বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে স্থবিরতা ভর্তুকি মাত্র ১০০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

কৃষিতে এখন তীব্র হচ্ছে শ্রমিক সংকট তেমনি কমছে কৃষি জমি। বাড়তি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরনের পাশাপাশি শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য গুরুত্ব বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির। তবে সেটি করতে হলে প্রয়োজন কৃষি যন্ত্রগুলোকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। সেজন্য প্রয়োজন ভর্তুকি সহায়তা। সেই সহায়তা দিতে অর্থমন্ত্রনালয়ের কাছে ৪০০ কোটি টাকা চেয়েছিলো কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু অনুমোদন হয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। গত নয় মাস ধরে বন্ধ থাকা ভর্তুকি কার্যক্রম এ পরিমান অর্থ নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪০০ কোটি টাকা চেয়ে একটি চিঠি অর্থসচিব বরাবর পাঠান কৃষিসচিব। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। নীতিমালা না থাকায় পরে কৃষি মন্ত্রণালয় খসড়া নীতিমালা সংযুক্ত করে অর্থ ও মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠান কৃষি সচিব। সেটি মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করলে পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকার কিছু অর্থ ছাড় করে।


এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি ব্যবস্থাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চায় সরকার। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আলাদা ৪০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের আগ থেকেই মাঠ পর্যায়ে চাহিদা নিরুপন শুরু করেছি। চূড়ান্ত হিসেব স্বল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে যাবো। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি অনুমতি পেয়েছি। তবে বরাদ্দ যা পেয়েছি তার চেয়ে হয়তো আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। মাঠ পর্যায়ে যে চাহিদা তৈরি হয়েছে সেগুলো মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কেননা বরাদ্দকৃত অর্থ আমরা খরচ করতে পারলে আরো বেশি বরাদ্দ পাবো। ফলে ভর্তূকি সহায়তা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।

এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্নভাবে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ব্যবস্থাটি সচল রাখার। বিভিন্ন মেয়াদে প্রকল্পের মাধ্যমে যে সহায়তা দেওয়া হতো সেটি গত জুনে শেষ হয়েছে। কার্যত তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিকীকরনে ভর্তূকি কার্যক্রম। এরপর গত কয়েক মাস ধরেই সরকারের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা কৃষির যান্ত্রিকীকরণের বিশাল সহায়তা দেওয়া হবে বলে ঘোষনা দিচ্ছেন। এতে কৃষক আবারো আগ্রহী হচ্ছেন যন্ত্র কেনায়। তারা অপেক্ষা করছেন কবে থেকে এ সহায়তা দেওয়া হবে। ভর্তুকি সহায়তার আশায় কৃষি যন্ত্র কেনা শুরু করছেন না। মাঠ পর্যায়ে ব্যবপক চাহিদা রয়েছে কৃষি যন্ত্রের। কিন্তু আমরা বিক্রি বাড়াতে পারছি না। জানা গেছে, ট্রাক্টর ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার এবং পাওয়ার টিলারের ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৭ লাখ। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কর্তনের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরন করা সম্ভব হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যবহার হয় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে ১ লাখের বেশি। কিন্তু দেশে ব্যবহার হচ্ছে ১ হাজারের কম। আর ধান বীজ বোনার জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের প্রয়োজন ২ লাখ। অথচ দেশে এ যন্ত্রটির ব্যবহার হচ্ছে এক হাজারেরও কম। শুধু ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা এক লাখ। অথচ দেশে এ যন্ত্র রয়েছে ৫ হাজার। আর ধান বোনার জন্য পিটিও সিডার আছে মাত্র আড়াই হাজার। দেশে এই যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ। একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে। বপন ও কর্তন যন্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের জন্য ক্রয় কষ্টসাধ্য। সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিলে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটি গত নয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় বিক্রিতে এক ধরনের ভাটা পড়েছে। কিছু মাঝারি ও হালকা কৃষি যন্ত্রের বিক্রি হলেও বড় কৃষি যন্ত্র বিক্রি প্রায় শূণ্যের কোঠায় পৌছেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমিরেটাস ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, আধুনিক চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ট্রাক্টর ও কম্বাইন্ড হারভেস্টরের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা না থাকা ও অর্থসহায়তার অভাবে বেশি দামের এসব যন্ত্রপাতি কিনতে পারছেন না কৃষক। সেখানে সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কার্যকর করার পাশাপাশি অর্থায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা এখনও ব্যাংকগুলো সরাসরি কৃষককে ঋণ না দিয়ে কোম্পানিগুলোকে ঋণ প্রদান করছে। সেই ঋণ দিয়েই কৃষক মেশিন ক্রয় করছে। এছাড়া যন্ত্র আমদানি শুল্ক ব্যবস্থা কৃষকের সামর্থের মধ্যে আনার জন্য ভর্তূকি সহায়তা বাড়াতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন