শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জাতীয়-আঞ্চলিক মহাসড়কে নেই যথাযথ সাইন-সঙ্কেত

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের পরিবহন খাত। অব্যবস্থাপনায় সড়কের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬২ শতাংশে যথাযথ সাইন-সঙ্কেতের ব্যবস্থা নেই। সড়ক ব্যবহারকারী, চালক, মালিক, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, যে যার মতো করে চলছে সড়কে। প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি বিধান থাকলেও কেউ তা মানছেন না।
বিগত দিনে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি আলোচনায় আনেন। সড়ক-মহাসড়কে প্রাণহানির প্রসঙ্গ টেনে তিনি পাঁচটি নির্দেশনা দেন। এগুলো হলো দূরপাল্লার পথে বিকল্প চালক রাখা, নির্দিষ্ট দূরত্বে সার্ভিস সেন্টার বা চালকদের জন্য বিশ্রামাগার করা, গাড়ির চালক ও সহকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা বা অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা। এসব কথা বলা হলেও কোনটি আজও কার্যকর হয়নি।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জড়িত পরিবহন খাত। যার মূল উদ্দেশ্য সেবার বিনিময়ে মুনাফা অর্জন। কিন্তু অর্থনীতির চালিকা শক্তির অন্যতম খাতটিকে নিজস্ব সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছে অসাধু কিছু চক্র। গায়ে শ্রমিকের তকমা লাগিয়ে পেশির জোরে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক নেতারাও।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তথ্যই বলছে, দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬২ শতাংশে যথাযথ সাইন-সঙ্কেতের ব্যবস্থা নেই। জাতীয় মহাসড়কের অন্তত ১৫৪ কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, দেশে ৩৮ লাখ যানবাহন চলছে। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখের কাছাকাছি। একই সূত্রমতে, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনের জন্য চালক আছেন প্রায় ২০ লাখ। অর্থাৎ ১৮ লাখ যানবাহন ভুয়া চালক দিয়ে চলছে। অর্থাৎ ৪৭ শতাংশের বেশি গাড়ি চলছে ভুয়া চালক দিয়ে।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন না হওয়া তো ভয় পাওয়ার মতো ঘটনা। পুলিশ যে ট্রাফিক পক্ষ পালন করছে, এটি তো নতুন আইনে হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, সড়ক নিরাপদ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো আগে বাস্তবায়ন করা হোক। আর সড়কে সাইন-সঙ্কেত নেই, এর জন্য টাকা খরচ করা হবে। কিন্তু দেশে তো চালকই নেই। যারা আছেন তারা তো সাইন-সঙ্কেত বোঝেনই না। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক।
তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সওজ দুটি প্রকল্প নিয়েছে। একটি প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-খুলনা এই চার মহাসড়কের চারটি স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণ। এগুলো কুমিল্লার নিমসার, হবিগঞ্জের জগদীশপুর, সিরাজগঞ্জের পাঁচিলা ও মাগুরার ল²ীকান্দর নামক স্থানে স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ ছাড়া ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যথাযথ সাইন-সঙ্কেত বসাতে ৬৩২ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে সওজ। এটিও পরিকল্পনা কমিশনে আছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম বলেন, আইনের ভয় দেখিয়ে নিয়ম মানতে বাধ্য করা যায় না। নিজেদের স্বার্থেই মালিক-চালকদের সচেতন হতে হবে। তারা নিজে থেকে সচেতন না হলে বাধ্য করা সম্ভব নয়, শৃঙ্খলা আনাও সম্ভব নয়। তবে মালিকরা দায় চাপাচ্ছেন চালকের ওপরে। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন বাস এনা ট্রান্সপোর্ট বেপরোয়া গতির কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটায়। তার দাবি, গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বাসে লাগালেও চালকরা এর তার কেটে কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে।
শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল রহিম দুদু বলেন, তার কেটে ফেলে ড্রাইভারের কী লাভ? মালিক নিয়ম মানলে চালকের না মেনে উপায় নেই। আরেক শ্রমিক নেতা বলেন, চালক বড়জোর বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিয়ম ভাঙতে পারে। কিন্তু মালিক তো ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছেন। যানবাহনের আকার পরিবর্তন, বাড়তি অংশ সংযোজনের মতো বিপজ্জনক কাজ করছে। এসব গাড়ি বিআরটিএ থেকে অনুমোদন পায় কী করে! বিআরটিএ তো এসব যান চলাচলের অনুমতিও দিচ্ছে। বিআরটিএ বলছে, তারা গত এক বছরে ৮৪ হাজার পেশাজীবী যানচালককে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
পরিবহন ও সড়ক বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হয়েছে বেশি দিন হয়নি। আমার প্রাথমিক গবেষণা বলছে, ৪০ শতাংশ সাইন-সঙ্কেত নাই হয়ে গেছে। আরও ৩০-৪০ শতাংশ সাইন থাকলেও তা গাছের আড়ালে চলে গেছে। এর জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ লাগবে। প্রকল্পনির্ভর টাকা খরচ করলেই হবে না। রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণ ২৪ ঘণ্টা থাকতে হবে। নিষেধাজ্ঞার পরও মহাসড়কে চলছে ছোট যানবাহন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন