিধাও হয়েছে বিস্তর। বস্তুত গত ৭০ বছরে ৩৭০ অনুচ্ছেদেও বহু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন হয়েছে। জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার সম্মতিতেই তা ঘটেছে। তবে এত কিছু সত্তে¡ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল কাশ্মীরের মানুষের কাছে এক ধরনের সম্মান। নিঃশেষ হয়ে যাওয়া জমিদার বাড়ির শেষ ঝাড়বাতিটার মতো। স্বাধীনতার পর্ব থেকেই কাশ্মীরে বার বার গণভোটের দাবি উঠেছে। ডয়চে ভেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন