দেশের সম্ভাবনাময় দানাদার খাদ্য ফসল গমের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাচ্ছে। বিগত কয়েকটি বছর ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমণে বিভিন্ন জেলায় গম আবাদে সরকারি পর্যায় থেকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি কৃষকের আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায় আবাদ ও উৎপাদন কমছে। অথচ সেচ ও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হবার পাশাপাশি ফসলের ভাল দামের কারণে কৃষকদের গম আবাদে আগ্রহ থাকার কথা।
চলতি মৌসুমেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলায় কিছু জমিতে ব্লাস্ট সংক্রমণের কথা জানিয়ে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। বছর চারেক আগে ভোলাসহ দেশের ৫টি জেলায় ব্লাস্টের সংক্রমণ দিয়ে এ ফসলের বিপর্যয় শুরু হয়।
গত কয়েকটি বছরের মত এবারো দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় গম আবাদে লক্ষ অর্জিত হয়নি। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ৩ হাজার ১শ’ হেক্টর লক্ষমাত্রার বিপরীতে গমের আবাদ হয়েছে আড়াই হাজার হেক্টরের মত। অপরদিকে ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায় ৫৫ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৫০ হাজার ৭শ হেক্টরের মত। ফলে এ অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে তা অর্জনের সম্ভবনা নেই বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা ।
তবে ব্লাস্ট আক্রান্ত জেলাগুলোতে পরবর্তী ৩ বছর গম আবাদ নিরুৎসাহিত করার পাশপাশি ডিএই’র মাঠ কর্মীদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করাসহ সম্ভাবনাময় এ ফসল আবাদে কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তর হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষক পর্যায়ে গম আবাদকে উৎসাহিত করার লক্ষে সরকার থেকে বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণও সরবারহ করা হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকটি বছর দেশে শীত মৌসুম সংক্ষিপ্ত হওয়াসহ তাপমাত্রা কাঙ্খিত পর্যায়ে না নামার পাশাপাশি ভাল বীজ ও সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে হেক্টর প্রতি গমের ফলনও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয় নি।
জানা গেছে, আমাদের গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে “শতাব্দী” নামের একটি জাতের গম কম শীত সহশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এ জাতটি দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন সহায়ক বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে বরিশাল ও ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে “শতাব্দী” জাতের গম কৃষকদের মধ্যে কিছুটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কারন এ গম অপেক্ষাকৃত কম শীতেও ভাল ফলন দিয়ে থাকে।
ডিএই’র হিসেব অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে গমের আবাদ সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অথচ নিবিড় আবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আবাদ নূন্যতম ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করে অন্তত ২০ লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
তবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলে গমের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৩ টনের বেশি নয়। অথচ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট শতাব্দীসহ তাদের উদ্ভাবিত সব জাতের গমের উৎপাদনই হেক্টর প্রতি নুন্যপক্ষে ৩.৫-৪.৫ টন পর্যন্ত বলে জানিয়েছে।
ডিএই’র হিসেব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ বছরে ৩.৯০ লাখ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্য মাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আবাদ হয়েছিল ৩.২৯ লাখ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্য ১২.৮৭ লাখ টনের স্থলে ১১.৪৮ লাখ টন অর্জিত হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৫১ হাজার হেক্টরে গম আবাদ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ। ফলে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টন গম উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে তা অর্জন কতটুকু সম্ভব হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। গম আবাদের সাথে এর উৎপাদন উন্নয়ন নিয়েও হতাশা রয়েছে কৃষিবিদদের মধ্যে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ১৮-১৯ অর্থবছরেই দেশে হেক্টর প্রতি গমের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৩.৫১ টনের মত। চলতি মৌসুমে তা ৩.৫৫ টন লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বিগত ১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৩.১৩ টন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন