শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নারীদের কাজ জিডিপির হিসেবে আনা হবে : অর্থমন্ত্রী

ইআরডি কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৭ এএম

নারীদের কাজ জিডিপির হিসেবে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘পলিসি ডায়লগ: ফরমাল রিকগনিশন অব উইমেন্স আনঅ্যাকাউন্টেড কন্ট্রিবিউশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এই কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নারীদের যে সকল কাজ টাকার অংকে পরিমাপ করতে পারি, সেই কাজগুলোকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। আগামী বাজেটে এর একটি প্রতিফলন থাকবে। এই বিষয়ে ব্র্যাকের চেয়ারম্যানকে একটি সুপারিশমালা তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে যে সব স্বীকৃত পদ্ধতি আছে, সেগুলো মেনেই হিসাব করতে হবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাকে আমার মা জন্ম দেয়ার পর থেকেই লালন পালন করেছেন। জন্মের পর থেকে বড় হওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়েছেন। আমার মায়ের কাজেরও স্বীকৃতি দিতে পারছি না। আমাদের ইসলাম ধর্মও নারীদের সমতা ও ক্ষমতায়নের বিষয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও নারী ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এই জন্য নারীর ক্ষমতায়নে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। নতুন চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সংসদ সদস্য নির্বাচনে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. সায়েমা হক বিদিশা জানান, দেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই মজুরিবিহীন কাজ নিয়োজিত থাকলেও সবচেয়ে বেশি করছে নারীরা। এসব কাজ হিসেবে আনা গেলে জাতীয় আয় (জিডিপি) বাড়তো প্রায় ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ মাত্র ৯ শতাংশ হলেও নারীর অবদান ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। দেশে মজুরিবিহীন কাজে নিয়োজিত ৩১ শতাংশ। সেখানে পুরুষের সংখ্যা মাত্রও ১০ শতাংশ।
প্রফেসর ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, কর্মজীবী একজন নারী দিনে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি ঘরে কাজ করেন। পুরুষকে করতে হয় দেড় ঘণ্টার কম। অন্যদিকে বাইরে কাজ করেন না এমন নারী প্রায় ছয় ঘণ্টা গৃহস্থালির কাজ করেন। পুরুষ করেন দুই ঘণ্টার কম। নারীর ক্ষমতায়নে নারীবান্ধব অবকাঠামোগত বরাদ্দ বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা, জনসেবা ও ঘরের ভেতরের কাজ বা দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া উচিত। স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীর অবমূল্যায়িত কাজকে মূল্যায়নের সুপারিশ করেন তিনি। স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি হিসাব পদ্ধতি, যা দিয়ে ঘরের অ-অর্থনৈতিক সেবামূলক বা গৃহস্থালি কাজ মাপা হয়।
এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, পারিবারিক নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত থাকলে এটি কমে আসবে। দেশে নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে। নারীর গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন শুধু টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য নয়, এতে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমবে। মজুরিবিহীন কাজের প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী। ফলে সেটিকে হিসেবে আনলে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে।
গৃহস্থালির কাজ সব সময় ঘরের মধ্যে নয়, বাইরেও হয় বলে উল্লেখ করেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল¬ুর রহমান। তিনি বলেন, গৃহস্থালির কাজ সহজ করার জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ দরকার, তাতে উৎপাদনশীল খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। দৃষ্টিভঙ্গিটার পরিবর্তন দরকার।
ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান বলেন, নৈতিক দৃষ্টিকোণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা, নারীর অধিকার, সামাজিক ন্যায্যতার কারনে নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দরকার। সেটি না করলে শুধু অন্যায়ই হবে না, এটি একটি গর্হিত অপরাধও বটে। দুনিয়াব্যাপী মজুরিভিত্তিক কাজে প্রাধান্য পুরুষের, সেবামূলক কাজে নারীদের। আবার নারীর অমূল্যায়িত কাজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্য জাতীয় আয়ের হিসাবে নারীর এ ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এতে কিছু সমস্যা থাকলেও অসম্ভব নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, আফ্রিকার নারীরা শুধু পানি আনতে যে সময় ব্যয় করেন সেটি দিয়ে ১০ বার চাঁদে যেতে পারতো। বাংলাদেশেও নারীরা গৃহস্থালি কাজে শ্রম দিলেও সেটি অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে না। কৃষি কাজে নারীদের অবদান বাড়ছে সেখানে পুরুষ সংখ্যা কমছে। কিন্তু নারীদের এখনও কৃষক কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। শ্রমশক্তিতে গ্রামের তুলনায় শহরে নারীর অংশগ্রহণের হার কম হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি।
নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, যে কাজগুলো সাধারণভাবে নারীর কাজ বলা হয়, সেসব কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এতে নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন হবে।
এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের অসমাপ্ত সেই কাজ শেষ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। যার যার অবস্থান থেকে সকলের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে সকলের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত। বিশেষ করে এই দায়িত্বটি সরকারি কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
গতকাল ৩৪ বছরের সরকারি চাকরি জীবন শেষে গতকাল অবসর গ্রহণ করেন ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ। বিদায়ী এই সচিব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, মনোয়ার আহমেদের সফল এবং বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দৃষ্টান্ত। দায়িত্বের প্রতি সততা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি জাতির সেবা দিয়ে গেছেন। ইআরডি সচিব হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছেন। তার পেশাগত সততা অনুসরণের জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহŸান জানান তিনি।
এ সময় মনোয়ার আহমেদ বলেন, দেশের উন্নয়ন ভাবনা তাকে তাড়িত করেছে। স্বচ্ছতা এবং সততার সঙ্গে কাজ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ। ইআরডির মাধ্যমে এই বিশ্ব স্বীকৃতিতে তিনি অবদান রাখতে পেরে সম্মানীত বোধ করছেন। ইআরডির সুনাম ধরে রাখার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহŸান জানান তিনি।
ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদের চাকরি থেকে অবসর উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর শেরে-ই বাংলানগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অর্থমন্ত্রণালয় এবং ইআরডির শীর্ষকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব সামসুল আলম।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন