বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩২ এএম

যে দেশ যত উন্নত, সে দেশের জননিরাপত্তা তত উন্নত। রাষ্ট্রের উন্নয়ন শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বারা নির্ণয় করা যায় না। মানবাধিকার, জীবনযাত্রার মান এবং জননিরাপত্তাই হচ্ছে উন্নয়নের মূল মানদন্ড। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেশের পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যত্যয় জননিরাপত্তাকে চরমভাবে বিঘিœত করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে। আমরা যখন দেশের উন্নয়নের কথা বলছি, রফতানি বৃদ্ধি, রেমিটেন্স আয় ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বেশকিছু মেগা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ ধরে একবিংশ শতকের সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছি, তখন জননিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ জন্য দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব, সক্ষমতা নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

পুলিশ বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যের অপেশাদার আচরণ, রাজনৈতিক দলবাজি এবং অপরাধপ্রবণতা পুরো বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা বিনষ্ট করছে। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময়ে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। নানা অভিযোগে বছরে ১০-১৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির পরও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি ঘটছে না। গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় একই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া থেকে ৭ জনকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যার ঘটনার সাথে এলিটফোর্স র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততার ঘটনা জাতির সামনে নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে। সেই অভিযুক্তরা বিচারের সম্মুখীন হওয়ার পরও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা বন্ধ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডও বন্ধ হয়নি। এ ধরনের ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, সংশ্লিষ্টদের শাস্তি না হওয়া এবং বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়া বিশেষভাবে দায়ী এবং এ কারণে অপরাধপ্রবণ পুলিশ সদস্যরা শাস্তির পরোয়া না করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জনৈক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুই দফায় ২৩ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানার বর্তমান ও সাবেক দুই ওসি এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এ সপ্তাহে এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি ঘটনার সংবাদ ছাপা হয়েছে। গত মঙ্গলবার একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে রাজধানীর গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুর এলাকায় জনৈক ব্যবসায়ীর বাসায় ডোরবেল বাজিয়ে বাসায় প্রবেশ করে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে আটক রেখে তার কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় পুলিশ। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে এই ব্যবসায়ীর টাকা পাওনা-দেনার সম্পর্ক বা ডিসপিউট ছিল বলে জানা যায়। রমনা জোনের ডিসির সাথে লেনদেনের সূত্র ধরে বাসা থেকে ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতন এবং মুক্তিপণ হিসেবে সোয়া কোটি টাকার চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগে ডিসি রমনা ও দুই দারোগার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে থেকে নগদ লাখ লাখ টাকা আদায় করা এবং লেনদেনের এক পর্যায়ে বাসা থেকে তুলে এনে ব্যাংক চেকের পাতায় কোটি টাকার অঙ্ক লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার ঘটনা পুলিশের পোশাক ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দু’টি উদাহরণ মাত্র।

নানা কারণে দেশে অবক্ষয়, অপমৃত্যু ও সামাজিক অপরাধ বেড়ে চলেছে। একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের সাথে অপরাধী চক্রের গোপন আঁতাত ও লেনদেন অপরাধীদের বেপরোয়া হয়ে উঠতে মূল ভূমিকা রাখছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তা ছাড়া অপরাধপ্রবণ পুলিশ সদস্যরা সরাসরি গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার খবরও প্রায়শ ছাপা হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে গৃহবধুর মৃত্যু এবং কুড়িগ্রামে পুলিশ কনস্টেবলের মটরসাইকেল চুরির খবর ছাপা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এ ধারা চলছে। গতানুগতিক বিভাগীয় শাস্তি, তিরস্কার বা লঘুদন্ডে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছে না। অপরাধী ও অপরাধপ্রবণ পুলিশ দিয়ে আইনের শাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা না হলে আইনের শাসন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, পুলিশের আইজিপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:৩২ এএম says : 0
We liberate our country only for these criminals.....
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন