শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষুদ্র দুর্নীতির প্রতি বেশি মনোযোগী দুদক

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ক্ষুদ্র দুর্নীতির প্রতি বেশি মনোযোগী। বড় দুর্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো সাফল্য নেই। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনীতিকদের হয়রানি এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ফলোআপ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণাপত্র তুলে ধরেন সংস্থার রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।

গবেষণায় উঠে আসে, দুদকের কার্যক্রম ও ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে-এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। টিআইবি বলছে, দুদকবিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি করা এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয় প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রমাণ মিলেছে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দুদকের কার্যক্রমে। দুদক রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। কারণ দুর্নীতির ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ আচরণ পেতে সমর্থ হয়নি বলেও জানায় টিআইবি।

সংস্থাটির মতে, কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সকলের বিরুদ্ধে সমানতালে পদক্ষেপ নেয় না। তথ্যদাতাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের বেশিরভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত। তবে কয়েকজন রয়েছেন যারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্য।

দুদকের কর্ম সম্পাদনের স্বাধীনতাও কিছুটা নিম্ন বলেছে টিআইবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির ভাষ্য, কিছু ক্ষেত্রে দুদক সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের চাপের সম্মুখিন থাকে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য দুদক নিজস্ব ধারণাপ্রসূত স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে বিরত থাকে। দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সাড়া প্রদানের হার কম হওয়ার একটি কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুদকের অভিযোগ বাছাই ব্যবস্থা। দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৮ সালে ৪৭ হাজার ৫৪৯টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ২০৯টি অভিযোগ (৬.৭৫%) অনুসন্ধানের জন্য গৃহিত হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে এই হার ৬৬ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা। তবে দুদকের মতে, অধিকাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যেই পড়ে না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২ হাজার ৩৬৯টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দুদক ২০১৬-২০১৮ সালে ৪ হাজার ৩৮টি অনুসন্ধানের মধ্য থেকে ৮৪৮টি (২১%) মামলা করেছ, যা আন্তর্জাতিক মানদন্ড ৭৫ শতাংশের বেশি। অপরদিকে, গত কয়েক বছরে দুদকের দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার হার গড়ে ৪০ থেকে বেড়ে ৫৭.৭% হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে (৭৫ শতাংশের বেশি) এখনও কম।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি জানায়, গত তিন বছরে (২০১৬-১৮) নিস্পত্তি হওয়া ৮৫৭টি মামলার মধ্যে ৪৯৫টি মামলায় সাজার রায় হয়েছে। এ ধরণের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুদকের নিরপেক্ষতার বিষয়ে মানুষের ধারণা খুব ইতিবাচক নয়। দুদকের কর্মকর্তাদের ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকদের মতে, দুদককে দুর্নীতি দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও একই ধরণের দুনীতির মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি নিরপেক্ষ নয়। টিআইবি বলছে, জনগণের ধারণায় দুদক ক্ষুদ্র দুর্নীতির ওপর বেশি মনোযোগী। বড় দুর্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দুদকের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কাগজে-কলমে দুদকের স্বাধীন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, দুদক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেয়ার যে বিষয় রয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক। আদালতে এই ধারাটি বাতিল হবে বলে আশা করছে টিআইবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Imam Hussain ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:০৬ এএম says : 0
A wrong logo is enough to destroyed a company/country/earth.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন