বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাপিয়ার তথ্য জানাতে ওয়েস্টিনকে দুদকের চিঠি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃৃত নেত্রী শামিমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউ সম্পর্কে তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। গতকাল সোমবার বিকেলে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
অন্যদিকে ক্যাসিনো কারবারের মাফিয়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালিদ মাহমুদ, সেলিম প্রধান ও জিকে শামীমের সাথে পাপিয়ার নানা অপকর্মের ভাগাভাগির তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের দিয়েই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে টেন্ডার ভাগাতেন তিনি। তাছাড়া ব্যবহার করতেন সুন্দরী রমনিদের। রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, গনপুর্ত অধিদপ্তর, সচিবালয়ে টেন্ডারবাজি চালাতেন। ক্যাসিনো কারবারীদের পাশাপাশি এসব কাজে আরো সহয়তা করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এ সব তথ্য দিচ্ছে।
দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, চিঠিতে ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়া এ পর্যন্ত কতদিন অবস্থান করেছেন এবং সেখানে কত টাকা বিল দিয়েছেন সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পাপিয়ার কাছে আসা ব্যক্তি ও হোটেলে অবস্থানকারীদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে ওই সময়ের ভিডিও রেকর্ডও চাওয়া হতে পারে। এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব বড় ভূমিকা রাখে। তাই হোটেলে তার ব্যয়ের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে গত রোববার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। পাপিয়ার সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।
পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ও করেছেন পুলিশ-র‌্যাবের এমন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী ভয়ংকর ধূর্ত। রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সাথে তার গভীর সখ্যতা আছে। আরও ওইসব ব্যক্তিরা তার ডেরার নিয়মিত যাত্রী ছিলেন। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, গুলশানের অভিজাত হোটেল ছাড়াও পাপিয়ার আরও কয়েকটি ডেরা রয়েছে। তারমধ্যে ফার্মগেইটের ইন্দিরা রোডে তার দুটি ডেরা রয়েছে। ওই ডেরাতেও ভিআইপিরা আসা-যাওয়া করতেন।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়ার অঢেল টাকার উৎস খোঁজা হচ্ছে। যদিও ইতোমধ্যে তার অবৈধভাবে টাকা আয়ের তথ্য তারা জেনেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, নারীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার পর গোপনে ভিডিও ধারণ, পরবর্তীতে জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন অভিযোগ আমরা যাচাই করে দেখছি। তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মূলত নরসিংদী ভিত্তিক তার প্রভাব ছিল। তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সে ফ্যান্টাসি খুব পছন্দ করতো। তাই তার অবৈধভাবে আয় করা টাকা দিয়েই হোটেল ওয়েস্টিনে বিলাসী জীবন-যাপন শুরু করেছিলো।
সূত্র জানায়, এদিকে রিমান্ডে পাপিয়া চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। শূণ্য থেকে কিভাবে আজকের অবস্থানে এসেছে তার বিস্তারিত জানিয়েছে। পাপিয়া রিমান্ডে জানিয়েছে যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও সাবেক এক এমপির মদতে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীদেরকে ম্যানেইজড করে গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নিয়েছে। ওই নেত্রীদের মাধ্যমেই সরকারদলীয় বড় বড় নেতাদের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার, বিদেশি জাল মুদ্রা সংরক্ষণ ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে র‌্যাব-১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পাপিয়া, তার স্বামী ও দুই সহযোগীকে। পরে তাদের নিয়ে ফার্মগেটের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও পিস্তল, গুলি ও মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি এবং শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি মামলা করে র‌্যাব। তিন মামলায় পাপিয়াসহ চারজন ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। মামলাটি এখন ডিবিতে রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন