শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাংলাদেশের অস্বস্তি কাটানো জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

টেস্টে টানা হারের পর কি দারুণ প্রত্যাবর্তণ। এমন একটি জয়ের দিকেই তো তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। এইতো মনে হচ্ছে সেদিনই অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতে এসেছে। ছোটদের পারফরমেন্সের তোপে আড়ালে পরে গিয়েছিল বড়রা। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিনটি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় স্বস্তির সুবাতাস এনে দিয়েছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে।

গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিনে চা পানের বিরতির আগে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের এটি ১৪তম জয়, যার সাতটি আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে! ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ যাবতকালে সবচেয়ে বড় জয়ও এটি।

জিম্বাবুয়ে ছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে সাকিবের নেতৃত্বে মিরপুরে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে জেতে ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানে। অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া জয়টি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্ট বাড়াতে ভ‚মিকা রাখলেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে কোনও ভ‚মিকা রাখবে না। কেননা টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৯ দলকে নিয়ে শুরু হয়েছে এই চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে নেই জিম্বাবুয়ে। তার ওপর বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে একেবারে বাজেভাবে। আফ্রিকার দেশটিকে ছাড়াও টেস্ট ক্রিকেটে নবাগত আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডও নেই আইসিসির চ্যাম্পিয়নশিপে।

ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা তিনটি টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ছিলেন বিরক্ত। সংবাদ মাধ্যমে কয়েক দফা জানিয়েছিলেন সেই কথা, ‘এটা যে বাংলাদেশ আমার বিশ্বাসই হয় না।’ বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে যে গুমোট ভাবটা ছিল, সেটা হয়তো অনেকটাই কেটে যাবে এই জয়ে!

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো উজ্জীবিত বাংলাদেশকেই পাওয়া যাবে। কিন্তু খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে গেলে হতো বিস্তর সমালোচনা। তবে মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হক সেসব হতে দেননি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। প্রভাব বিস্তার করে চার সেশন আগেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে জিতেছে ১৪তম টেস্ট।

যদিও জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণে আহামরি কিছু ছিল না। তবে টেস্টে সেঞ্চুরি কিংবা ডাবল সেঞ্চুরি করা মোটেও সহজ কিছু নয়। সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। সোমবার শেষ বিকেলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ টেস্ট রান সংগ্রাহক বনে গেছেন তিনি। ইডেনে টানা দুই ইনিংসে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়া মুমিনুলও পেয়েছেন সেঞ্চুরি।

বোলিংয়ে গত কয়েক টেস্ট ধরেই ধারাবাহিক ছিলেন আবু জায়েদ রাহী ও ইবাদত হোসেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনসুইং-আউটসুইংয়ে রাহী নিজেকে আরেকবার প্রমাণ করেছেন।

নবীন অফস্পিনার নাঈম হাসানকে নিয়ে নির্বাচকদের প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা তিনি ষোলো আনা মেটাতে পেরেছেন এই টেস্টে। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও গড়েছেন। ৯ উইকেট নিতে ১৫২ রান খরচ করেছেন এই অফস্পিনার। নাঈমের এমন পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে ভিন্ন কন্ডিশনেও আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর ও কলকাতায় দুটো টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের পর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই ফল অব্যাহত ছিল। তাই আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ম্যাচ হেরে এমনিতেই কোণঠাসা বাংলাদেশ। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া এই জয়টি তামিম-মুমিনুল-মুশফিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে নিশ্চিতভাবেই।

তবে শঙ্কার জায়গাও থাকছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতে অতি আত্মবিশ্বাসী হলে পাকিস্তানের মাটিতে চড়া মূল্য দিতে হবে পারে বাংলাদেশের। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে কি দুর্দান্ত ফর্মেই না ছিলেন তামিম-মুমিনুল-লিটনরা। বিসিএলে প্রত্যেকের ব্যাটেই এসছিল রান। তামিমতো ছাপিয়ে গিয়েছিলেন সবাইকে। অথচ মূল মঞ্চে গিয়ে কি হল? এবার অন্তত করাচি টেস্টে প্রত্যাশা থাকবে ভিন্ন। তার খানিকটা রসদ এই ম্যাচ থেকে নিতে কি দোষ?

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, একমাত্র টেস্ট ৪র্থ দিন
টস : জিম্বাবুয়ে (ব্যাটিং), মিরপুর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫।
বাংলাদেশ ১ম ১৫৪ ওভারে ৫৬০/৬ ডিক্লে.।
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস (আগের দিন ৫ ওভারে ৯/১) কাসুজা ৮*, টেলর ১*; নাঈম ২/৪
রান বল ৪ ৬
কাসুজা ক মিঠুন ব তাইজুল ১০ ৩৪ ০ ০
টেলর ক তাইজুল ব নাঈম ১৭ ৪৭ ১ ১
অরভিন রানআউট ৪৩ ৪৯ ৬ ১
সিকান্দার ক মুশফিক ব তাইজুল ৩৭ ৭১ ৩ ১
মারুমা ক তামিম ব নাঈম ৪১ ৫২ ৫ ০
চাকাভা ক তামিম ব তাইজুল ১৮ ৪০ ২ ০
এনলভু এলবি ব নাঈম ৪ ২ ১ ০
তিশুমা এলবি ব তাইজুল ৩ ২৬ ০ ০
নিয়াউচি অপরাজিত ৭ ২১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৯) ৯
মোট (অলআউট, ৫৭.৩ ওভারে) ১৮৯
উইকেট পতন : ১-০ (মাসভাউরি), ২-০ (তিরিপানো), ৩-১৫ (কাসুজা), ৪-৪৪ (টেলর), ৫-১০৪ (অরভিন), ৬-১২১ (সিকান্দার), ৭-১৬৫ (চাকাভা), ৮-১৭০ (এনলভু), ৯-১৮১ (মারুমা), ১০-১৮৯ (তিশুমা)।
বোলিং : নাঈম ২৪-৬-৮২-৫, তাইজুল ২৪.৩-৭-৭৮-৪, রাহী ৪-৩-৪-০, এবাদত ৫-১-১৬-০।
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন