নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়ার অপকর্মের দায় নিতে চাচ্ছে না জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। উপরন্তু পাপিয়াকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাহিরে আসতে শুরু করেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া পাপিয়াকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করার দায় চাপিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরুর ঘাড়ে। পক্ষান্তরে কর্নেল হিরু বলেছেন পাপিয়াকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করার ব্যাপারে তিনি বিরোধিতা করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন না পাওয়া সত্বেও যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা বেগম এবং সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল তাকে কেন্দ্র থেকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল। এ ব্যাপারে তার কোনো দায় নেই।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস এস এম কাইয়ুম বলেন, সাধারণ সম্পাদক হয়ে সভাপতির ঘাড়ে দায় চাপানো একটি হীন মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগের ভিতরে উপদল সৃষ্টি করে কর্নেল হিরুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। তিনি পত্রিকার সাথে বলেছেন, কর্নেল হিরু পাপিয়াকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। আবার আরটিভিকে বলেছেন নাজমা বেগম এবং অপু উকিলই পাপিয়াকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন।
আসলে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনকে রাজনীতিতে এনেছেন তারাই। পাপিয়া স্বামী সুমন ছিল সাবেক মেয়র মরহুম লোকমানের বডিগার্ড। লোকমানের বডিগার্ড থাকা অবস্থায় সুমন মানিক কমিশনারকে যাত্রা প্যান্ডেলে ঢুকে খুন করে। মেয়র লোকমান নিহত হবার পর সুমন তার ভাই মেয়র কামরুলের বডিগার্ড ছিল। তাদের মাধ্যমে এ সুমন সন্ত্রাসের হাতে খড়ি নিয়েছে। মেয়র কামরুলের বাসার পাশেই পাপিয়া এবং সুমন বসবাস করত। বর্তমানে বিচারাধীন মানিক কমিশনার হত্যামামলার এক নাম্বার আসামি হচ্ছে সুমন দুই নম্বর আসামি হচ্ছেন মেয়র কামরুল। সুমন এখনও কামরুলের কেইস পার্টনার।
আওয়ামী লীগের অপর একজন নেতা জানিয়েছেন মেয়র কামরুলের বডিগার্ড থাকা অবস্থায় সুমন ও পাপিয়া শহরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে। সুমন ও পাপিয়া একটি মোটরসাইকেল করে শহরে ঘুরে বেড়াতো আর রিকশাচালক সাধারণ মানুষকে মারধর করতো। পাপিয়ার ব্যাগে থাকতো একটা অবৈধ পিস্তল। রাস্তায় জ্যামে পড়লে পাপিয়া তার অবৈধ পিস্তল রিকশাচালক ও অটোচালকদের দিকে তাক করে ভয় দেখাত। এসব ঘটনা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব ২০১২ সালে পাপিয়াকে লেডি মাস্তান নাম দিয়ে একটি রিপোর্টও প্রকাশ করেছিল।
কিছুদিন পরই পাপিয়া তার নিজের অবৈধ পিস্তলের গুলিতে আহত হয়। এই ঘটনার পর পাপিয়া ও সুমন অপপ্রচার চালায় যে মেয়র কামরুলের বডিগার্ড হিসেবে তার শত্রæরা তাকে বাসায় হামলা চালিয়ে গুলিবিদ্ধ করে। এ খবরও দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণে পুলিশ পাপিয়া ও সুমনের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই ঘটনার পরই পাপিয়া ও সুমন নরসিংদী থেকে ঢাকায় চলে যায়।
যোগ দেয় অপরাধের সাম্রাজ্যে। যুব মহিলা লীগ নেত্রী অপু উকিলের সাথে গড়ে তুলে পারিবারিক সম্পর্ক। রাতারাতি বনে যায় কোটি কোটি টাকা ও বাড়ি গাড়ির মালিক। আর এই সুবাদেই জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি পেয়ে যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া গংরা এখন নিজেদের দায় অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কাইয়ুম আরো জানান, কর্নেল হিরু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পরই আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি অনেক সঙ্কট মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন।
তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও অস্ত্রবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলেই আব্দুল মতিন ভূঁইয়া গংরা তার বিরুদ্ধে লেগেছেন।
অপরাধের অভিযোগে তিনি আপন ভাতিজাকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন, জেল খাটিয়েছেন। তিনি নরসিংদী থেকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি অস্ত্রবাজি মাদক ব্যবসা চিরতরে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আব্দুল মতিন ভূঁইয়া গংদের নেতৃত্বে একটি উপদল তার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছেন। কিন্তু তার সমর্থনে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন