মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সন্তান অঙ্গার, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন বাবা-মা

রাজধানীর দিলু রোডে অগ্নিকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের ৪৫/এ নম্বর বাসায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। তখন ৫তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা শহিদুল করমানি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস তাদের ৫ বছরের ছেলে সন্তান কে এম রুশদীকে নিয়ে ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। বাসার তৃতীয় তলা থেকে রুশদীকে কোলে নেন তার বাবা শহিদুল। কিন্তু নিচ তলায় নামার সময় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হন তারা। এ সয়ম রুশদী কোল থেকে পড়ে যান। পরে আরে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, স্বামী-স্ত্রী দুইজনই আশঙ্কজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল সকালে ঢামেকে শহিদুলকে দেখতে আসা তার সহপাঠী ফাতেমা জেরিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি জানান, অগ্নিকান্ডে দগ্ধ শহিদুল কিরমানি সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) পাস করেন। কর্মজীবনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি। তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনিও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তবে ভয়াবহ আগুনে শহিদুল কিরমানি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের জীবন সংকটাপন্ন। শহিদুলের শরীরের ৪৩ শতাংশ ও জান্নাতুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। শহিদুলের শ্বাসনালি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে জানান চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় রুশদী ছাড়াও আরো দুইজন মারা গেছেন। তারা হলেন-আব্দুল কাদের (৪৫), আফরিন জান্নাত (১৭)। জানা গেছে, গতকাল ভোর ৪টা ৩০ মিনিটের সময় দিলু রোডের ৪৫/এ নম্বর বাসার নিচতলায় আগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘন্টা কাজ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় আব্দুল কাদের, আফরিন জান্নাত ও এ কে এম রুশদী মারা যান। এক পর্যায়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্বজনরা গিয়ে তাদের পরিচয় সনাক্ত করেন।

নিহত আব্দুল কাদের ল²ীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ’র ছেলে। তিনি ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ‘ক্ল্যাসিক ফ্যাশন’ বায়িং হাউসের অফিস সহকারী ছিলেন। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা সবাই তাদের কর্মস্থলেই থাকতেন।

আর মৃত এ. কে এম রুশদী নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের সন্তান। তার মা নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। গতকাল তার লাশ সনাক্ত করেন দাদা এ কে এম শহিদুল্লাহ। রুশদীর মা-বাবা উভয়ই দগ্ধ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা চিকিৎসাধীন।

এছাড়াও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আফরিন জান্নাত রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২) পূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে চাকরি করেন। তার মা লাল বানু (৩৫) গৃহিণী। তারা ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকতেন।

আফরিনের চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে আফরিন সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নামে। আর ওপর থেকে বাবা ও ভাই গ্রিল বেয়ে নামেন। তারা দুজনেই সামান্য আহত হন। আফরিনের মা নামতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি।

এছাড়াও আগুনের ধোয়ায় অসুস্থ সুমাইয়া আক্তার (৩০), মাহাদি (৯), নয় মাসের শিশু মাহমুদুল হাসান ও মনির হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা চারজনই ওই ভবনের পঞ্চম তলার বাসিন্দা এবং একই পরিবারের সদস্য।

হাতিরঝিল থানার এসআই খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন বলেন, মৃত তিনজনের মধ্যে শিশুসহ দুই জন পুরোপুরি পুড়ে গেছেন। যা দেখে সনাক্ত করার মতো না। তাই পোড়া দুই জনেরই ডিএনএ জন্য নমুনা সংগ্রহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর আব্দুল কাদের পোড়েননি। তিনি ধোঁয়ার কারণে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, একাধিক দাবিদার না থাকায় পুড়ে যাওয়া লাশের দাবিদার যারা, তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মো. বাবুল মিয়া জানান, দিলু রোডে একটি পাঁচ তলা ভবনে আগুনে লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সেখান থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও আহত অবস্থায় আরো ৬ জনকে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।

এদিকে, গতকাল দুপুরে সরেজমিন দিলু রোডের ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন সেখানে ভিড় করছেন। এছাড়া ওই ভবনের নিচ তলায় আগুনে পুড়ে গেছে ৫টি প্রাইভেটকার। এছাড়া আরো দুইটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে গেছে।

ওই ভবনের দারোয়ান লুৎফুর রহমান জানান, বাসার নিচে গ্যারেজের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। সেখানে তুলা ও কয়েকটি কাপড় রাখা ছিল। তবে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা নেভানোর জন্য পানি দিলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুন গ্যারেজে থাকা ৫টি গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন।

তিনি আরো জানান, আগুন লাগার পর ধোয়া ওপনের দিকে উঠে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকা লোকজনকে ছাদে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরে অনেকেই ছাদে গিয়ে অন্য ভবনে গিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Suman Dash ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩২ এএম says : 0
এগুলি এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। জন্মহার না কমালে এই দেশে সেবা বলে কিছু থাকবে না। ছোট্ট ঢাকা শহরে এত মানুষ হলে এরকম অনাকাঙিক্ষত মৃত্যু হতেই থাকবে।
Total Reply(0)
Sadat Bin Karim Sopan ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৩ এএম says : 0
আজকে রাতের টক শো হবে, কাল আমরা ভুলে যাবো। পরশু আবার আগুন লাগবে।
Total Reply(0)
Tahmina Ahmed ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহ সবাই কে হেফাজত করুন
Total Reply(0)
Nh Ahmed Gulshan ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহ রহমত দিক।আল্লাহ রক্ষা করো।
Total Reply(0)
ÇhĀrmıng Țőmů ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
May Allah bless her. Any progress about her condition?????
Total Reply(0)
Afrin Ahmed ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
omg! I can't believe this! I am highly shocked! Hide or report this
Total Reply(0)
Shaminur Rahaman Saam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে,দেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে গভীর রাতে অথবা ভোরের দিকে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় যে এসব পরিকল্পিত?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন