অন্যরকম দৃশ্য। ফুল হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা! দীর্ঘ অপেক্ষা!! তবু ক্লান্তি নেই। নেই ক্ষোভ, নেই বিরক্তি!!! এ যেন মায়ের ভাষার প্রতি ভালবাসায় ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধায় শহীদ মিনারে অবনত চিত্ত। ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় যেমন দৃশ্য দেখা গেছে, একুশের দিনও দেখা যায় একই দৃশ্য। ফুল হাতে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে অপেক্ষা। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেমেছিল জনতার ঢেউ। দলমত, ধর্মবর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি গণতন্ত্র সুসংহত করার অঙ্গিকার করেন। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জে দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র। সর্বত্রই স্থানীয় শহীদ মিনারে নেমেছিল ফুলহাতে জনতার ঢেউ। সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- ‘সমতা’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার দীপ্তশপথে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সালাম-রফিক-জব্বারের আত্মত্যাগের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দীপ্তিময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার অঙ্গীকার করেন সবাই। প্রত্যাশা করেন বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন। একই সাথে রক্ত ও শহীদদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা এবং সর্বস্তরে প্রচলনেরও দাবি জানানো হয়েছে শহীদ মিনার থেকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢেউ আছড়ে পড়ে বাংলা একাডেমির বইমেলায়।
শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজিদ হাসান বলেন, ভাষা সৈনিকরা পাকিস্তানী শাসকদের কোন অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি, জীবন দিয়ে তারা সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। তাদের সেই আন্দোলন ও চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ যেনো সামনের দিকে এগিয়ে যায় সেটিই চাই। ঢাকা কলেজের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা চাই বাংলাদেশ যেনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়, গণতন্ত্র যেনো সুসংহত হয়, নিশ্চিত হয় মানুষের অধিকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সজিব হাসান বলেন, এবারের শহীদ দিবস এমন সময়ে এসেছে যখন গোটা জাতি মুজিব বর্ষ উদযাপানের অপেক্ষায় রয়েছে। যিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছে তার শতবার্ষিকীতে বাড়তি প্রেরণা যোগাবে ভাষা আন্দোলনে তার চেতনা ও ভূমিকা।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। এইবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এসেছে মুজিব বর্ষের দ্বারপ্রান্তে। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হিসেবে অভিষিক্ত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বাধীন একটি ভূ-খন্ড তৈরি হয়েছে, আমরা একটি পতাকা পেয়েছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে চেতনাকে ভিত্তি করে সেদিন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছিলো, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, সেই গণতান্ত্রিক চেতনা সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। ৬৮ বছর পরেও বর্তমান দখলদার সরকার জনগণের সমস্ত অধিকারগুলো, ভোটের অধিকার হরণ করে, বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সবরকমের অপকৌশল করছে। তিনি বলেন, এই মহান দিবসে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, আজকে দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে এবং আইনের শাসন নেই। এখানে কোনো ন্যায় বিচার নেই। আমরা এই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবার জন্যে আজকের এই দিনে আমরা শপথ নিচ্ছি যে, এদেশে ইনশাআল্লাহ গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করব এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলা ভাষা বাঙালির রক্তের সাথে, মেধা মননের সাথে এবং মায়ের মুখের সাথে মিশে আছে। রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বাংলা ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বে আর নাই। তিনি বলেন, পিতার পথ ধরে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলায় ভাষণ দেন। তিনি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সর্বত্রই বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করবো। যেভাবে বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে মিশ্রণ দেখা দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এখনই সময় ব্যবস্থা নেয়া। তাই দায়িত্ব নেয়ার পরই সর্বত্র যেন বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের কোনো ভোটাধিকার নেই। এর জন্য আন্দোলন করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের সেই অনুরপ্রেরণা থেকেই আমাদের এটি করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
ইশরাক বলেন, ‹ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা থেকেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ।
গতকাল (শুক্রবার) দিবাগত মধ্যরাত থেকেই লাখো মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে। তাদের প্রতি নিবেদিত ফুলে ফুলে ভরে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশের সকল শহীদ মিনার। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব বয়সী আর শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় দিনভর মুখরিত ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। মানুষ হৃদয় উজার করা ভালোবসায় স্মরণ করেছে ভাষা শহীদদের। ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে শহীদ মিনারের বেদি।
শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশ ও বহির্বিশ্বে গতকাল পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। একুশ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকেই রাজধানীর সব পথ মিশে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পথে। জনতার হাতে ফুলের তোড়া, কণ্ঠে প্রভাতফেরির সেই অমর সুর ‹আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি›। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে, নিরবচ্ছিন্ন প্রতীক্ষার প্রহরে এতটুকু ক্লান্তি নেই, প্রাণের আবেগে প্রতিটি পদক্ষেপে একটিই প্রার্থনা, ‘সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের রক্ত স্রোতে যেন মিশে যায় সব ভালোবাসা। সকলে হাতে হাত রেখে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য শপথ নিয়েছেন। প্রতিজ্ঞা করেছেন দেশপ্রেমে সকল কিছুকে পেছনে ফেলার। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু হয়েছিল, যে চেতনার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে সুসংহত করারও অঙ্গীকার করেছেন তারা।
গতকাল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশের শহীদ মিনারগুলোতে নেমেছিল শ্রদ্ধায় অবনত মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার। ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছিল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তারপরও হাজারো মানুষের মিছিলের শেষ ছিল না। খালি পায়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের হটকারি সিদ্ধান্ত, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলার যে দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বিশ্বের বুকে ইতিহাস তৈরি করে ছিনিয়ে এনেছিল তাদের বিজয়। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাদের স্মরণ করল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। গভীর রাত থেকে শুরু করে কাক ডাকা ভোর এমনকি রোদেলা দুপুরেও ফুলের হাতে স্টিক, হৃদয়ে বেদনা ও গৌরবের ভালবাসা নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আসেন লাখো জনতা। এভাবেই অমর একুশের প্রভাতফেরিতে প্রাণের আবেগে জন স্রোত ভেসে যাচ্ছিল রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে। নিরাপত্তার স্বার্থে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার জন্য কেবলমাত্র পলাশী মোড়টি উন্মুক্ত রাখা হয়। সকলেই পলাশী মোড়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একের পর এক আসতে থাকেন শহীদ মিনারে। হাতে গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা নিয়ে কিশোরী, তরুণী ও নারীরা সাদা-কালোর সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি এবং ছেলেরা সাদাকালো পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট পরে, কেউ কেউ কালো ব্যানার ও ফেস্টুন, লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে মিছিলের সাথে এগিয়ে যান। গালে শহীদ মিনারের আল্পনা, বুকে কালো ব্যাজ, হাতে পতাকা, নানা স্লোগানে ভরা ফিতা মাথায় বেঁধে নানা বয়সী মানুষের ঢল ছিলো গভীর রাত থেকেই। এক পর্যায়ে ফুল হাতে অপেক্ষমানদের মানুষের সারি জগন্নাথ হল-পলাশী সীমা ছাড়িয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
অমর একুশে উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছিল নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী। পুরো এলাকায় বসানো হয় ক্যামেরা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। সারাদেশে শহীদ স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। অমর একুশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বের করে বিশেষ সংখ্যা। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠান। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করেছে ভাষা আন্দোলনের সেই বীর শহীদদের। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে সর্বস্তরের মানুষ।
১৯৫২ সালের ওই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। রক্ত ও বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে এসেছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি। আর এই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রযাত্রা। তবে ২১ এখন কেবল আর এ দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। ভাষার দাবিতে এই আন্দোলনের নজির বিরল। আর তাই শহীদদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে ২১ ফেব্রæয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
একুশের প্রথম প্রহরে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুজ্জামান শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীপরিষদ সদস্য ও উপদেষ্টাদের নিয়ে এবং দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের এমপিরা, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপুলিশ পরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারবৃন্দ, বিদেশী সংস্থার প্রধানগণ, অ্যাটর্নি জেনালে, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ভাষা সৈনিকরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ১৪ দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়। সকাল ৮টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর মধ্যে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্যবৃন্দ, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, শ্রমিক দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুব দল, মহিলা দল, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ থ্রোবল এসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গণতন্ত্রী পার্টি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৭ টায় আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বেলা ১১ টায় ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্কুল-কলেজ ও পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন