শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বইমেলা কি ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের নতুন ঠিকানা?

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভাষা আন্দোলনের চেতনার স্মারক হিসেবে বাংলা একাডেমি চত্বর ও সহরাওয়ার্দি উদ্যানে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আয়োজন করা হয় একুশের বইমেলার। বাংলা একাডেমিকে জাতির মননের প্রতীক বলে দাবি করা হয়। সেখানে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পৃক্ত গ্রন্থমালা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি ধুঁয়া তুলে একুশে গ্রন্থমেলায় ইসলামি প্রকাশনা কার্যত নিষিদ্ধ করা হলেও ইসলামবিদ্বেষী বইপত্রের প্রকাশ ও প্রচারণা চলছে অবাধে। এমনকি হিন্দুত্ববাদী বিতর্কিত সংগঠন ইসকনকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়া হলেও ইসলামি প্রকাশনাগুলোর জন্য বইমেলার দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা ইসকন বা অন্য কোনো ধর্মীয় সংগঠনের স্টল বরাদ্দের বিরোধী নই। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার বিশ্বাস ও মতামতের মধ্য দিয়েই জাতির মননশীলতার বিকাশ ঘটে। সেখানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও মৌলিক শিক্ষাকে অবশ্যই অগ্রগণ্য হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে যে কোনো ধর্মের বিদ্বেষ বা যে কোনো বিশ্বাসের জন্য অবমাননাকর গ্রন্থ বা প্রকাশনা বইমেলায় স্থান পাওয়ার কোনো সঙ্গত কারণ নেই। ইসলামবিদ্বেষ বা নবীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য কোনো আইনেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি আদালত এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলা একাডেমির বইমেলাকে ঘিরে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীলতার নামে ইসলামবিদ্বেষী প্রকাশনা ও তৎপরতা কোনো নতুন বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অবস্থান যেন সব সময়ই তথাকথিত ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের পক্ষে। ইসকনকে মেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়ার বিপক্ষে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদের পাশাপাশি দেশের আলেম সমাজের প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে আমলে না নিলেও মেলায় ইসলামবিদ্বেষ ও মৌলিক ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতি অবমাননাকর প্রকাশনা বন্ধে মেলা কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ বা তদারকি নেই। এহেন বাস্তবতায় সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষী প্রকাশনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে কখনো কখনো মেলা কর্তৃপক্ষের টনক নড়তে দেখা যায়। এবারের বইমেলায়ও এ ধরনের বেশ কিছু প্রকাশনার খবর পাওয়া গেছে। এসবের প্রচার-প্রকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সর্বোচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন কতিপয় আইনজীবী। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বইমেলায় প্রকাশিত দু’টি গ্রন্থে বোরকা এবং পরকাল নিয়ে কুটুক্তি, ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তাদের প্রকাশনা, মূদ্রণ, প্রচার ও বিপণন নিষিদ্ধ করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ বই প্রকাশনা, মূদ্রণ ও বিপণন বন্ধের পাশাপাশি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ডিসি ও এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

যে প্রতিষ্ঠানকে জাতির মননশীলতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের অনুকূল প্রকাশনার সুযোগ খোঁড়া অজুহাতে রুদ্ধ করা হলেও ইসলামবিদ্বেষী বইপত্র অবাধে প্রকাশনা, মূদ্রণ ও বিপণন চলছে। বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, মূল্যবোধ ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা দায়িত্বশীল হলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। ইসকন বা অন্য ধর্মের বইপত্রের জন্য বিশেষ প্রকাশনা ও স্টল থাকতে পারলেও ইসলামি প্রকাশনার সুযোগ সঙ্কুচিত এবং ইসলামবিদ্বেষী বইয়ের প্রকাশ ও প্রচারের সুযোগ অবারিত রাখার মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টরা নিজেদের বিশেষ অবস্থান ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই ইসলামবিদ্বেষী বইয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে সংক্ষুব্ধরা সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছেন এবং প্রতিকার পেয়েছেন। কোরান-হাদিস ও ইসলামের শিক্ষা বিশ্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের বিকাশ ঘটায়। পক্ষান্তরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে বিকৃত রুচি ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের ইসলাম ও ধর্মবিদ্বেষী বইপত্র ও প্রকাশনা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা ও সংক্ষুব্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির উস্কানি দেয়। কয়েক বছর আগে শাহবাগী ব্লগাররা নবী-রাসুলের প্রতি অবমাননাকর ব্লগের মাধ্যমে সমাজে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। সে সময় দুঃখজনকভাবে কয়েকজন ব্লগারের অপমৃত্যর ঘটনা ঘটে এবং আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মামলা করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। সে সব ধর্মবিদ্বেষী ব্লগাররা এখন বাংলা একোডেমির বইমেলাকে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ধরনের প্রকাশনা ও কর্ম তৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের সব ধর্মবিশ্বাসী মানুষ সোচ্চার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এবারের বইমেলা আগামীকাল শেষ হচ্ছে। একুশে বইমেলাকে কেউ যেন ধর্মবিদ্বেষের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং বইমেলা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও জাতির মননশীলতার সত্যিকারের মেলা হয়ে উঠতে পারে, তা নিশ্চিত করা বাংলা একাডেমি ও সরকারের দায়িত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৫:৩২ পিএম says : 0
In our country -- kafir's are minority--- but they are the dominating force due to our government... Our government think they will not meet Allah [SWT].. Nay they will die and they will stand before Allah [SWT].. They cannot escape the wrath of Allah [SWT] Your abode will be hellfire...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন