শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কৃষিতে নীরব বিপ্লব

কৃষকরা ঘুরাচ্ছেন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৪ এএম

নিত্যনতুন কৌশলে ফসল আবাদে সাফল্য

কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। নীরব বিপ্লব ঘটছে গ্রামে গ্রামে। মাঠের আবাদী জমিই কৃষকদের বড় সম্পদ। বেঁচে থাকার অবলম্বন। কাদামাটি মাখা মানুষের চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। কৃষকরা প্রাণশক্তিতে উদ্বেল। স্বাচ্ছন্দ্য, অনায়াস উদ্দীপনা, উদ্যম ও শক্তি নিয়ে দিনরাত মাঠে পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছেন কৃষকরা। এতে কৃষি বিপ্লবে আসছে গতিশীলতা। অনেকাংশেই চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুতের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে কৃষি। মাঠের উৎপাদনে অনেক গ্রাম এখন পরিণত হয়েছে শহরে। 

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, বহুমুখী সমস্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করে ক্রমাগতভাবে স্বচ্ছলতার সোপানে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। এর মূল কারণ কৃষিকে অতিমাত্রায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস ইউইংএর পরিচালক কৃষিবিদ চÐিদাস কুÐু দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সারাদেশে কৃষি কর্মকাÐে এসেছে বিরাট গতিশীলতা। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ড. আখতারুজ্জামান জানান, দেশের বিভিন্নস্থানে এখন এক জমিতে চার ফসলী শস্য আবাদের চেষ্টা চলছে। জোর দেওয়া হয়েছে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে। সেজন্য সাথী ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে সারাদেশেই জোর দেওয়া হয়েছে।
কৃষি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে শুধুমাত্র চাল উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। ধান, গম. ভুট্রাসহ মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৫ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষে বিশ্বের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
সূত্রমতে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষিই হচ্ছে প্রধান সহায়ক। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস প্রসঙ্গক্রমে বলেন, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। বিভিন্ন এলাকার কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, বাজার কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এবং মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি উন্নয়নে বর্তমানে চারিদিকে সুস্থ্য পরিবেশ বিরাজ করছে। কৃষক শুধু নয়, কৃষি সংশিষ্টরাও স^াবলম্বী হচ্ছেন। একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরি এখন ৫ থেকে ৬শ’ টাকা। কৃষির উন্নয়ন দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, কৃষি সংশ্লিষ্ট স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের চেহারায় মাঝেমধ্যে স্বস্তি ও শান্তি, আবার মাঝেমধ্যেই দুর্দশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়। অর্থাৎ কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই স্থায়িত্ব আসছে না। সেজন্য দরকার শুধু কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং কৃষির সমস্যাদির সমাধান। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮শ’ ৪। এর বাইরেও রয়েছে অনেক যারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে কৃষি স¤প্রসারণ কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও মূল্যায়ন, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রনয়ণ, উপকরণের চাহিদা পূরণ ও মনিটরিং আরো জোরদার করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের। দেশের ৬৪টি জেলা, ৪শ’ ৮৫টি উপজেলা ও ১২ হাজার ৬শ’ ৪০টি বøক রয়েছে। সবখানে সমানতালে জোরদার হলে আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে কৃষি উৎপাদন। সূত্র জানায়, সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িতরা আবাদ ও উৎপাদনে যেন মার না খায় সেদিকে নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র আরো জানায়, পানিবদ্ধতার নিরসন, সারফেস ওয়াটার ডেভলপমেন্ট, ক্ষুদ্র সেচ, বেড়ি বাঁধ নির্মাণ, রেগুলেটর, বক্স কালভার্ট, পাইপ কালভার্ট ও ¯ুইস গেট নির্মাণ এবং পাম্পিং মেশিন স্থাপনে কৃষকরা উপকৃত হতে শুরু করেছে। বহুমুখী প্রকল্পে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২২৫ হেক্টর অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আসছে। বোরো, রোপা, আউশ, আমন, পাট, রবিশস্য ও সবজিসহ সব ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। মানুষ এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখছে না। বাড়ীর উঠানে, আনাচে কানাচে সবজি উৎপাদন হচ্ছে মাঠের বাইরেও। কৃষকের পাশাপাশি কৃষকের গৃহিনীরাও এখন পুরাদমে কৃষি উৎপাদনে সময় ব্যয় করছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কৃষিখাতে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপে দেশে কৃষিজাত আয় ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কৃষিতে আসছে অভাবনীয় সাফল্য। তবে কৃষকের স্বার্থে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ ও উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়াসহ সমস্যাদির সমাধান হলে কৃষিতে শতভাগ সাফল্য আনা সম্ভব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন