ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর প্রিন্সিপাল আলহাজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান বলেন, ইতিহাস-গবেষকরা বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলোচনা-গবেষণা ও পর্যালোচনা করে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, রাজনৈতিক বিজয়ের দু’এক শতাব্দী প‚র্বে থেকেই আরব বণিক, ধর্ম প্রচারক, সূফিসাধক, পীর-দরবেশ, ওলী-আউলিয়াদের মাধ্যমেই এ দেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে। ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়ের বহু পূর্বেই সূফি আরব বণিকদের দ্বারা এ দেশের আনাচে-কানাচে ইসলামের প্রচার হয়েছে। বলতে গেলে তারা যেন পূর্বে এসেই এ দেশে মুসলিম শাসনের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। বঙ্গ বিজয়ের ৩ শত বছর পূর্বে শায়খ আব্বাস বিন হামজা নিশাপুরী (র:) বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করে ৯০০ সালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
সুতরাং এ থেকে বুঝা যায়, ইসলাম এ দেশের মাটির অতি গভীরে প্রোথিত। আর এর বীজ বপন করেছেন আউলিয়ায়ে কেরামগণ। তরীকান্ডতাসাউফের বিরোধীরা এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। মানব সত্ত্বায় বিরাজমান কুরিপুগুলো চিনে এ গুলো বর্জন করার উপায় শিখতে হলে হক্কানী পীর মাশায়েখদের দরবারে আমাদেরকে যেতে হবে। সুরিপুগুলো চিনে এ গুলো অর্জন করার পদ্ধতির মহান শিক্ষা রয়েছে তাদের জীবন দর্শনে, ওয়াজে-নছিহতে ও কৃতকর্মে। তিনি প্রত্যেক মুসলমান অভিভাবককে তাদের সন্তানদের পবিত্র কোরআন-হাদীস শিক্ষাদান ও নামাজ পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। মাওলানা মাহমুদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার রাতে ইলমে তাসাউফ ও তরিকতের লালন ক্ষেত্র কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে বয়ানকালে এসব কথা বলেন।
দু’দিনব্যাপী মাহফিলকে ঘিরে গোটা এলাকায় এক উৎসবম‚খর পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশ-বিদেশের দূরদূরান্ত থেকে আগত লক্ষাধিক আশেকান, ভক্ত, মুরিদান ও মুসল্লিদের মিলনমেলায় এক বিরল ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। থেমে থেমে আল্লাহু আকবার, কালিমায়ে তয়্যিবার জিকির এবং ইয়া রাসুলাল্লাহ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সোনাকান্দা দরবারসহ আশ-পাশের এলাকা।
গতকাল বাদ জুম্মা মিলাদ ও দেয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের মাহফিল আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন দরবার শরীফের পীর আলহাজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান। বাদ আছর সোনাকান্দা দারুল হুদা কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামদ, নাতে রাসূল ও ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মাগরিব নামাজ শেষে দরবারের পীর প্রিন্সিপাল আলহাজ মাওলানা মাহমুদুর রহমান ভক্ত, আশেকান, মুরিদানদের চার ত্বরিকার নিয়ম অনুযায়ী গুরুত্বপ‚র্ণ জিকিরের তালিম দেন। এরপর সারারাত ব্যাপী চলছে ধর্মীয় আলোচনা ও আলেম ওলামায়ে কেরামগণের নুরানী তাকরির।
মাওলানা মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। একটি মহল দীর্ঘদিন থেকে পীর-মাশায়েখ ও আলেম-ওলামাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিম‚লক প্রচারণা চালাচ্ছে। ওলামায়ে কেরামগণ নবী-রাস‚ল (সা:) গণের ওয়ারিশ। তাদের বিরুদ্ধে এ রকম গর্হিত কাজ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার ও নবী করীম (সা:) এর সুপারিশ লাভের কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এদেশের যুবক ও তরুণদের বিভিন্নভাবে বিপদগামী করা হচ্ছে। তাদেরকে ইসলামী ম‚ল্যবোধ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে গড়ে তুলতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের যুব-তরুণ সমাজকে সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। যুব-তরুণদের মাঝে ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতির জাগরণ সৃষ্টি করতে আলেম ওলামাদের এগিয়ে আসতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন