বিদ্যুতের দাম বাড়লো আরেক দফা। খুচরা পর্যায়ে এবার গড়ে ইউনিটপ্রতি গড়ে বাড়ানো হয়েছে ৩৬ পয়সা; যা শতকার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৭৭ পয়সার পরিবর্তে এখন থেকে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করে পরিশোধ করতে হবে ভোক্তাদের। এছাড়া পাইকারী ও সঞ্চালন পর্যায়েও বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। আগামী মার্চ থেকে নতুন এই বিদ্যুতের দাম কার্যকর হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ এ ঘোষণা দেন কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ায় সরকার, যা ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
এদিকে, ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে ‘অযৌক্তিক’ ব্যয় না কমিয়ে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ভোক্তা যে মানের বিদ্যুৎ পায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য পুনরায় নির্ধারণ হোক, সেটা আবাসিক বা শিল্পক্ষেত্রে একইভাবেৃ এমনটি চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতায় গতানুগতিক ঐকিক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে। কোনো পর্যায়ের ভোক্তার জন্যই মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা এ আদেশে প্রতিফলিত হয়নি।
অন্যদিকে, দুই বছর পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল নানা ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমদানি করা কয়লার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ওপর ১০ পয়সা করে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে, অবচয় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বেড়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকে তুলনামূলক কমমূল্যে অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের কাছে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে এই কারণগুলোর ভূমিকা ছিল। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বিইআরসির গণশুনানিতে ক্যাবও দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল। এ প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, গণশুনানিতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলাম।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় যেভাবে অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, সেসব প্রতিবিধানের কথা আমরা বলেছিলাম। ৯ হাজার কোটি টাকার উপরে অযৌক্তিক ব্যয় যদি সমন্বয় করা হত, তাহলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির দরকার হত না।
গত বছরের জুনের শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। এর কিছুদিনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ছাড়া অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাস বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায়। এসব প্রস্তাবের ওপর গত ২৮ নভেম্বর শুরু হয় গণশুনানি। নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাতে হয় বিইআরসিকে। ৯০ দিন পূর্ণ হওয়া এক সপ্তাহ আগেই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন