বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মানবাধিকার ও ইসলাম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

তিন

সুতরাং রাষ্ট্র তথা নাগরিকদের জন্য বহুবিধ রাষ্ট্রীয় আইনই অধিকার সৃষ্টি করে এবং তা ভোগ করার নিশ্চয়তা দেয়। “রহমান, মুহাম্মদ হাবীবুর, অধিকার, কর্তব্য ও উন্নয়ন’ মানবাধিকার ও উন্নয়ন সমীক্ষা, ঢাকা: ১৯৯১, পৃ. ৬৩-৬৪”। বস্তুত মানবাধিকার ব্যক্তির মর্যাদা সম্মানের সাথে জড়িত একটি বিষয় যা মানব সমাজের নৈতিক মানদন্ডকে প্রকাশ করে। অতএব এটি কেবল ব্যক্তির কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নয়, গোটা বিশ্ব সমাজের মান-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজন। সুতরাং একে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব কেবল ব্যক্তির নয়, বিশ্বসমাজেরও। আর প্রতিটি রাষ্ট্র বিশ্বসমাজের এক একটি অঙ্গ হওয়ার কারণে এই মহান দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপরও বর্তায়।
মানবাধিকার আইন ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : মানবাধিকারের ধারণা যেহেতু মানুষ অতি প্রাচীনকাল থেকেই পোষণ করে আসছে, তাই এটি সংরক্ষণের বিষয়েও বিশ্বসমাজ তাদের চিন্তায় ক্রটি করেনি। অদ্যাবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রাচীনতম লিপিবদ্ধ আইন হল ব্যাবিলনের রাজা হাবুরাবী কর্তৃক প্রণীত “ব্যাবিলনীয় কোড” বা ‘হামুরাবী কোড’ “প্রণয়নকাল-আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২১৩০-২০৮৮ সাল)। লিখিত আইনের সূচনা হিসাবে এই কোড বিশেষ মূল্য বহন করে। এতে মানবাধিকার সংরক্ষণের কথা পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রাচীন গ্রীস ও রোমের সরকার পরিচালনা, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নাগরিকদের অংশগ্রহণের অধিকার প্রয়োগের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। “বেরা মন্ডল ও মো. শাহজাহান মন্ডল, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫”। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে মানুষের অধিকার সংরক্ষণে ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, মহানবী সা. এর সুন্নাহ ও হাদীস এবং “মদীনা সনদ” ও “বিদায় হজ্জ্বে” প্রদত্ত মহানবী সা. এর ভাষণ মানবাধিকার তথা মানুষের অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করেছে।
কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ যখন ইসলাম এবং মহানবী সা. এর শিক্ষা ও আদর্শ হতে বিচ্যুত হয় এবং মানুষ যখন শাসক শ্রেণী হতে তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে বঞ্চিত হয়, তখন তারা অধিকার আদায়ে সোচ্চার ও প্রতিবাদী হয়েছে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে শাসক শ্রেণীকে বাধ্য করেছে তাদের প্রাপ্য অধিকার করতে। ফলে শাসক শ্রেণী ও জনগণের মাঝে সম্পাদিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও দলীল, যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে মানুষের অধিকার। ১১৮৮ খ্রিস্টাব্দে আইবেরিয়ান-ব-দ্বীপে সামন্ত প্রভু ও অভিজাত ব্যক্তিদের এক সভায় রাজা আলফসনের নিকট থেকে অভিজাত শ্রেণী ব্যক্তি স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা, জীবনের মর্যাদা, বাসস্থান ও সম্পদের অলংঘনীয়তা প্রভৃতি কিছু অধিকার আদায় করে নেয়। “প্রাগুক্ত”। হাঙ্গেরীর রাজা দ্বিতীয় এন্ড্রু ১২২২ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বর্ণ আদেশ’ দ্বারা ঘোষণা দেন, তিনি আমীর ওমারা ও অভিজাত শ্রেণীর জন্য বেশ কিছু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করবেন। তিনি অধিকারসমূহের এক দীর্ঘ তালিকা প্রণয়ন করেন এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতিও ঘোষণা করেন। “প্রাগুক্ত”।
ইংল্যান্ডে মানবাধিকার বিকাশের ক্ষেত্রে ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা জন কর্তৃক সম্পাদিত Magna Carta কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রাথমিকভাবে এই চুক্তি রাজা ও ব্যারনদের মাঝে সম্পাদিত হলেও ৬৩টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত এই দলীলকে পরবর্তীতে Charter of English Liberties এবং বর্তমানে মানবাধিকার ও মুক্ত সরকারের ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। “Bari, Dr. M. Ershadul, International Concern for the Promotion and Protention of Human Rights, Dhaka : Dhak University Studies Part F, VOL II (i) P- 21”” সপ্তদশ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা কর্তৃক নাগরিকদের সনাতন অধিকার খর্ব করার প্রতিবাদে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয় তারই ফলশ্রুতিতে প্রণীত হয় ১৬২৮ সালে The Petition of Rights ও ১৬৮৯ The Bill of Rights নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল। মানবাধিকার সম্বলিত এ দু’টি দলীল একদিকে যেমন রাজার একচ্ছত্র আধিপত্য ও ক্ষমতাকে খর্ব করেছে, অপরদিকে পার্লামেন্ট ও আদালতের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে এই প্রতিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। Lord Chathan উক্ত Magna Carta, The Pitition of Rights The Bill of Rights এই তিনটি দলীলকে The Bible of the English Constitution নামে অভিহিত করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Ali ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৮:১১ পিএম says : 0
Islamic Human Rights is right to raising the humanity.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন