বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আবারো কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ট্রাম্পের

মোদির সাথে বৈঠক, তিনশো’ কোটি ডলারের সামরিক চুক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ভারত সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তারপরেও সোমবার আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রশংসা করে মোদির অস্বস্তি বাড়িয়েছেন তিনি। গতকাল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেও কাশ্মীর নিয়ে কথা বলে সেই অস্বস্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলেন ট্রাম্প। আবারো বললেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য আমি প্রস্তুত।’

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী বাসভবন দিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মোদি। সেখানেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত এবং পাকিস্তান দু’জনেই আমার খুব ভালো বন্ধু।’ ইমরান খান এবং নরেন্দ্র মোদি, দু’জনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্কের কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে কাঁটার মত হয়ে আছে কাশ্মীর।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খুবই কঠিন। তাই, তিনি নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবেন।’

এদিন ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে বলে জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হেলিকপ্টার চুক্তি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গুরুত্বপ‚র্ণ বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। অর্থাৎ, ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার ফল হল, তিনশো কোটি ডলারের সামরিক চুক্তি নিয়ে দুই দেশের একমত হওয়া এবং তিনটি সমঝোতাপত্রে সই। ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাপাচি ও রোমিও হেলিকপ্টার কিনবে ভারত। কিন্তু বহু আলোচিত বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। মোদি এবং ট্রাম্প দু’জনেই বলেছেন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলবে।

প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনা নিয়েও কথা বললেন ট্রাম্প। তবে সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু বলন, ‘সংঘর্ষের কথা শুনেছি। এটা ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’ মোদির সাথে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিদল বানিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেকটা এগিয়েছেন। আমি আশাবাদী। আমরা এমন একটা চুক্তিতে পৌঁছতে পারব যেখানে দুই দেশের প্রভ‚ত সুবিধা হবে। তবে আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। আর ভারতে সামরিকক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বেড়েছে ৫০০ শতাংশ।’ ট্রাম্প বলেছেন, ‘তিনটি ক্ষেত্রে ম‚লত আলোচনা হয়েছে, বাণিজ্য সম্পর্ক, সামরিক ক্ষেত্র এবং সন্ত্রাস বিরোধী ব্যবস্থা।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির দাবি, ‘ট্রাম্প হলেন ভারতের খুব বড় বন্ধু। দুই দেশের সম্পর্ক এখন আগের থেকে অনেক বেশি মজবুত।’ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, পাকিস্তান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে সিএএ প্রসঙ্গ আসেনি। ভারতীয় প্রতিনিধদল মার্কিন ভিসার প্রসঙ্গ তুলেছিল।

পরে সংবাদিক সম্মলেন সিএএ নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি শক্তিশালী নেতা। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ভারত খুবই ভালো কাজ করছে।’ তবে তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লির সহিংসতা নিয়ে কথা হয়নি। এটা পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি খুব সহজভাবেই মন্তব্য করেছিলেন যে, কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে চান। এটা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাই তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন যে, দুই দেশ চাইলে তিনি মধ্যস্থতা করবেন। সন্ত্রাস নিয়ে তার মন্তব্য, ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসের মোকাবেলায় সক্ষম। আর পাকিস্তান এখন সন্ত্রাস থামাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এভাবেই বিতর্কিত বিষয় ট্রাম্প এড়িয়ে গিয়েছেন।

ট্রাম্পের ভারত সফরে প্রবল জাঁকজমক ছিল, আড়ম্বর ছিল, কিন্তু আলোচনা থেকে খুব বেশি কিছু বেরিয়ে এল না। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, নিজের দেশে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডিয়ানদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভরপুর চেষ্টা করলেন। কিন্তু দুই শীর্ষনেতার বৈঠক থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু বেরিয়ে এল না।
এদিকে, মোদি-ট্রাম্প বৈঠক যখন চলছে, তখন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প গিয়েছিলেন দিল্লির সরকারি স্কুলে ‘হ্যাপিনেস ক্লাস’ দেখতে। ছোট ছোট বাচ্চাদের খুশি রাখার জন্য দিল্লি সরকারের প্রয়াসের কথা আগে শুনেছিলেন তিনি, এ বার দেখলেন। ফার্স্ট লেডি স্কুলে ঢুকতেই বাচ্চারা তার কপালে টিপ পরিয়ে দেয়। হাতে তুলে দেয় ফুলের গুচ্ছ। তারপর মেলানিয়া হ্যাপিনেস ক্লাস দেখেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ দিন ভারতের প্রেসিডেন্ট ভবনে আনুষ্ঠানিক অভিবাদন জানানো হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ ছাড়াও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিবাদনের পর সস্ত্রীক ট্রাম্প যান রাজঘাটে গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে ভিজিটার্স বুকে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমেরিকার লোক সার্বভৌম ও অপূর্ব ভারতের পাশে শক্তিশালী বন্ধু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর ভিশন। এটা একটা বিশাল সম্মান।’ সূত্র : টিওআই, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন